একরামুলের ‘ইসকুল ডট কম’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে একরামুল হায়দায়ের একদিন মনে হল প্রত্যেক সেমিস্টারে পরীক্ষার ফরম হাতে পূরণ করা বেশ ঝক্কিঝামেলার কাজ। কাগজ-কলমের বদলে কাজটি যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা যেত, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কোনো ঝামেলাই হতো না। সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে নেমে পড়েন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র একরামুল। তার সুপারভাইজারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রস্তাব গ্রহণ করলে তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দিন রাত চেষ্টা চালাতে থাকেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে ফেলেন যা তার বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার শুরু করে। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় একরামুল হায়দারের। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই এদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সহজ ও সুবিধাজনক করতে আত্মনিয়োগ করার কথা ভাবেন তিনি।
তার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান ‘প্রযুক্তি নেক্সট’ উদ্ভাবন করে ‘ইসকুল ডট কম’। এই অ্যাপসের লক্ষ্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজ থেকে মুক্তি দেওয়া। প্রশাসনিক কাজগুলো আরো সহজ করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের নিয়ে আসা এক প্ল্যাটফরমে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তরুণ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের জন্য দেওয়া সম্মাননা কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশ-২০১৬ এর শীর্ষ দশের একজন নির্বাচিত হন তিনি। এখন তিনি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ইতিমধ্যে তার তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন ‘ইসকুল ডট কম’ উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুলে এবং কুমিল্লার মর্ডান স্কুলে ব্যবহূত হচ্ছে। এতে উপকৃত হচ্ছে প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী। একরামুল হায়দার বলেন, আমাদের স্কুলগুলোতে একটি বড় সমস্যা হল: শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব থাকে। আবার শিক্ষকদের ফরম পূরণ, নিবন্ধন করানো প্রভৃতি দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। যা দূর করা সম্ভব প্রযুক্তির মাধ্যমে। তিনি বলেন, ছাত্রদের ক্লাসে উপস্থিতি, তাদের নম্বর প্রাপ্তি, ক্লাসে পারফরমেন্স, ছাত্রদের সকল তথ্য- এই অ্যাপসে এগুলো থাকবে। এছাড়া অভিভাবকদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ, অভিভাবকদের সঙ্গে প্রশাসনের সহজ ও সাবলীল সম্পর্কও তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে ডেটা এনালাইসিস ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে বের করে আনা যাবে। এর মাধ্যমে শিক্ষদের কাজ ৮০ শতাংশ কমবে আর প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে দূরত্ব কমবে ৬০ শতাংশ।
একরামুল জানান, স্নাতক করার পর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীদের সফটওয়্যার নিয়ে তিনি কাজ করেন। এই কাজ করতে করতেই তার মনে হল আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেদের মতো করে কিছু করা যায় কিনা। সেই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু করা।
দুই ভাই, এক বোনের সংসারে বড় একরামুল। বাবা সরকারি চাকরি করতেন এখন অবসরে আছেন। আর মা গৃহিণী। বর্তমানে একরামুল স্বপ্ন দেখছেন, দেশের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হবে বিশ্বমানের। আর এতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে চান তিনি।