অগ্রগামী আমিন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শহরে সূর্য উঠেছে নতুন দিনের বার্তা নিয়ে। আমাদের তরুণেরা সেই নতুন দিনের বাহক। স্বপ্নের সাথে যাঁদের নিরন্তর ছুটে চলা, বুকে দেশপ্রেম আর মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে, তারাই নতুন দিনের স্মারক হয়ে বদলে দিচ্ছে আমাদের এই দেশকে। মো. আল-আমিন তেমনই এক তরুণ। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ-কৃষ্ণপুর সড়কের ধার ঘেঁষা কৃষ্ণপুরের মিয়াজী বাড়িতে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান তরুণ অল্প বয়সেই ছাপ রেখেছেন তার মেধা আর প্রতিভার। বসন্তের এক বিকালে কথা হলো নতুন দিনের এই সূর্যসৈনিকের সাথে। বিনম্র স্বরে তিনি শোনালেন তার জীবনগাঁথা। গ্রামের ছেলে আমিনের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল রাগদৈল আই এম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর দাউদকান্দির মুন্সী ফজলুর রহমান সরকারি কলেজে পড়ার পর সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই শিল্প সাহিত্য ও সেবামূলক কাজে আগ্রহী আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মূলত সুযোগ পেলেন নিজের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের। কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। ‘অ্যাডভেঞ্চার’ তার কাছে খুবই প্রিয় একটি শব্দ। ইতোমধ্যে তিনি কয়েকটি অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছেন। জয় করেছেন তাজিংডং ও কেওক্রাডং পর্বত। এইতো কিছুদিন আগে ১৮তম আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে ভারতে ছুটে গিয়েছেন!
স্কাউটিং যেন তার রক্তের সাথে মিশে আছে। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট। বাংলাদেশ স্কাউটস জাতীয় সদর দফতরের বিভিন্ন কমিটিতে থেকে তিনি স্কাউটিং সম্প্রসারণে কাজ করে চলছেন। বাংলাদেশ স্কাউটসের মুখপত্র ‘অগ্রদূত’ এ কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১৪টি স্কাউট ক্যাম্প ও প্রায় ১০টি স্কাউট প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবা প্রদান করেছেন বিভিন্ন প্রোগ্রামে। শুধু স্কাউটিংয়ে নয়, বিতর্ক চর্চায় একজন অগ্রদূত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল সংস্কৃত বিভাগে তার্কিক সংঘের যাত্রা, তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সভাপতি। সহ-সভাপতি (প্রশাসন) হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন কবি জসীম উদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবে। একই সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যও ছিলেন। কয়েকটি বিতর্ক উৎসব আয়োজনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
দেশ আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জড়িয়েছেন সাংবাদিকতার মহান পেশায়। তিনি ক্যাম্পাসভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ডিউ টাইমজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন সাহস ২৪ ডট কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। লেখালেখি করছেন জাতীয় দৈনিকে। বিতর্ক সংগঠন, স্কাউট গ্রুপ, চান্দিনা উপজেলার স্থানীয় প্রকাশনা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার-এর সাথে যুক্ত রয়েছেন সম্পাদনা সহকারী হিসেবে। পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর অনুপ্রেরণা। তাই যুক্ত রয়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিশ্বসাহিত্য পাঠচক্রে। এছাড়াও বিভিন্ন যুব কার্যাবলীর সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এতসব কাজে জড়িত থাকার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা, পুরস্কার ও বৃত্তি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্যা ডিউক অব এডিনবার্গ’স আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক, বাঁধন রক্তদাতা সম্মাননা, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মেধা স্বীকৃতি ও সম্মাননা। বইপাঠ ও রচনা লিখে কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে। বিতর্ক করে অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার। পাঠক্রম ও সহ পাঠক্রম কার্যাবলিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় পেয়েছেন গৌরবজনক কয়েকটি বৃত্তি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ড. ফয়েজুন্নেছা বেগম ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি, মোহাম্মদ শাহ্জাহান এন্ড সায়েরা শাহ্জাহান ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি, কবি জসীম উদ্দীন হল প্রভোস্ট উপ বৃত্তি, কুমিল্লা ফাউন্ডেশন বৃত্তি, রোভার স্কাউট বৃত্তি, বিএনসিসি বৃত্তি প্রভৃতি। এতো এতো কাজ করেছেন তিনি! জানতে চাইলাম তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। প্রশ্ন শুনে স্বপ্নালু হয়ে উঠলো তার চোখ, কিছুক্ষণের জন্য আনমনা হয়ে গেলেন তিনি।