নানজীবার নানা রূপ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
সদ্য এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন অথচ তিনি একাধারে সাংবাদিক, পরিচালক, উপস্থাপিকা এবং বিতার্কিক। নানামুখী প্রতিভার অধিকারী নানজীবা খান। এত কম বয়সে যে জীবনকে ইচ্ছামতো রঙে রঙে সাজানো যায়, তা নানজীবা খানকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নানজীবা খানের জীবন একদিন ক্ষুদ্র থেকেই শুরু হয়েছিল। হাতে কলম ধরার আগেই পাঁচ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে রঙ তুলি নিয়ে গিয়েছিল কিশলয় কচিকাঁচার মেলায় ছবি আঁকা ও আবৃত্তি শিখতে।
২০০৭ সালে জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতা জয়নুল কামরুল ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন পেন্টিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহন এবং পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ছবি আঁকা, বিতর্ক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জুটেছে বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। জুটেছে উপস্থিত ইংরেজি বক্তৃতায় ভারত্বেশ্বরী হোমসের প্রথম পুরস্কার। দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যামরিয়ান কলেজ ডিবেট ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে।
এক সময় বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, ঈদ, পূজা ও বিভিন্ন দিবসে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যেত। এখন যে যায় না তা নয়, এখন নিজেকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরছি বলে জানালেন নানজীবা খান।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জীবনের প্রথম ক্যামেরার সামনে আসা তার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কাগজ কেটে ছবি আকি’ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে মিডিয়ার জীবন শুরু করেন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মায়ের মুখে একটি অনলাইন পোর্টালে শিশু সাংবাদিকতার একটি সার্কুলারের কথা শোনেন। শখ করেই ফর্ম পূরণ করেন। লিখিত পরীক্ষা হল। সারা বাংলাদেশের সাড়ে তিন হাজার আগ্রহী শিশুদের মধ্য থেকে নিখুঁত যাচাই-বাছাইয়ের পরে তারা নির্বাচন করলেন ১৫ জনকে। সেখান থেকে ৫ জন নির্বাচন করে আসাইনমেন্টে পাঠালেন। আর সেই ৫ জনের একজন শিশু সাংবাদিককে নির্বাচন করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এর সাক্ষাত্কার নেওয়ার জন্য। নানাজীবা খান ছিলেন সেই কর্মোদ্যমীজন। শুধু সাকিব আল হাসান নন এ পর্যন্ত ৭২ জন বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও আছে নানজীবার যথেষ্ট দক্ষতা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জীবনের প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘কেয়ারলেস’ পরিচালনা করেন। জীবনের প্রথম প্রামাণ্য চিত্র ‘সাদা কালো’ পরিচালনার জন্য ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। আর এটি তৈরি করতে যা টাকা খরচ হয়েছে তার সবই ছিল তার টিফিনের জমানো টাকা। এরপরে ‘গ্রো আপ’, ‘দি আনস্টিচ পেইন’সহ আরও কিছু প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছেন। উপস্থাপনা করেছেন বিটিভিতে প্রচারিত আমরা রঙিন প্রজাপতি ও আমাদের কথা নামে একটি অনষ্ঠানে। এছাড়াও স্টেইজ প্রোগ্রামে প্রায়শই দেখা যায়।
তিনি আরও জানান, ‘ক্যামেরা আমার জীবনের একটা অংশই বলা যেতে পারে। ক্যামেরার সামনে উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করছি। ক্যামেরার পেছনেই কাজ করতে বেশি পছন্দ করি। এছাড়াও গল্প লেখা, বিতর্ক করা আমার শখ। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের ক্যাডেট সার্জেন্ট হিসেবে ক্যাম্পিং, রাইফেল দিয়ে গুলি করা, শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ শিখার অভিজ্ঞতাও আমাকে কাজের আগ্রহও জাগায়। বিএনসিসিতে পর পর তিনবার উপস্থিত বক্তৃতায় ১ম হয়েছি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর থেকে ৩ ধাপে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার পরে সারা দেশের হাজার হাজার ক্যাডেটদের মধ্য থেকে বিএনসিসির সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যয়হুল সফর ভারতে যাওয়ার সুযোগ পাই। ভারতে গিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং রক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয়। তাছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে রাশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপসহ সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশ সহ মোট ১১টি দেশের ক্যাডেটদের সঙ্গে।