ছয় কিশোরের গণিতের লড়াই
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ওরা ছয়জন। একেকজন একেক কলেজে পড়ছে। প্রথম দেখায় আপনি ভাবতে পারেন, ‘বাচ্চা ছেলে’। এই বাচ্চা ছেলেগুলোই কিন্তু আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্রাজিলে যাচ্ছে। ঢাকার লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ গণিত দলের ক্যাম্পে গিয়ে দেখা হলো তাদের সঙ্গে। আমরা যখন তাদের ডেরায় পা রেখেছি, ছয়জন তখন গণিতে ডুবে আছে। চলছে নানা গাণিতিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা। এক নিয়ম অনুসরণ করে ফল পাওয়া যায়নি, তাতে কী? আবারও শুরু হলো প্রচেষ্টা, যেন দুর্ভেদ্য কোনো দুর্গ জয়ের নীলনকশা আঁকছে ছয় যোদ্ধা!
তা যোদ্ধাদের সঙ্গে এবার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। এ বছর বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা হলো আসিফ-ই-ইলাহী (এমসি কলেজ, সিলেট), মো. সাব্বির রহমান, তামজিদ মোর্শেদ রুবাব (নটর ডেম কলেজ, ঢাকা), আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী (ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম), এ এম নাঈমুল ইসলাম (অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, বরিশাল) ও রাহুল সাহা (ঢাকা কলেজ)। ছয়জনের দলে চারজনকেই অবশ্য ‘অভিজ্ঞ’ বলা যায়। আসিফ এ নিয়ে চতুর্থবার, সাব্বির ও নাঈমুল তৃতীয়বার এবং জাওয়াদ দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। তবে তামজিদ ও রাহুলের এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে এবারই প্রথম।
গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব ও জাতীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে নির্বাচন-প্রক্রিয়ার পর বাংলাদেশ গণিত দল তৈরি করা হয়েছে। ছয় প্রতিযোগীর দলনেতা ও কোচ হিসেবে সঙ্গে আছেন ড. মাহবুব মজুমদার, উপদলনেতা ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল বাংলাদেশ গণিত দল ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। আজই তাদের পৌঁছানোর কথা।
গতবার আসিফ জিতেছিল রৌপ্য আর সাব্বির ফিরেছিল ব্রোঞ্জপদক জয় করে। এ বছরই শেষবারের মতো দুজন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। তা এবার লক্ষ্য কী? দুজনের একই উত্তর, ‘গতবারের চেয়ে ভালো করতে চাই।’ এই জবাবে ভরসা রাখাই যায়। কেননা গত বছরগুলোতে দুজনের ফলাফলই একটু একটু করে উন্নত হয়েছে। রাহুল আর তামজিদ এবারই প্রথম পা রাখছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মঞ্চে। রাহুল বলল তার শেষ সময়ের প্রস্তুতির কথা, ‘অলিম্পিয়াডে যে ছয়টি সমস্যা থাকে, তার সব কটিই সঠিকভাবে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এখন নম্বর থিওরি আর কম্বিনেটরিক্সের ওপর সমস্যার সমাধানে শেষ সময়টা ব্যয় করছি আমি।’ আর তামজিদ? তার কী প্রস্তুতি? ‘গণিত ক্যাম্পের মেন্টরদের কাছ থেকে আগের বছরের সমস্যার সমাধানগুলোকে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করছি। প্রথমবার অংশ নিচ্ছি, তাই রোমাঞ্চও কাজ করছে।’
গতবার প্রথম অংশ নিয়ে জাওয়াদ ব্রোঞ্জপদক পেয়েছিল। এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে তার লক্ষ্য রৌপ্য পদক। নাঈমুলও নিজের আগের দুবারের স্কোর ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশার কথাই জানাল।
গণিত ক্যাম্পে কি শুধু গণিতের চর্চাই চলে? বেশ কিছুটা সময় তাদের সঙ্গে কাটিয়ে দেখা গেল, গণিত ছাড়াও পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, এমনকি সিনেমার সুপারহিরোদের নিয়েও গল্প হয়। ক্যাম্পে পরীক্ষা আর ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খুনসুটি চলে নিজেদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আসা অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের চাবির ছড়া উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ গণিত দল। চাবির রিং আর ছড়ার নকশাও তারা নিজেরাই করেছে। এ নিয়েও তাদের মধ্যে বেশ রোমাঞ্চ কাজ করছে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথমআলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ বছর গণিত উৎসবে সারা দেশ থেকে ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। পঞ্চদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৭ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় গণিত ক্যাম্প, এপিএমও ও আইএমও নির্বাচনীয় ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে ছয়জনের গণিত দল। ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। শুভ কামনা রইল ছয় কিশোরের জন্য।