ক্যাম্পাসের ‘ভালো ছাত্রী’ নুজহাত
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে দেখতে চান কে? এমন কঠিন প্রশ্নে সবার আগে হাত তুলবেন সম্ভবত নুজহাত জাহিন। এই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই তো দিনরাত খেটে চলেছেন তিনি। নুজহাত পড়ছেন ফার্মেসি বিষয়ে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। ক্যাম্পাসে ‘ভালো ছাত্রী’ হিসেবে যেমন তাঁর সুনাম আছে, তেমনি সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনেও। নুজহাত তাঁর পথচলার গল্পই বললেন স্বপ্ন নিয়ের কাছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০১৩ সালে ভর্তি হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় নুজহাত পড়ালেখায় সব সময়ই মেধার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। উচ্চমাধ্যমিকে ঢাকা বিভাগে ২৪তম স্থান অধিকার করেন ২০১২ সালে। জীববিজ্ঞানের প্রতি ছেলেবেলা থেকেই গভীর আগ্রহ ছিল। তাই পড়াশোনা শুরু করেন ফার্মেসি বিভাগে। পড়ালেখার বিষয়টা কঠিন বটে, তবে পড়ালেখা সামলে এর পাশাপাশি সৃজনশীল কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া নাকি তাঁর কাছে খুব একটা কঠিন মনে হয় না। নুজহাতের ভাষায়, ‘ম্যানেজ করে নিই।’ স্নাতক শুরু করার পরপরই তাই যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ক্লাব ও ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে। সংগঠনের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডে। পড়ালেখার মতো স্বেচ্ছাসেবমূলক কাজেও যে নুজহাত বেশ ‘সিরিয়াস’, বোঝা যায় তাঁর কথায়। একটি সংস্থার উদ্যোগে একবার শীতার্তদের সহায়তায় ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের কাজে অংশ নিয়েছিলেন। দিন শেষে পেয়েছেন ‘ভলান্টিয়ার অব দ্য ডে’ বা দিনের সেরা স্বেচ্ছাসেবকের স্বীকৃতি।
নুজহাত জাহিন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন ২০১৫ সালে। তাঁর ভাষায়, ‘২০১৫-এর আগের আমি আর পরের আমি, রীতিমতো দুইটা ভিন্ন মানুষ।’ কী করে পরিবর্তনটা এল? নুজহাতের বয়ানেই শোনা যাক। ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আমাদের পড়ালেখার অংশ হিসেবে তিন মাস সাভারের স্থায়ী ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। এই প্রোগ্রামটাকে বলা হয় “রেসিডেনসিয়াল সেমিস্টার”। আমরা বলি টার্ক (ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার)। ২০১৫ সালে টার্কে গিয়েছিলাম আমি। সেখানে বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার দায়িত্ব পড়ল আমার কাঁধে। তখনই প্রথম বুঝলাম, উপস্থাপনার কাজটাও আমি বেশ উপভোগ করি।’ সেই থেকে শুরু। এরপর ক্যাম্পাসে ক্লাবগুলোর নিজস্ব অনুষ্ঠান ছাড়াও গত দুই বছর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন তিনি। নবাগতদের কাছে তাই ‘নুজহাত আপু’র মুখটা পরিচিত। ছোটদের কাছে তাঁর পরিচিতি আছে আরও একটা কারণে। ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের আয়োজনে প্রথম সেমিস্টারের অনুজদের ইংরেজি প্রেজেন্টেশনের ‘মেন্টর’ হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি।
উপস্থাপনার আগ্রহ থেকেই নুজহাত টেলিভিশন সংবাদ পাঠের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ডাকও এসেছিল। কিন্তু নুজহাত ঠিক করলেন, পড়াশোনাতেই মনোনিবেশ করবেন। গবেষণা যাঁর স্বপ্ন, বোকাবাক্সের মোহ তাঁকে টানেনি। জানতে চাই, উপস্থাপনা নিয়ে তাহলে সুদূর কোনো স্বপ্ন নেই? বললেন, ‘নাহ্। ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করেই আমি খুশি।’
ও হ্যাঁ, টার্ক থেকে আরও একটা অর্জন এসেছিল নুজহাতের ঝুলিতে। সেই সেমিস্টারে সেরা জিপিএ অর্জনকারী ছাত্রী হিসেবে পেয়েছেন ভাইস চ্যান্সেলর সার্টিফিকেট পুরস্কার। এই পুরস্কার তাঁকে পড়ালেখায় আরও সাহস জুগিয়েছে। নুজহাত এখন উচ্চশিক্ষার জন্য ভিনদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার কথা ভাবছেন। বলছিলেন, ‘আমাদের দেশে তো গবেষণার তেমন সুযোগ নেই। বাইরে থেকে পড়ালেখা করে আমি আগে গবেষণার শুরুটা করতে চাই। তারপর দেশে ফিরে পুরোদমে কাজ করব। ক্যানসার নিয়ে গবেষণার ইচ্ছে আছে।’ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কণ্ঠের দৃঢ়তা দেখে আমরাও আশায় বুক বাঁধি। কে জানে, হয়তো নুজহাতের হাত ধরেই আসবে কোনো বড় আবিষ্কারের খবর!