তরুণ গবেষক মাহদীর গল্প
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
লেখক হুমায়ূন আহমেদের একটি উক্তি—‘যার মধ্যে অন্ধকার থাকে সে কখনো আলো নিয়ে খেলতে পারে না।’ বাংলাদেশের তরুণ গবেষক নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সহকারী অধ্যাপক মাহদী রহমানের মধ্যে যে সেই অন্ধকারটুকু নেই তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। আর নেই বলেই আলো নিয়ে খেলাটা রীতিমতো অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন এই তরুণ গবেষক। তা-ও যে-সে খেলা নয়, আলোর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সব বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক তাক লাগানো সব গবেষণা করে যাচ্ছেন তিনি। স্বীকৃতিও মিলেছে। নেচার পাবলিশিং গ্রুপের লাইট: সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস এবং এসিএস ন্যানো—এই দুই আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি গবেষণানিবন্ধের অন্যতম লেখক তিনি।
মাহদী রহমানের গবেষণার বিষয় আসলে কী? তিনি বললেন, ‘আলোর একটি সাধারণ গুণ হলো যখন কোনো বস্তুর ওপর আলো ফেলা হয়, তখন সেই বস্তুটি হয় আলোর দিকে বা বিপরীত দিকে যেতে থাকে, যেটা বস্তু এবং মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।’ এই বিষয়টি নিয়েই চিন্তা করতে থাকেন মাহদী। আলো অন্য কোনো দিকে কেন যায় না? কী ধরনের বস্তু হলে অন্যদিকে যেতে পারে?
মাহদী বলে যান—‘কাইরাল বস্তু বলতে আমরা বুঝি এটি আয়না পড়া বিম্ব বা ছায়া থেকে আলাদা হবে। যেমন একটি সমতল আয়নার মধ্যে বস্তুর ছায়াকে সেটার সঙ্গে মেলানো যাবে না। আমি দেখলাম, কোনো কাইরাল বস্তুকে যদি অর্ধেক পানিতে ডোবানো হয় এবং অর্ধেক বাতাসে রাখা হয় এবং খুবই সাধারণ আলোকরশ্মি দিয়ে আলোকিত করা হয়, তবে সেটি নতুন ধরনের বল—পার্শ্বীয় বল অনুভব করে। অর্থাৎ, এটি আলোর দিকে বা বিপরীত দিকে না গিয়ে আলোকরশ্মির সঙ্গে লম্বভাবে বাঁয়ে বা ডানে সরে যেতে থাকে।’ মূলত আলোর এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য নিয়েই এসিএস ন্যানোতে প্রকাশিত হয় তাঁর নিবন্ধ।
মাহদী রহমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রনিকস ও তড়িৎকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে পরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি এনএসইউর তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
বাংলাদেশে গবেষণার সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা হয় মাহদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে জিকা ভাইরাসের ভ্যাক্সিনের প্রথম পেটেন্ট হয়েছে। তারা মহাকাশ গবেষণায়ও অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের এখনই এই ব্যাপারগুলো বোঝা উচিত। মৌলিক ও ব্যবহারিক গবেষণায় বাংলাদেশ থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের তরুণেরা গবেষণায় ভালো। তবে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সুযোগের।’
মাহদী রহমান আলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চান। বাংলাদেশের গবেষণা তুলে ধরতে চান মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে।