ফারজানার ধারাবাহিক সাফল্য
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ফারজানা ফায়সাল। ছোট্ট পরিবারের নিবিড় মমতায় তার বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের অদূরে গাজীপুরে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ফারজানার পড়া-লেখা শুরু গাজীপুরের একটি প্রাইমারি স্কুলে। তারপর কৃতিত্বের সাথে প্রাইমারি শেষ করার পর স্বপ্ন ছিলো ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার, কিন্তু সে সুযোগ না পাওয়ায় ভেঙে পড়েন তিনি। ভর্তি হন জয়দেবপুর গার্লস হাই স্কুলে। ছোটবেলা ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা থেকেই ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখানেও রাখেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর, এরপর ভর্তি হন শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজে। সেখানেও পিতামাতার স্বপ্নকে হারিয়ে যেতে দেননি। ধারাবাহিক মেধার স্বাক্ষর রেখে উচ্চ মাধ্যমিকে অর্জন করেন জিপিএ-৫।
এক সময় স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। বাবা-মায়ের প্রিয় ফারজানা এক সময় প্রিয় হয়ে উঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বন্ধু মহলে। নিয়মিত ক্লাস, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইনমেন্ট আর দর্শনের মৌলিক সব প্রশ্নের খোঁজে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন ফারজানা। ভুলে যান নিজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎ আবার মনে হলো, ভালো কোনো সাবজেক্টের জন্য দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ কেন মিস করবে?
কিন্তু যার মস্তিস্কে দর্শনের চিন্তা ঢুকেছে তার কাছে কি অন্যকিছু ভালো লাগে? আর এই জন্য সকল চিন্তা বাদ দিয়ে একমাত্র চিন্তা হলো এই বিভাগে থেকে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে তিনি একাধারে সাফল্য পেয়ে গিয়েছেন, বারবার প্রমাণ করেছেন যে তিনিই সেরা। প্রথমবর্ষে তিনি পান ৩.৫৭, তার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বর্ষে ৩.৯১ তৃতীয় বর্ষে ৩.৮৬, ফাইনাল ইয়ারে ৩.৯০ এবং মোট সিজিপিএ ৩.৮২ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। টানা চারবার ডিপার্টমেন্টে প্রথম এবং মানবিক অনুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করার পুরস্কার স্বরূপ এ মেধাবী অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক- ২০১৭।
ধীরে ধীরে এমন ধারাবাহিক সাফল্যর গল্প শুনতে চাইলে ফারজানা বলেন ‘নিয়মিত ক্লাস শিক্ষকদের লেকচার অনুসরণ করা আর নিজে নোট করার অভ্যাস গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানকে কোন নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন রেফারেন্স মূলক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ভালো রেজাল্ট করতে সারা দিন পড়ার দরকার হয় না। নিয়মিত তিন-পাঁচ ঘণ্টা বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেই যথেষ্ট’-বলে মনে করেন ফারজানা।
ফারজানা এটাও বলেন দর্শন চর্চার শুরুটা তেমন সুখকর ছিলো না, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিষয় হিসেবে দর্শনের তেমন কোন কর্মক্ষেত্র না থাকার কারণে প্রতিটা পদক্ষেপে ফারজানাকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে দর্শনে যারা পড়েন তারাও কোন অংশে অন্যদের তুলনায় কম নয়। তবে তিনি আশা করেন অতিদ্রুত এদেশে দর্শনের জন্য সকল দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
শুধু দেশে নয় বরং দেশের বাইরেও ভালো করার স্বপ্ন দেখেন ফারজানা। ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত কনফুসিয়াস দর্শনের উপর ‘বেইজিং নর্মাল ইউনিভার্সিটি ফিলোসফি স্যামার স্কুল ২০১৮’-তে ফুল ফ্রী স্কলারশীপে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এছাড়া ফারজানা নেপালের কাঠমুন্ডুতে ‘সার্ক ফিলোসফি, হিস্ট্রি ও কালচার কনফারেন্স- ২০১৭’-তে অংশগ্রহণ করেন। সেখানেও রাখেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। পরিচিত হন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে।
ফারজানা মনে করেন পথচলার এখনো অনেক বাকি। নিন্দুকের নিন্দায় না থেমে তার কথার উত্তর কাজের মধ্যে দিয়ে দেওয়াই হলো সাফল্য। ভবিষ্যতে দর্শন চর্চার মাধ্যমে দেশ সেবায় নিজেকে যোগ্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ফারজানা।