তনিমা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
কক্সবাজারের মেয়ে তনিমা আফরোজ। পড়ছে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে। শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজে। একটি রচনা লেখার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বনানীতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে বসে আমরা যখন তনিমার সঙ্গে কথা বলছি, তার চোখেমুখে খেলা করছিল চাপা রোমাঞ্চ। প্রথমবারের মতো বিদেশভ্রমণ, তা–ও যুক্তরাষ্ট্রে! চেনা প্রশ্নটা দিয়েই আমরা তনিমার সঙ্গে আলাপ শুরু করলাম। ‘যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছ। কেমন লাগছে?’
‘আমি খুব খুশি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আমেরিকায় যাচ্ছি। এটা আমার কাছে বিরাট অর্জন। সম্মানের বিষয়। আশা করছি ভালো কিছুই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে যাবে কক্সবাজারের তনিমা। সেখানে একটা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা হাজির থাকবেন। থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদিতা নিয়ে রচনা লিখেছিল তনিমা। এই বিষয়েই বক্তব্য দেবে সে। নার্ভাস লাগবে না? ‘এত বড় বড় মানুষের সঙ্গে তো আগে কখনো দেখা হয়নি। তাঁদের সামনে বক্তৃতা দেওয়া তো দূরের কথা। নার্ভাস তো লাগবেই। কিন্তু এটা একটা বড় সুযোগ।’ নিজের রচনায় চোখ বুলাতে বুলাতে বলল তনিমা। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য এখন থেকে নিশ্চয়ই জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
তনিমার মা-বাবা দুজনই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। চাকরির সুবাদে থাকতে হয় চট্টগ্রাম শহরে। মা-বাবা কাজে চলে গেলে তনিমা বাসায় একা থাকবে, তাই তিন মাস বয়স থেকে তনিমা থাকে তার নানুর সঙ্গে। কক্সবাজারে। নানুর কোলেপিঠে তার বেড়ে ওঠা। তনিমা বলে, ‘আমার জীবনে মা-বাবার চেয়ে নানা-নানুর প্রভাব বেশি। তাঁরা আমার জন্য অনেক করেছেন। আমি তাঁদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা আমাকে একটি সঠিক রাস্তায় রাখতে পেরেছেন।’
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ হলো? এবার সেই গল্পটা শুনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কয়েকজন কর্মী গিয়েছিলেন তনিমাদের কলেজে। তাঁরাই জানিয়েছেন এই রচনা প্রতিযোগিতার কথা—প্রতিযোগিতা হবে বিশ্বব্যাপী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করবে, রচনার বিষয় জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদিতা এবং ভাষা হতে হবে ইংরেজি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচী সমন্বয়ক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, ‘তরুণ আলো নামে একটা প্রকল্পের আওতায় আমরা তরুণদের মধ্যে জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ বিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। এই প্রকল্পের অধীন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের আমরা রচনা প্রতিযোগিতার কথা জানিয়েছিলাম। জিসিইআরএফ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রতিযোগিতার আয়োজক।’
ছোটবেলা থেকে তনিমার ইংরেজি লিখতে ও পড়তে ভালো লাগে। ভালো লাগাটাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সে লুফে নিয়েছিল। ব্যাস! কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস কি তার মধ্যে ছিল? তনিমার সহজ উত্তর, ‘আমি শুধু ভালো লাগা থেকে লিখেছি। রচনার বিষয়টা আমাদের দেশের জন্য প্রাসঙ্গিক। তাই ভাবলাম লিখে ফেলি।’
বই পড়তে ভালো লাগে তনিমার। প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আনিসুল হক। সময় পেলেই বই পড়ে সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা তার। তনিমার ভাষায়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে একটা প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ পাব। সারা দেশটাকে এক জায়গা থেকে দেখতে পারব।’
সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি হবে না, কে জানে! আপাতত যুক্তরাষ্ট্র দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলেজপড়ুয়া মেয়েটি।