সজীবের ‘ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট’
- ফিচার ডেস্ক
নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল এই মাস কয়েক আগে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। তারপর একসময় তারা ফিরে গেছেন ঘরে। ভুলে গেছেন সড়ক আন্দোলনের কথা। কিন্তু ভোলেননি সজীব চৌধুরী; যিনি নিজেও নিরাপদ সড়কের দাবিতে নেমেছিলেন রাস্তায়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সজীব চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। আমি তাই ‘‘ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট” নামে নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছি।’
এরপর ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্টের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা সজীব চৌধুরী তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে শুরু করেন। তিনি জানান, ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট একটি সড়ক নিরাপদকরণ প্রতিষ্ঠানের নাম। এর মাধ্যমে পথচারীদের ট্রাফিক আইন, রাস্তা পারাপারের নিয়ম-কানুন যেমন শেখানো হবে তেমনি গাড়ির চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষরূপে গড়ে তোলা হবে।
এর পাশাপাশি উই আর সেভ এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও সজীব চৌধুরী সুধীমহলের দৃষ্টি কেড়েছেন। উই আর সেভের প্রতিষ্ঠাতা সজীব চৌধুরী বলেন, তিনি বাংলাদেশে প্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষে কার্যক্রম শুরু করেন।
প্রথমে কোন কাজটি শুরু করতে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘উই আর সেভ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সজীব চৌধুরী বলেন, উই আর সেভ এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ১০টি জনাকীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাছাইয়ের মাধ্যমে একজন করে স্কুল পেট্রোল গার্ড নিয়োগ করা হবে। এই পেট্রোল গার্ডরা স্কুলের সামনের রাস্তায় অবস্থান করে পথচারী ও ছাত্রছাত্রীদের চলাচলকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করবে। সড়ক নিরাপত্তাকে সামনে রেখে ও কর্মসংস্থানের সুযোগের মাধ্যমে এই প্রকল্পকে স্বল্প সময়ের মাঝে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট।
আর চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি? সজীব বলেন, সেটিও চলমান রয়েছে। সজীবের মতে, সারা পৃথিবীতেই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালকের চাহিদা রয়েছে। তাই দেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও চালক সরবরাহ করতে চান তিনি। ‘আর একটি বিষয়’ সজীব বলেন, ‘ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্টে নারী চালকদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু পুরুষরাই গাড়ি চালাবেন এমন কোনো কথা নেই। নারীরাও গাড়ি চালাতে পারেন। পৃথিবীর অনেক দেশে নারীরা গাড়ি চালান। আমাদের দেশেও নারীরা গাড়ি চালাতে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু তাদের জন্য ভালো কোনো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নেই। এই দিক বিবেচনা করে আমরা ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্টে নারীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি।’
আমাদের দেশে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশ চালকই প্রশিক্ষিত নন। এসব চালকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে আগ্রহী ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট—এমনটাই জানালেন সজীব চৌধুরী।
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ওয়েলকিন ভিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট। এখন থেকে প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে সড়ক নিরপত্তায় সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করবে। সজীব বলেন, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ সচেতনতার অভাব। পথচারী যেমন সচেতন নন, তেমনি চালকরাও সচেতন নন। দুই পক্ষেরই সচেতনতা বাড়াতে আমাদের কাজ করতে হবে। বলছিলেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের সঙ্গেও ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্টের একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে বলে জানান সজীব চৌধুরী। মূলত চালক প্রশিক্ষণের সময় কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে প্রতিষ্ঠানটি।
ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্টে সজীবের সঙ্গে আরও রয়েছেন সাইফুল ইসলাম আবির, যিনি প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন; সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে রয়েছেন ফারিহা জান্নাত অনন্যা, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন উম্মে সালমা অরণী এবং প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে রয়ছেন জাহিদ হাসান সোহান।