ঘরে বসে বিশ্বজয়
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
চাকরির বাজারে আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো শব্দগুলো খুবই পরিচিত এখন। কিন্তু এই শব্দ দুটির সঠিক মানে অনেকেরই অজানা। হয়তো জানার তেমন ইচ্ছাও অনুভব করেননি। এই দুটো শব্দ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেলে আপনি আজ রাতেই বসে যাবেন নেটে! বলি, বসার আগে একটু ভাবুন। আপনি তো বাংলাদেশে, আর কাজ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের। এই টাকা তো দেশে আনতে হবে। চলুন, ঘরে বসে ইউরোপ বা আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে কীভাবে চাকরি করবেন এবং সেই চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ বা বেতন কীভাবে দেশে আনবেন, এসব জেনে নিই আজকের রচনা থেকে।
ফ্রিল্যান্সিং ধারণা
শুরুতেই জেনে নিই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে। ফ্রিল্যান্সিং মানেই স্বাধীন পেশা। আপনার যখন ইচ্ছা কাজ করবেন। ইচ্ছা না হলে করবেন না। ধরুন, ওডেস্কে একটা কাজ করার পর আপনি চিন্তা করলেন, এই মাসে আর কাজ করবেন না। এতে আপনাকে কেউ কিছু বলার অধিকার রাখে না। কিন্তু যদি মাস হিসেবে কাজ করেন, তবে সেটা আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে প্রতিদিনই করতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলে আউটসোর্সিং কাজটা ফ্রিল্যান্সিংভাবেও করতে পারেন।
আউটসোর্সিং ধারণা
দেশে বসে দেশের বাইরের কাজ করে টাকা আনাটাই আউটসোর্সিং।তা ছাড়া দেশের অসংখ্য মানুষ বিদেশ থেকে যে অর্থ পাঠান, যা আমরা বৈদেশিক রেমিট্যান্স হিসেবে জানি, সেটাও কিন্তু আউটসোর্সিং। তবে তরুণদের কাছে আউটসোর্সিং হিসেবে প্রথমটাই বেশি আলোচিত। এই আউটসোর্সিং অনলাইননির্ভর হলেই খোলস পাল্টে নেয়। তখন হয়ে যায় অনলাইন আউটসোর্সিং।
কাজের ধরন ও আয়-রোজগার
আপনার বাসায় কম্পিউটার আছে এবং কম্পিউটারের সঙ্গে অনলাইন কানেকশন থাকাটাই মানে বিশ্ব আপনার হাতের মুঠোয়। সেই সঙ্গে আপনি যদি হন একজন মার্কেটিং এক্সপার্ট; বিবিএ-এমবিএ শেষ করে মার্কেটিংয়ের চ্যালেঞ্জিং পেশাটা বেছে নিতে চান, তবে তো কথাই নেই। জানেন তো, বাংলাদেশের মার্কেট খুব ছোট। কোম্পানিগুলো বেতন দেয় মাঝারিমানের। তাই আপনার চোখ থাকে আমেরিকার কোনো বড় কোম্পানিতে। সেটাই আপনার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত। অনলাইনেই তো থাকেন। একটু খোঁজাখুঁজি করে আমেরিকান বড় ডেভেলপার কোম্পানি বের করুন। তাদের কাছে আপনার সিভি পাঠান। কীভাবে আপনি তাদের কোম্পানির মার্কেটিং করবেন, তার ওপর চমৎকার কিছু আইডিয়া দিন।
যেহেতু সশরীরে সেখানে যেতে পারছেন না, তাই আপনার সব আইডিয়া হবে অনলাইনকেন্দ্রিক। আর আমেরিকার মানুষ দিনের শুরুতেই তাদের মেইল চেক করে। মানে তারা অনলাইনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন আপনার সিভি ওরা পাবে, আপনাকে নিয়ে ভাবতে বসবে। হয়তো স্কাইপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ওরা কথাও বলতে পারে। এভাবেই কাজ আসতে পারে আপনার কাছে। আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন, আমাদের দেশের অনেকেই আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে জব করছেন; ওসব কোম্পানির মার্কেটিং করছেন। সেখানে তারা সাপ্তাহিক বেতন নিচ্ছেন ৫০০ থেকে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত। এবার মাসিক বেতনের কথা ভাবুন!
এ ছাড়া অনলাইনে আরও অনেক কাজ করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে এখন বেশি কাজ হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ে। কাজের আছে আরও নানা ধরন। আপনি ভালো করে খুঁজলে ঠিক যে কাজ জানেন, সেটিই পাবেন।
মার্কেট প্লেস
আউটসোর্সিং কাজ পেতে শুরুতে একটু কষ্ট হয়। অনলাইনে খুঁজে কোনো কোম্পানি পাচ্ছেন না বা যাদের পেলেন, তাদের এই মুহূর্তে কোনো এমপল্গয়ি দরকার নেই। আবার অনেক কোম্পানি আছে, যাদের লোক দরকার, কিন্তু লোক খুঁজে পাচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধান করা হয় অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে। এখানে শ্রম কেনাবেচা হয়। এমনই একটি অনলাইন মার্কেট পেল্গস হচ্ছে ওডেস্ক।
এখানে যাদের জব দরকার, তারা জব খোঁজেন এবং যাদের এমপল্গয়ি দরকার হয়, তারা এমপল্গয়ি খোঁজেন। এ জন্য ওডেস্ক একটা ফি কেটে নেয়। নিয়মটা এমন যার এমপল্গয়ি দরকার, সে তার কাজের বিবরণ দিয়ে এখানে লেখা পোস্ট করবে। সঙ্গে এও জানাবে, এই কাজের জন্য সে কত টাকা দিতে রাজি। আপনি যদি সে কাজটা করতে চান, তবে অ্যাপ্লাই করবেন। এতে আপনার ডিমান্ডটাও তুলে ধরতে পারেন। এভাবে দু’জনে একটা চুক্তিতে আসতে পারেন।
আউটসোর্সিং যেখানে
আউটসোর্সিং কাজ খুঁজতে ঢুঁ মারতে পারেন বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে। এখানে কিছু মার্কেট প্লেস তুলে ধরা হলো-
ওডেস্ক [odesk.com] : এই মার্কেট প্লেসের ইউজার ইন্টারফেস ভালো। সহজেই আপনি বিভিন্ন অপশন খুঁজে পাবেন। এখানে বাংলাদেশি অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। আমাদের দেশে ওডেস্কের কান্ট্রি অফিসও আছে। প্রয়োজনে ফোন করে তার সহায়তা নিতে পারেন।
ইল্যান্স [elance.com] : একটু অ্যাডভান্স লেভেল পারসনদের জন্য এ সাইট। পেমেন্টও বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে ওডেস্ক ও ইল্যান্স একই মালিকানাধীন কোম্পানি। দেশে ইল্যান্সেরও অফিস রয়েছে।
গুরু [guru.com] : এখানে প্রফেশনাল টাইপ জব বেশি। আপনি যদি প্রফেশনাল জব খোঁজেন, তাহলেও এখানে দেখতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সার [freelancer.com] : বাংলাদেশের টপ লেভেলের কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার এই মার্কেট প্লেসের মাধ্যমেই আর্নিং লাইফ শুরু করেছিলেন।
ফাইভআরআর [fiverr.com] : এখানের সব কাজের দাম পাঁচ ডলার। কাজের ধরনও আলাদা। ধরুন, আপনি যে ধরনের কাজ জানেন, সেটা লিখে এখানে পোস্ট দেবেন। যার দরকার, সে আপনাকে নক করে সেই কাজটা নির্দিষ্ট পেমেন্ট দিয়ে নেবে। মনে করুন আপনি চমৎকার সিভি বানাতে পারেন। সেটা লিখে এখানে পোস্ট দিলেন। এখন আপনি অনেক রিসার্চ করে সুন্দর একটা সিভি বানিয়ে রাখলেন। যে চাইবে তার নাম এবং তথ্য সম্পাদনা করে তাকে সিভি দিলেন। এভাবে একই সিভি কয়েক হাজারবার সেল করতে পারবেন।
খুঁজলে আপনার কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নির্দিষ্ট আরও কিছু মার্কেট প্লেসও পাবেন। সুতরাং চেষ্টা করে দেখুন।