তরুণদের সম্ভাবনা ই-স্পোর্টস
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সময়টা এখন তথ্য প্রযুক্তির। তথ্য প্রযুক্তিতে অভাবনীয় সাফল্যে পুরো পৃথিবী এখন এক গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের ফলে উঁকি দিচ্ছে নানা ধরণের হাজারো সম্ভাবনা। তেমনই এক সম্ভাবনা ই-স্পোর্টস।
ই-স্পোর্টস কি?
আমরা কম্পিউটারে কমবেশি সবাই গেম খেলি; কিন্তু সেটা নিতান্তই শখের বশে কিংবা সময় কাটানোর জন্য। ঠিক এই গেম খেলাটাই সিরিয়াসভাবে বা প্রতিযোগিতামূলকভাবে খেলাকেই ই-স্পোর্টস বলে। খেলার পাশাপাশি আয়েরও একটা মাধ্যম এই ই-স্পোর্টস। যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করছেন অনেক পেশাদার ‘গেমার’। তাদেরকে খলোয়াড়ের মর্যাদাও দেওয়া হচ্ছে। আর পেশাদার এই খেলা পেয়েছে তার পোশাকি নাম—ই-স্পোর্টস।
ই-স্পোর্টসে সম্ভাবনা
ই-স্পোর্টসে খেলার পাশাপাশি আয়েরও সুযোগ থাকছে বেশ। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রাইজ মানির বিপুল অর্থ ঘরে নিয়ে গিয়েছেন গেমাররা। যেমন, ‘স্টারক্রাফট ২’-এর বিজয়ী প্রায় পাঁচ লাখ ডলার আয় করেছিলেন। এ ছাড়া ‘ডোটা২’-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে চীনের এক প্রতিযোগী ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই টুর্নামেন্টের পুরস্কারমূল্য ছিল এককোটি ডলার। তাহলে বেশ পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যায় ই-স্পোর্টস নিছক খেলা নয় হতে পারে ক্যারিয়ারও।
বাংলাদেশে ই-ষ্পোর্টস
বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। তারই সুফল বলা যায় যে ই-স্পের্টসে তরুণদের আগ্রহী হয়ে ওঠা। ২০০০ সালের পর পর বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় ই-স্পোর্টসের বেশ চল শুরু হয়। বেস ক্যাফেসহ অন্যান্য নানা গেমিং লাউঞ্জের জন্য ধানমণ্ডি এলাকা পরিচিত হয়ে হঠে ই-স্পোর্টস এরিনায়। বিভিন্ন ভার্সিটির প্রতিযোগিতায় ই-স্পোর্টস এখন দারুণ জনপ্রিয় হলেও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে ‘দ্যা কাউন্সিল’।
দ্যা কাউন্সিল
ফারহান ইসলাম গ্রাজুয়েশনের জন্য আমেরিকায় পড়াশোনা করতেন। ছোটবেলা থেকেই গেমিং এর প্রতি টান থাকার কারণে সুযোগ পেলেই খেলতেন। গেমিং জগতে বেশ নামও কুড়িয়েছেন ওখানে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে আর মন টেকেনি বিদেশে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সন্তান, কিছু করতে হলে দেশেই করবো, এমন সংকল্প থেকেই দেশে এসে রাহিব রেজা, আয়মান ইকবাল, জুন্নুন ইকবাল,মহিউদ্দিন সজলকে নিয়ে শুরু করি নিজেদের ই- স্পোর্টস টিম ‘দ্যা কাউন্সিল’। দ্যা কাউন্সিলের পথচলা নিয়ে ম্যানেজার অমিত রিচার্ডবলেন, ‘ই-স্পোর্টস সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নেই তাই বলা যায় আমরা এখনও এর সম্ভাবনা বুঝতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের ক্রিকেটের উদাহরণ দেওয়া যায়। একসময় বাবা মায়েরা সন্তানদের খেলতেই দিতেন না, আর এখন জোর করে মাঠে পাঠান। কারণ তারা এখন ক্রিকেটের সম্ভাবনা বোঝেন। ‘তিনি আরও বলেন, বহিবিশ্বে ই-স্পোর্টস এখন বেশ জনপ্রিয় এক বিষয়। এমনকি কোরিয়ার জাতীয় খেলাও ই-স্পোর্টস। অন্যদিকে পুরষ্কারের অর্থমূল্যও নেহাত কম নয়-তাই ক্যারিয়ার হিসাবেও এখন বেশ সম্ভাবনার জায়গা ই-স্পোর্টস।‘
অর্জন
পথচলার শুরু অল্পদিনের হলেও নিজেদের ইচ্ছা আর নিয়মিত প্রাকটিসের মাধ্যমে দ্যা কাউন্সিল পরিণত হয়েছে এক দারুণ টিমে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে তারা। ভারতে অনুষ্ঠিত ইসএল ইন্ডিয়া প্রিমিয়ারশিপে তাদের বিভাগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এর ফলে বিশ্বব্যাপী নিজেদের পাশাপাশি দেশের নামও উজ্জ্বল করেছে তারা। ১৪-১৫ গেম ফেস্টে চ্যাম্পিয়ন, আইইউটি ৭ম আইসিটি ফেস্টে চ্যাম্পিয়ন, আসুস রগ চ্যাম্পিয়নশিপে ২য় রানার আপ, অরোরাল গেমিং লাউঞ্জ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন।
সমস্যা ও সম্ভাবনা
নতুন কিছু শুরু করতে গেলে তাতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতেই হয়। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করলে তবেই তো বিজয়ের দেখা পাওয়া যাবে। ই-স্পোর্টসে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবথেকে বড় সমস্যা অভিভাবকদের অসচেতনতা। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে দেখলেই তারা মনে করেন সময় নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সব স্পের্টসের মত এখানেও প্রাকটিস দরকার। দরকার মনোযোগী হওয়া। তাই সময় নির্ধারণ করে কম্পিউটারের সামনে বসাও জরুরি। অন্যদিকে এই খেলাটা পুরোটাই টিম গেম, তাই টিমের সাথে প্রাকটিস করাটাও জরুরি; কিন্তু সেরকম স্থানের বড্ড অভাব আমাদের দেশে। পাশাপাশি আমাদের নেট কানেকশনও বেশ দুর্বল, প্রায়ই দেখা যায় গেমের মধ্যে নেট চলে যাওয়ায় পরাজয় মেনে নিতে হয়। যদিও এখন পূর্বের তুলনায় নেট স্পিড অনেক ভালো কিন্তু যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে ই-স্পোর্টসের বড় বড় প্রতিযোগিতা বিদেশে হয়। সেখানে অংশ নেওয়াও বেশ ব্যয়বহুল। স্পন্সরদের এই খাত সম্পর্কে বেশি না জানার কারণ তাদের আগ্রহও কম। সবকিছু বদলাতে সময় লাগে কিন্তু শুরু করাটা জরুরি। ইতোমধ্যেই সেই শুরু হয়ে গেছে। ‘দ্যা কাউন্সিল’ এখন আরো অনেককে উত্সাহিত করছে। আর ই-স্পোর্টস খাতের প্রাইজমানিও অন্যান্য যেকোন খাতের থেকে অনেক বেশি। তাই অনেকেই এখন সিরিয়াস হচ্ছে ই-স্পোর্টস নিয়ে। ফিফা কিংবা ডোটা২-এর মতো গেমগুলো এখন গেমারদের পছন্দের বিষয়।
অরোরাল টেক গেমিং লাউঞ্জ
টিম গেমে ভালো করতে দরকার টিম মেম্বারদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ আর একে অন্যকে বোঝার দক্ষতা। আর তা সম্ভব কেবল একসাথে প্রাকটিসের মাধ্যমে। তাই তো ‘দ্যা কাউন্সিল’ ফ্লোরা লিমিটেডের সহযোগিতায় গুলশান২-এর রব ভবনে চালু করেছে এক আধুনিক গেমিং লাউঞ্জ ‘অরোরাল টেক গেমিং লাউঞ্জ’। এই গেমিং লাউঞ্জে থাকছে গেম খেলার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা। এখানে ৫টি টিম একত্রে প্রাকটিস করতে পারবে, প্রতি টিমে সদস্য পাঁচ জন। ‘দ্যা কাউন্সিলে’র জন্য একটি রিজারভ তাই চারটি টিম প্রাকটিসের সুযোগ পাবে। অরোরাল টেক গেমিং লাউঞ্জের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারহান ইসলামের কথা বেশ প্রত্যয়ী। তার মতে শুধু নিজেরা ভাল করলে কোনো সময় সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্যদেরকেও উত্সাহিত করতে হবে। এখানে মেম্বার হয়ে নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে যে কেউই প্রাকটিস করতে পারবে। তবে, টিম হিসাবে প্রাকটিসের ওপর বেশি জোর দেন তারা। এখান থেকে দারুণ সব গেমারদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী এক টিম বানানোর ইচ্ছা রয়েছে তাদের।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
‘দ্যা কাউন্সিল’-এর সকল মেম্বার এ বিষয়ে বেশ গর্ব করতেই পারেন কারণ তারা পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। ই-স্পোর্টসের বিশ্বকাপ খ্যাত দ্যা ইন্টারন্যাশন্যাল-এ অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ‘দ্যা কাউন্সিলের’। এজন্য মেজর কাপগুলোতে ভালো করতে হবে তাদের। আপাতত সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন তারা। আগামী ৫-১২ ডিসেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স কাপেও অংশ নিচ্ছেন তারা। উল্লেখ্য, ১৪-১৫ গেম ফেস্টে আইইউটি ৭ম আইসিটি ফেস্টে চ্যাম্পিয়ন, আসুস রগ চ্যাম্পিয়নশীপে ২য় রানার আপ, অরোরাল গেমিং লাউঞ্জ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।