আউটসোর্সিংয়ের কত্ত বাজার !
- ফ্রিল্যান্সার্স ডেস্ক
আউটসোর্সিং বাংলাদেশে এখন একটি জনপ্রিয় পেশা। ঘরে বসে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কাজ করে খুব ভালো ইনকাম করা যায় বলে আমাদের দেশের তরুণ তরুণী এই পেশায় ঝুঁকছে। আউটসোর্সিং কাজ করা যায় বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে। আপনি যদি ফ্রীলেন্সিং পেশা কে গ্রহন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভালো ভালো মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। সেই সকল মার্কেটপ্লেসে কিভাবে জবের আবেদন করতে হয়? কোন ধরনের জবের চাহিদা বেশি? তারা কিভাবে টাকা প্রদান করে ইত্যাদি বিষয় জানা থাকলে আপনার জব পেতে এবং কাজ করতে অনেক সহজ হবে।
১. Upwork
আউটসোর্সিং এর জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হল Upwork।এই মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করতে কোন প্রকার ফি দিতে হয় না। যদিও বর্তমানে এই মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করা কঠিন হয়ে পরেছে। তবে আপনি যদি ভালো ভাবে আপনার কাজের অভিজ্ঞতার সকল তথ্য ও প্রমান দেখাতে পারেন তাহলে একাউন্টের আনুমোদন পাওয়ার সম্ভবনা আছে।
কি কি কাজ পাওয়া যায়ঃ
এখানে আইটি সম্পর্কিত প্রায় সব রকম কাজ রয়েছে যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, ভিডিও প্রোডাকশন ,মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি, রিসার্চ এর কাজ, অটো কেড এর কাজ ইত্যাদি।
কাজের ধরণঃ
এই মার্কেটপ্লেসে ঘন্টা এবং ফিক্সড দুইভাবে কাজ করা যায়। আপনাকে যদি কোন Client ঘন্টায় হায়ার করে তাহলে প্রতি ঘন্টা হিসেবে সে টাকা দিবে। এর জন্য এই মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব একটি সফটওয়ার আছে যা দ্বারা ঘন্টা হিসেব করা হয়। আর যদি ফিক্সড হিসেবে হায়ার করে তাহলে কাজের শেষে টাকা দেওয়া হবে। তবে ঘন্টার জবের নিরাপত্তা বেশি।
আপনি যখন কোন জবের জন্য আবেদন করবেন তখন কিছু বিষয় মাথায় রেখে আবেদন করবেন। যেমনঃ Client কত ঘন্টা জব করিয়েছে? পূর্বের ফ্রীলেন্সারদের ফিডব্যাক কেমন? কি রেটে কাজ করিয়েছে ইত্যাদি। আবেদনের সময় অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রদান করুন। তাহলে আপনার জব পাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিযোগিতা কেমনঃ
এই মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়াটাও তুলনামূলকভাবে কঠিন। কারণ প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তবে আপনি যদি ভালোভাবে কভার লেটার লিখতে পারেন এবং আপনার কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন তাহলে সহজে কাজ পাবেন।
পেমেন্ট দেয়ার পদ্ধতিঃ
এই মার্কেটপ্লেস খুব নিরাপদ একটি মার্কেটপ্লেস। এখান থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা উঠানো যায়। যেমনঃ বিভিন্ন মাস্টারকার্ড – Payoneer । এছাড়া আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমেও টাকা তুলতে পারবেন।
২. Fiverr
Upwork এর মত আরেকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হল Fiverr। তবে এই মার্কেটপ্লেসের কার্যবলী Upwork এর মত না। এই মার্কেটপ্লেস হল একটি দোকানের মত। একটি দোকানে যেমন সকল ধরনের পণ্য থাকে কাস্টমার বা গ্রাহক যা প্রয়োজন তা ক্রয় করে নিয়ে যায় ঠিক তেমনি Fiverr -এ ফ্রীলেন্সাররা নিজের কাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দিয়ে “গিগ” তৈরি করে। ক্লায়েন্টের যেই সার্ভিস প্রয়োজন সেই সার্ভিসের একটি গিগ ক্রয় করে ফ্রীলেন্সারদের হায়ার করে। প্রতিটি গিগের সর্বনিন্ম মূল্য ৫ ডলার।
কি কি কাজ করার সুযোগ আছেঃ
এই মার্কেটপ্লেসে সকল ধরনের কাজ এর গিগ খোলা যায় যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, PowerPoint Presentation, ডিজিটাল মার্কেটিং(এসইও, এসএমএম, ইমেইল মার্কেটিং), ল্যান্ডিং পেজ তৈরি, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
কাজের ধরণঃ
এখানে সকল কাজ ফিক্সড পেমেন্টের কাজ, ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি নিদিষ্ট সময় দিবে সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, এছাড়া আপনি আপনার গিগ এর মধ্যে আপনার সময়তো উল্লেখ থাকবেই ।
প্রতিযোগিতা কেমনঃ
হ্যা এই মার্কেটপ্লেসেও প্রতিযোগিতা আছে। তবে যেহেতু এই মার্কেটপ্লেসে কোন ক্লায়েন্ট এসে জব পোষ্ট করে না সেহেতু কাজ পাওয়ার জন্য নিজের গিগ কে মার্কেটিং করার প্রয়োজন হয়। আপনি ভালোভাবে মার্কেটিং করতে পারলে আপনার গিগ এর বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য আপনার গিগকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে পারেন। যেমনঃ ফেসবুক, লিঙ্কডিন, টুইটারে শেয়ার করতে পারেন।
পেমেন্ট দেয়ার পদ্ধতিঃ
ফাইভার থেকেও টাকা উত্তোলন নিরাপদ। বাংলাদেশ থেকে সহজে টাকা উওোলনের মাধ্যম হল payoneer মাস্টার কার্ড।
৩. Freelancer
অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে পুরাতন একটি মার্কেটপ্লেসের নাম হল Freelancer। এই মার্কেট প্লেসে বিভিন্ন ধরণের অনেক জব রয়েছে। আপনি আইটির প্রায় সকল সেক্টরের জব পাবেন এই মার্কেটপ্লেসে। আইটি ছাড়াও আরও অনেক ধরনের জব রয়েছে এই মার্কেটপ্লেসে যেমনঃ একাউন্টিং। এখানে আবেদন করাও সহজ। এখানে একাউন্ট করতে কোন প্রকার ফি লাগে না। তবে ফ্রী মেম্বারশিপ একাউন্টের মাধ্যমে মাসে ৮ টার বেশি জবে বিড করা যায় না।
কি কি কাজ পাওয়া যায়ঃ
এই মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমান জব সাবমিট হয়। তাই সকল রকমের আইটি জব পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে আইটি এর বাইরেও জব পাওয়া যায়।
প্রতিযোগিতা কেমনঃ
এই মার্কেটপ্লেসে যেমন অনেক জব আছে আবার তেমনি অনেক ফ্রীলেন্সাররাও রয়েছে। তাই প্রতিযোগিতাও আছে এবং আবার ভালো কাজ জানলে জব পাওয়ার সম্ভবনাও বেশি। আসলে পুরনো মার্কেটপ্লেস সব গুলোতেই ভালো প্রতিযোগিতা থাকে ।
পেমেন্ট দেয়ার পদ্ধতিঃ
পেমেন্ট মেথডের ক্ষেত্রে পেয়নিয়ার মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। এছাড়া Paypal বা Skril এর মাধ্যমেও টাকা তোলা যায়।
৪. PeoplePerHour
ফ্রীলেন্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের নাম হল PeoplePerHour. এই মার্কেটপ্লেসটিতে অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পাওয়াটা একটু সহজ। এই মার্কেটপ্লেসে প্রত্যেকটি ফ্রীলেন্সারকে ১-৫ লেভেল পর্যন্ত একটি ব্যাচ প্রদান করা হয়। এই লেভেল যত বৃদ্ধি পাবে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পাবে। এই লেভেল ৩ পর্যন্ত কাজ পাওয়ার আগেই বৃদ্ধি করা যায়। তবে ৩ থেকে লেভেল বৃদ্ধি করতে আপনার প্রোজেক্টের উপর এবং বায়ারের ফিডবেকের উপর নির্ভর করে। কাজ পাওয়ার আগে লেভেল ৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার উপায় হল স্টার এবং এন্ডোর্সমেন্ট। এই এন্ডোর্সমেন্ট ও স্টার আপনাকে যেকেউ দিতে পারে। তাই অন্যের কাছ থেকে এন্ডোর্সমেন্ট ও স্টার পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আপনি অন্যজনকে এন্ডোর্স ও স্টার দেওয়ার মাধ্যমেও এন্ডোর্সমেন্ট ও স্টার পেতে পারেন।
কি কি কাজ পাওয়া যায়ঃ
এখানেও আপওয়ার্ক বা ফ্রীলেন্সারের মত বিভিন্ন ধরনের আইটি জব রয়েছে যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
পেমেন্ট দেয়ার পদ্ধতিঃ
এই মার্কেটপ্লেস থেকে payoneer দিয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
প্রতিযোগিতা কেমনঃ
প্রতিযোগিতাতো থাকবেই কিন্তু এই মার্কেটপ্লেসে Upwork এবং Freelancer এর তুলনায় প্রতিযোগিতা কম ।
৫. ৯৯ ডিজাইন
৯৯ ডিজাইন অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে ভিন্ন একটি মার্কেটপ্লেস। এটি মুলত ডিজাইনারদের জন্য একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। যারা ডিজাইন করতে পারে যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফেসবুক কভার ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডিজাইন ইত্যাদি তাদের জন্য এই মার্কেটপ্লেস। এখানে কোন কাজের বিড করতে হয় না। এখানে Client তার প্রয়োজন মত ডিজাইনের তথ্য উল্লেখ করে ডিজাইনাররা সেই তথ্য অনুযায়ী ডিজাইন করে তা জমা করে। যার ডিজাইন Client এর ভালো লাগে তাকে সে জব পোষ্ট করার সময় উল্লেখিত মূল্য প্রদান করে। বিষয়টি প্রতিযোগিতার মত।
কি কি কাজ পাওয়া যায়ঃ
ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফেসবুক কভার ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডিজাইন, আইকন ডিজাইন, ব্লগ, ব্যানার, YouTube চ্যানেল ডিজাইন ইত্যাদি।
পেমেন্ট দেয়ার পদ্ধতিঃ
এই মার্কেটপ্লেসেও পেমেন্ট তোলা যায় Payoneer এবং Skrill এর মাধ্যমে। তাই বাংলাদেশ থেকে চাইলেই যে কোন ডিজাইনার এই মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারে।
প্রতিযোগিতা কেমনঃ
এটি পুরটাই প্রতিযোগিতা পূর্ণ কাজ কারণ যার ডিজাইন ভালো হবে সেই মূল্য পাবেন।

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	