ডিজাইনারদের প্রিয় প্লেস

ডিজাইনারদের প্রিয় প্লেস

  • ফ্রিল্যান্সার্স ডেস্ক

পোশাক খাতের ডিজাইনারদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ‘টিস্প্রিং’। ঘরে বসে পোশাক ডিজাইন করে অর্থ আয়ের সুযোগ দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাফিক ডিজাইন এবং অনলাইন মার্কেটিং জানা তরুণদের জন্য মার্কেটপ্লেসটি হতে পারে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।


দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত পোশাক শিল্প। প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহারে ক্রমেই মেধানির্ভর হয়ে পড়ছে শ্রমঘন এই শিল্প খাতটি। আর পোশাক খাত বিশেষ করে টিশার্ট ডিজাইনারদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ‘টিস্প্রিং’। ঘরে বসে টিশার্ট ডিজাইন করে অর্থ আয়ের সুযোগ দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। টিস্প্রিং বিশ্বজুড়ে টিশার্টপ্রিয়দের কাঙ্ক্ষিত পোর্টাল হয়ে উঠেছে। চলতি বছরে এখানে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ৫০ ধরনের পোশাক। ফলে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের জন্য ওয়েবসাইটটি হতে পারে নতুন গন্তব্য।

টিস্প্রিং কী
একটা সময় ছিল যখন অনলাইনে টি-শার্ট সেল করাটা খুব সহজ বিষয় ছিল না। এটা করার জন্য নানা আয়োজন করে একটি দোকান খুলতে হতো। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে বিষয়টি খুব সহজ হয়ে গেছে। কেননা ওই বছরের মার্চ মাস থেকে টিস্প্রিংয়ে কাজ শুরু করে বাংলাদেশের মুক্ত পেশাজীবীরা। এই প্ল্যাটফর্মটি তাদের কাছে পরিচিত করে তোলেন ২০১৪ সাল থেকে এই মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে যুক্ত হন মুক্ত পেশাজীবী জাফর হোসেন। জাফি নামে পরিচিত জাফি বর্তমানে টি স্প্রিংয়ের বাংলাদেশস্থ শুভেচ্ছা দূত এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর। তিনি জানান, টি স্প্রিং এমন একটি সহজ অনলাইন আয়ের উৎস, যেখানে অর্থ আয়ে ফ্রিল্যান্সারদের ঝামেলা পোহাতে হয় না। নিজের ডিজাইন করা টি-শার্ট টি ম্প্রিং ওয়েবসাইটে বিক্রয় করে আয় করতে পারেন ফ্রিল্যান্সাররা। এজন্য টি স্প্রিং ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার ডিজাইনের টি-শার্ট আপলোড করবেন এবং সেই টি-শার্টটি কতটা বিক্রি করতে চান সেটার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেবেন। অর্থাৎ এখানে আয় করতে নিজস্ব ডোমেইন, হোস্টিং কিংবা ট্রাকিং ব্যয় প্রয়োজন নেই। শুধু মেধা, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলেই চলবে। আপনি হয়ত টিশার্টটি ডিজাইন করে মার্কেটপ্লেসটিতে দিয়েছেন। ওই ডিজাইন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে থাকা ব্যক্তি হয়ত পছন্দ করল। ওই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ডিজাইন পছন্দ করে টিস্প্রিং ওয়েবে অর্ডার করলে ট্রিস্প্রিং কর্তৃপক্ষ তা রীতিমত বানিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়। এর ফলে আয়কৃত অর্থের একটা অংশ পায় সংশ্লিষ্ট ডিজাইনার। এখানে ফ্রিল্যান্সারের শুধু ডিজাইন আপলোড এবং সেই টি-শার্টটি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় মার্কেটিং করতে হবে। আর এ মার্কেটিংয়ে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করলেই চলবে।

বাংলাদেশে টিস্প্রিং
বিশ্ববাজারে ২০১১ সালে ই-কমার্স সাইট হিসেবে যাত্রা শুরু করে ট্রি স্প্রিং। তবে ক্রাউড সোর্সিং সুবিধায় ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। আর বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা এখানে কাজ শুরু করে পরের বছরই। এখন এই ক্রাউড সোর্সিং ভেলার মাঝি হয়ে ঘরে বসে পোশাক শিল্পের রফতানি আয়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে তরুণ মুক্ত পেশাজীবীরা। দীর্ঘদিন ধরেই না বুঝে দেশের যেসব তরুণ মার্কেটিংয়ের নামে পর্নো সাইটে কাজ করছিলেন তাদের জন্য এটি একটি আয়ের বসন্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা এদের কিছু অংশ যাচ্ছিলেন গ্যামবি্লং বা জুয়া প্রমোশনের দিকে। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রতারিত একটা বড় সংখ্যক বাংলাদেশি তরুণ এখন চাইলেই অনলাইন থেকে মর্যাদার সঙ্গে আয় করতে পারছেন। টি স্প্রিংয়ে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুকে প্রতিষ্ঠানটির একটি গ্রুপ পেজ রয়েছে। টি স্প্রিং বিডি নামের এই পেজে গিয়ে যে কেউ দোকান খুলে নিজের মতো করে মার্কিন মুল্লুকে ব্যবসায় করতে পারে। ফ্রি এবং পেইড ট্রাফিক উভয় পদ্ধতিতেই কাজ করা যায় এখানে। ইতিমধ্যেই এই গ্রুপে তাদের ২৫ হাজারের মতো সদস্য রয়েছেন। ২৮ হাজারের মতো বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারের এখানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মার্কেটপ্লেসটিতে কাজ করে আয় সহজেই পেয়োনিয়রের মাধ্যমে দেশের যে কোনো ব্যাংকে আনা যায়। এই মাধ্যমটিতে কাজ করে অনেক শিক্ষার্থীই এখন মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার আয় করছে। এই আয়কে ১ লাখ ডলারে উন্নীত করতে কাজ করছে টি-স্প্রিং বাংলাদেশ অধ্যায়।

টিস্প্রিং থেকে আয় করবেন যেভাবে
টি স্প্রিং থেকে আয় করতে হলে প্রথবে ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে করার পরে লগইন করে ছবি অনুযায়ী ক্লিক করলে একটা সাদা রঙের টি-শার্ট দেখা যাবে। এখানেই টি-শার্ট ডিজাইন করতে হবে। এখানে অবশ্য কয়েক রকমের টি-শার্ট বানানোর অপশন আছে তাই যে টি-শার্টটি বানাতে ইচ্ছুক সেটা সিলেক্ট করুন। টি-শার্টটির ডান পাশে আছে লং স্লিভ শার্ট, হুডিস, টপস ইত্যাদি। এখানে পছন্দমতো কালার, ফন্ট এবং আর্টওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। টি-শার্ট ডিজাইন সম্পন্ন হলে কত সংখ্যক বিক্রি করা যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন উল্লেখ করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এ পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে টি-শার্টের দাম। তবে দাম নিজ থেকে নিধারণ না করাই ভালো; স্বয়ংক্রিয়ভাবে টি-স্প্রিংয়ে যেটা আসে সেটাই থাকুক। এরপর আপনি যে কালারের টি-শার্ট বানিয়েছেন সেটার সঙ্গে অন্য কালারের একই ডিজাইনের টি-শার্ট বিক্রির জন্য অপশন যোগ করে দিতে পারেন। তৃতীয় ধাপে টি-শার্টটির জন্য সঠিকভাবে নাম দিতে হবে এবং একটি সুন্দর বর্ণনা লিখতে হবে। টি-শার্টটি ক’দিনের জন্য ক্রয়ের উপযুক্ত থাকবে সেটা নির্ধারণ করে দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টি-শার্ট বিক্রি হলে টি-শার্টটি প্রিন্ট করে কাস্টমারের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হবে। আপনি আপনার নির্ধারিত প্রাপ্য কমিশন অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাবেন। ট্রি স্প্রিংয়ের সফলাতার মূলমন্ত্র হচ্ছে, অন্য যে কোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের মতোই এখানেও আপনার টার্গেট ক্রেতা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। সম্ভাব্য ক্রেতা সম্পর্কে যত ভালোভাবে জানবেন তাদের জন্য টি-শার্ট ডিজাইন করা তত সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। টি-শার্ট লোকে কেন কেনে এবং কোন কোন বিষয় একজন ক্রেতাকে টি-শার্টটি দেখামাত্রই তা কিনতে উদ্বুদ্ধ করে, এটা বুঝতে পারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমেরিকান প্রমিন্যান্ট ব্র্যান্ডের একটি এখন টিস্প্রিং। শুধু টি-শার্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মার্কেটপ্লেসটিতে ২০১৭ সালে মোট ৫০টি পণ্য যুক্ত হবে। যে কেউ চাইলে বাংলাদেশে বসে, আমেরিকায় নিজের পছন্দের নামের ব্র্যান্ড শপ খুলে পণ্য বিক্রি করে আয় করতে পারে। শপিংয়ের কোনো ঝামেলায় যাওয়া লাগবে না।

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment