আউটসোর্সিংয়ে আয় বাড়ছে তরুণদের
- ফ্রিল্যান্সার্স ডেস্ক
অনেক তরুণের স্বপ্ন মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানো। সেখানে গিয়ে ভালো কোনো কাজ করে হাজার হাজার ‘ডলার’ উপার্জন করা। গ্রামের ছোট্ট গণ্ডিতে বসে এমন স্বপ্ন দেখা তরুণরা এখন ঘরে বসেই ‘ডলার’ উপার্জন করছে। তাদের সহায় হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ পেয়ে অনেকেই ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বড় বড় মার্কিন কম্পানির কাজ করছে। আর বিনিময়ে আয় করছে ‘ডলার’।
তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, শেখার সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে উপার্জন করা যায় এই ধারণাকে তরুণদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এই লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতাকে আরো বিকশিত করতে এই প্রকল্প শুরু করে আইসিটি বিভাগ। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনলাইন আউটসোর্সিং কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করে কর্মসংস্থান বাড়ানো।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত মোট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে ১৫৬০ জন। এর মধ্যে সফলভাবে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছে ৪৮৫ জন। বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন জেলায় তাদের সম্মিলিত আয় ৪১ হাজার ৫৭৯ ডলার বা টাকার অঙ্কে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩২০ ঢাকা। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত এই আয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলায় প্রশিক্ষণ পাওয়া ১৪০ জনের মধ্যে সফলভাবে ২৫ জন আউটসোর্সিং করে আয় করেছেন ৩২৬০ ডলার। নারায়ণগঞ্জে প্রশিক্ষণগ্রহণকারী ৪০ জনের মধ্যে ১১ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেছে ১১৯০ ডলার। নরসিংদীতে ৪০ জনের মধ্যে থেকে ১৩২ জনের আয় ৮৩০ ডলার। টাঙ্গাইলে ১৬০ জনের মধ্য থেকে ৩৫ জনের আয় ৩৩৪০ ডলার। কিশোরগঞ্জে প্রশিক্ষণ পাওয়া ২০০ জনের মধ্য থেকে ৩২ জন আয় করেছে ১৮৪০ ডলার। রাজবাড়ীতে ৮০ জনের মধ্যে থেকে ২৫ জন আয় করেছে ২২৫০ ডলার। মাদারীপুরে ১৯ জন ১১৫০ ডলার আয় করেছে। শরীয়তপুরে ৭ জন আয় করেছে ৪৩০ ডলার। মানিকগঞ্জে ১২০ জনের মধ্যে থেকে ৯০ জন ৭৫৬০ ডলার আয় করেছে। ফরিদপুরে ৪৫ জন ৪৩৫৫ ডলার আয় করেছে। গাজীপুরে ১৬০ জনের মধ্য থেকে ৮০ জন ৯১০০ ডলার আয় করেছে।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এখন স্বাবলম্বী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি। এই সমস্যা নিয়ে আমি এবং আমার পরিবার যখন টানাপড়েনে পড়ি তখন লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। অনলাইনে আবেদন করে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর ৫০ দিনের কোর্সটি সম্পন্ন করি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন আমি প্রথম এসইওর মাধ্যমে ২৫ ডলার আয় করি। বর্তমানে আমি বিদেশি কাজের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ডাটা এন্ট্রির কাজও করছি। এখন আমি ভালো আয় করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নারীরাও ভালো আয় করছেন। তাঁদেরই একজন তাসমিন নাহার। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমি একটি পত্রিকার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। জানুয়ারিতে ৫০ দিনের গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর ফ্রি কোর্স করি। এই কোর্সটি শুধু ক্লাসরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা সারাক্ষণ ব্যাচের সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছি। ’
তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুবীর চৌধুরী বলেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করে ভালো থাকার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তরুণরা বিদেশি মুদ্রা আয় করে নিজেরা ভালো থাকার পাশাপাশি দেশকে ভালো রাখতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই নয়, মেনটরিংসহ প্রয়োজনীয় সব রকমের সহায়তা দেবে বলে।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের পরিচালক মির্জা আলী আশরাফ বলেন, ‘২০১৪ সালে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ কোটি ইউএস ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।