অসীম সম্ভাবনার স্বর্ণদ্বার আউটসোর্সিং
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
কোনো কোনো ‘সম্ভাবনার ক্ষেত্র’ আকাশের ন্যায় অসীম। ‘আউটসোর্সিং’ তাহার মধ্যে একটি। অত্যন্ত আনন্দের খবর হইল—আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়। কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নহে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি ও স্পেনের মতো দেশও বাংলাদেশের পিছনে অবস্থান করিতেছে। এই তথ্য দিয়াছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ।
আউটসোর্সিং তথা ফ্রিল্যান্সিং হইল অনলাইনভিত্তিক মুক্তপেশা। অনলাইনে আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে নানা ধরনের কাজ রহিয়াছে। যেমন—ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসাসেবা ইত্যাদি। এই পেশায় যাহারা কাজ করিয়া থাকেন তাহাদের সিংহভাগই শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের সুবিধা হইল, আমাদের মোট জনসংখ্যার ১৮ হইতে ৩৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন ৪০ শতাংশ। কোনো দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যখন আনুপাতিক হারে সর্বাধিক থাকে তখন তাহাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। এই অবস্থাকে কেহ কেহ ‘উইন্ডোজ অব অপরচুনিটি’ও বলিয়া থাকেন। বলা যায়, এই ডেমোগ্রাফিক সুবিধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাইতে পারিলে ওই দেশটির জন্য প্রভূত সম্ভাবনার দুয়ার খুলিয়া যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ শিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষকে অনলাইনে আউটসোর্সিং কাজের যোগ্য হিসাবে গড়িয়া তুলিবার ক্ষেত্রটি যথাযথভাবে বিকশিত করিবার সময় এখনই। আমাদের সৌভাগ্য যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের মাধ্যমে আরো আট বত্সর পূর্বেই ইহার পরিকাঠামো ও ক্ষেত্রপ্রস্তুতের পরিকল্পনা করা হয়, যাহার নেপথ্যে রহিয়াছেন প্রধানমন্ত্রীর তনয়। সুতরাং আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করিয়াছে—তাহা রাতারাতি ঘটে নাই। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করিবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিগত কিছু বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি। আর যেহেতু ক্লায়েন্টদের বেশিরভাগই বিদেশি হইয়া থাকেন, সুতরাং তাহাদের সহিত ইংরেজিতে যোগাযোগ করিবার মতো ভাষাজ্ঞান থাকাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জনশক্তির তুলনায় দেশে চাকুরির বাজার সংকুচিত থাকায় আউটসোর্সিং খাতে বিশেষ প্রণোদনা দিতেছে সরকার। এইবারের বাজেটে ডেটা এন্ট্রি, ডেটা প্রসেসিং, কল সেন্টারসহ পুরা বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি স্থাপনায় ভ্যাট মওকুফ করাসহ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণসমূহের মান বৃদ্ধিতেও গুরুত্বারোপ করিয়াছে সরকার। ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধি, সহনীয় ডেটামূল্য এবং সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের মতো অবকাঠামোর উন্নয়ন এই ক্ষেত্রে জরুরি। এইভাবে বাংলাদেশকে আইসিটিভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের মাধ্যমে এক অসীম সম্ভাবনার দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। সম্ভব এই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।