ভারতের টপ টেন ফ্রিল্যান্সিং সাইট
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাঙালি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং কাজের প্রতি ঝোঁক, আর তাদের ঘরে বসে সহজেই আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট।
১০টা-৫ টার বাধা ডিউটি নেই, অফিস পলিটিক্সের ঝুট ঝামেলা নেই, বসের রক্তচক্ষু নেই নিজের ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করেই আয় করা যায় দিব্যি। রয়েছে পার্ট-টাইম জবের সুযোগও। কলেজের পাশাপাশিই নিজের সময় সুযোগ মত কাজ করে জুটে যায় পকেট-মানিটুকু।
দিনে কতক্ষণ কাজ করবেন বা সপ্তাহে কদিন সেই সিদ্ধান্ত পুরোটাই আপনার নিজের। ঠিক কোন কাজটা করতে চান সেটাও ঠিক করবেন আপনিই।
বিদেশে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কেরিয়ার। পরিসংখ্যান বলছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মী সংখ্যার ৩৬ শতাংশ ফ্রিল্যান্স কাজের সঙ্গে যুক্ত। অনলাইন জব করেই কলেজের মাইনে জোগাড় করে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ।
ভারতেও ক্রমেই চাহিদা বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারের। বিদেশী সংস্থারাও হামেশাই ভারতীয়দের নিয়োগ করছে বিভিন্ন অনলাইন জবে।
তবে উপযুক্ত যোগ্যতা থাকার পরও অনেক সময়ই সঠিক কাজের সুলুক সন্ধান পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে, ইন্টারনেটে হন্যে হয়ে ঘুরেও খুঁজে পাওয়া যায়না পছন্দ মতো কাজটি। আপনার এই সমস্যা সমাধান করতেই আমরা এখানে ভারতের বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের একটা তালিকা তৈরি করেছি।
এই ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই পেতে পারেন আপনার পছন্দ মতো কাজ, এবং নিশ্চিত থাকবে আয়ও। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোই আপনার দক্ষতার সঙ্গে মিলিয়ে কাজ খুঁজে দেবে আপনাকে।
ভারতের কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট
১. ইউথ ফর ওয়ার্ক (Youth4work)
অনলাইনে কর্মী নিয়োগের একটা বড় সমস্যা প্রার্থীর দক্ষতা যাচাই। প্রার্থীর অনলাইন প্রোফাইল থেকে অনেক সময়েই তার দক্ষতার সঠিক আন্দাজ পাওয়া যায় না। সেই সমস্যার সমাধানে কিছু অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে ইউথ ফর ওয়ার্ক।
বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক এই পরীক্ষা দিয়ে আপনি সহজেই প্রমাণ করতে পারবেন নিজের যোগ্যতা, পরীক্ষার ফলাফল দেখা যাবে আপনার প্রোফাইলে। নিয়োগের সময়ে পরীক্ষার এই ফল দেখেই নিয়োগকারী সংস্থা বুঝে নিতে পারবে আপনার দক্ষতার স্তর।
খরচ: এই সাইটে নথিভুক্তির জন্য কোনও টাকা দিতে হয় না ফ্রিল্যান্সারকে, অর্থাত্ বিনা বিনিয়োগেই আপনি পা রাখতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে।
২. ওয়ার্কএনহায়ার (WorknHire)
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট ওয়ার্কএনহায়ার। আইটি অ্যান্ড প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ফিন্যান্স, সেলস্ অ্যান্ড মার্কেটিং ও ডেটা এন্ট্রি সহ বিবিধ কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব এই ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে।
ফ্রিল্যান্সার ও ফ্রিল্যান্স মার্কেটের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করে ওয়ার্কএনহায়ার। কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই প্রোফাইল খোলা যায় সহজেই। ভারতের অভিজ্ঞ অথবা নতুন সব ফ্রিল্যান্সাররাই পেতে পারেন কাজের সুযোগ।
ফ্রিল্যান্স কেরিয়ার শুরু করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এই ওয়েবসাইট। পাশাপাশিই রয়েছে ভার্চুয়াল ডেস্কটপ, যেখানে আপনি সহজেই গুছিয়ে রাখতে পারেন প্রজেক্টের কাজ।
খরচ: মোট ইনভয়েসের ৫.৬১৮শতাংশ নেয় ওয়ার্কএনহায়ার। অর্থাত্ একটি প্রজেক্টে মোট যে টাকা আপনি পাবেন তার ৫.৬১৮ শতাংশ পরিষেবা মূল্য হিসেবে নেবে ওয়ার্কএনহায়ার।
৩. ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়া (Freelance India)
ভারতের প্রথম ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটগুলোর একটি ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়া। ২০০২ সাল থেকে ভারতের ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করছে এই ওয়েবসাইট। নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময় প্রোফাইল খোলার পাশাপাশিই রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপের সুযোগও।
এই সাইটের নেভিগেশন বেশ জটিল হলেও কাজ পাওয়া যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে, পার্সোনালাইসড ওয়েব পেজের মাধ্যমে তৈরি করা যায় গুগল্ লিস্টিংও। অ্যাকাউন্টিং থেকে ফটোগ্রাফি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ।
মেম্বারশিপ খরচ: তিন ধরনের মেম্বারশিপ রয়েছে ফ্রিল্যান্স ইন্ডিয়ার। প্রিমিয়াম প্লাস মেম্বারশিপের খরচ বার্ষিক ২০০০ টাকা। প্রিমিয়াম মেম্বারশিপের জন্য দিতে হবে বছরে ১৬০০টাকা। রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপ। তবে মেম্বারশিপের ধরনের ওপর নির্ভর করে কাজ পাওয়ার সুযোগ।
৪. অন কন্ট্র্যাক্ট (On Contract)
ফ্রিল্যান্স কাজের অন্যতম বড় অসুবিধা ফ্রিল্যান্সারারের সঙ্গে কোনও চুক্তিপত্র সই হয় না নিয়োগকারী সংস্থার। এর ফলে প্রায়শই নানা সমস্যায় পড়তে হয় ফ্রিল্যান্সারকে, টাকা না পাওয়া, দেরিতে টাকা পাওয়া বা কাজের শর্ত নিয়ে মতানৈক্য।
এই সমস্যার সমাধানে অন কন্ট্র্যাক্ট রেখেছে অনলাইন ই-কন্ট্র্যাক্ট সই করার ব্যবস্থা। এই চুক্তিপত্রে মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সময় মতো টাকা পাওয়া ও কাজের নির্দিষ্ট শর্ত।
খুব দ্রুত যে সব প্রজেক্টে কর্মী প্রয়োজন, সেই প্রজেক্টে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে।
খরচ: ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কোনওরকম টাকা নেয় না অন কন্ট্র্যাক্ট, বরং নিয়োগকারী সংস্থার জন্য রয়েছে সাবস্ক্রিপশন ফি।
৫. ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)
ভারতের ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা ফ্রিল্যান্সার। পৃথিবীজুড়ে অসম্ভব জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট আপওয়ার্কের মডেলে তৈরি এই ওয়েবসাইটে রয়েছে পছন্দ মতো প্রজেক্টে বিড করার সুযোগ। অর্থাৎ কোনও প্রজেক্টে কাজ করতে চাইলে, কাজের সম্ভাব্য মূল্য ও সময় সহ আপনাকে আবেদন করতে হবে সেই নির্দিষ্ট প্রজেক্টে, যা সরাসরি পৌঁছে যাবে নিয়োগকারী সংস্থার কাছে।
অবশ্য ফ্রি প্রোফাইলে খুবই কম সংখ্যক কাজেই বিড করতে পারবেন আপনি। টাকা দিয়ে প্রোফাইল খুললে এক মাসে অনেক কাজেই আবেদনের সুযোগ মিলবে। এই ওয়েবসাইটে রয়েছে ডেস্কটপ ট্র্যাকার অ্যাপ, যার মাধ্যমে আপনি একটি প্রজেক্টে কতক্ষণ কাজ করেছেন সেই হিসেব রাখা সম্ভব। প্রতিঘন্টা হিসেবে নিয়োগ হলে এই হিসেবের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে আপনার প্রাপ্য টাকা।
খরচ: মোট টাকার ২০ শতাংশ নেয় ফ্রিল্যান্সার। প্রেফারড্ ফ্রিল্যান্সার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে নেয় ১৫ শতাংশ।
৬. ইলমোসিস স্টুডিও (Ilmosys Studio)
শুধুমাত্র ডিজাইনার, ডেভেলপার বা ডিজিটাল কাজে দক্ষ কর্মীদের জন্য তৈরি ইলমোসিস স্টুডিও। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরমাধ্যমে আপনি খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারেন এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ফ্রিল্যান্সিং কাজ।
ডিজিটাল দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্স কেরিয়ার শুরু করতে চাইলে ইলমোসিস আপনার আদর্শ পছন্দ। এই ওয়েবসাইটে খুব স্পষ্টভাষায় দেওয়া আছে নির্দিষ্ট গাইডলাইন আর সব থেকে সুবিধার বিষয়, এখানে আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন একটি প্রজেক্টে আপনি মোট কতবার সংশোধন করতে রাজি।
ডিজাইনের বা ডেভেলপিংয়ের কাজে অনেক সময়েই বারবার পরিবর্তনের অনুরোধ আসতে থাকে, যার ফলে নষ্ট হয় সময় ও শ্রম। এই সমস্যা মেটাতেই ইলমোসিস স্টুডিও রেখেছে এই সুযোগ।
এছাড়াও কোনওরকম মতানৈক্য তৈরি হলে খুবই দক্ষ হাতে সেই সমস্যার সমাধান করে এই ওয়েবসাইটের ভারপ্রাপ্ত টিম।
খরচ: এই জবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিটি কাজের পারিশ্রমিকের ২০ শতাংশ দিতে হবে এই ওয়েবসাইটকে।
৭. দ্য ফ্লেক্সিপোর্ট (The Flexiport)
অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটেরথেকে খানিক অন্য রকম ভাবে কাজ করে ফ্লেক্সিপোর্ট, এবং অপেক্ষাকৃত নতুন। ফ্লেক্সিপোর্ট কাজ করে আউটসোর্সিং এজেন্সি হিসেবে, যোগাযোগ করিয়ে দেয় ফ্রিল্যান্সার আর কোম্পানির মধ্যে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং কাজ সংক্রান্ত নানা তথ্য ও ভারতের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট সম্পর্কে জানতে পড়ুন ফ্লেক্সিপোর্টের ব্লগ।
সম্পূর্ণ প্রজেক্টটিকে গুছিয়ে রাখার সুবিধাও পাওয়া যাবে দ্য ফ্রেক্সিপোর্টে। এর ফলে কাজের ফিডব্যাক পাওয়া এবং কাজ বোঝা সহজ হয়ে যায় অনেকটাই।
মেম্বারশিপ খরচ: প্রিমিয়াম মেম্বারশিপের খরচ ৪০০ টাকা প্রতি তিন মাস, রয়েছে ফ্রি মেম্বারশিপও। এছাড়াও কোনও নির্দিষ্ট জব পোস্টিং পছন্দ হলে কিনে নেওয়া যায় সেই চাকরির যোগাযোগ নম্বর, ইমেল অ্যাড্রেস ইত্যাদি।
৮. ড্রিম স্টার্টস্ (Dream Starts)
শুধুমাত্র স্টার্টআপ সংস্থাদের সঙ্গে কাজ করে এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট । পূর্ণ সময়ের কর্মী নিয়োগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না স্টার্টআপদের পক্ষে, কাজের জন্য মূলতঃ ফ্রিল্যান্সারদের ওপরই নির্ভর করে এই সমস্ত সংস্থা। ড্রিম স্টার্টসে খোঁজ মেলে সেই সব কাজের।
অনেক সময়েই সাধারণ অন্যান্য কাজের থেকে বেশ অন্যরকম হয় স্টার্টআপদের কাজ, থাকে উন্নতি ও সৃজনীশক্তি প্রকাশের সুযোগ। কাজ মেলে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতেও। ফলে একটু অন্য ধরনের কাজের খোঁজে থাকলে ড্রিম স্টার্টই হতে পারে আপনার ঠিকানা।
খরচ: যে কেউ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইট।বাঁধাগতের চাকরির বাইরে নতুন কাজের সন্ধান দিচ্ছে এই ২৪টি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট
৯. ট্রুল্যান্সার (Truelancer)
আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পরিষেবা ইত্যাদির খতিয়ান দিয়ে আপনি সরাসরি পোস্ট করতে পারেন এই ফ্রিল্যান্স সাইটে। কোনও সংস্থা তাদের প্রয়োজন মতো যোগাযোগ করতে পারবে আপনাকে।
আপনার মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে নিতে পারেন ট্রুল্যান্সার অ্যাপও, তাহলে রাস্তাঘাট যেকোনও জায়গা থেকে সহজেই দেখতে পারবেন নতুন পোস্ট হওয়া ফ্রিল্যান্সিং জব। ভারতের ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা ট্রুল্যান্সার।
খরচ: চার ধরনের মেম্বারশিপ রয়েছে ট্রুল্যান্সারের। ফ্রি, বেসিক, প্রো এবং প্লাস। মেম্বারশিপের ধরনের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিকের ৮ থেকে ১০ শতাংশ রাখে ট্রুল্যান্সার।
১০. ডিজাইন হিল (Design Hill)
নির্দিষ্টভাবে ডিজাইনারদের জন্য তৈরি ফ্রিল্যান্সিং সাইট ডিজাইন হিল। ভারতের এই ওয়েবসাইট সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেয় ফ্রিল্যান্সারদের।
ডিজাইন হিলে রয়েছে অনলাইন ডিজাইন স্টোর, আপনি আপনার তৈরি টেমপ্লেট সরাসরি পোস্ট করতে পারেন এই স্টোরে। ক্রেতা সেখান থেকে কিনে নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করিয়ে নিতে পারেন সহজেই।
এছাড়া রয়েছে রিয়্যাল টাইম ফিডব্যাক ও রেটিং সিস্টেম। এই ফ্রিল্যান্সিং জব সাইটের একটি ২৪x৭ কাস্টমার সাপোর্ট পরিষেবা রয়েছে, ফলে কোনও রকম সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব।
খরচ: ডিজাইন হিল ডিজাইনারদের থেকে কোনও রকম টাকা নেয় না।