অনলাইন থেকে আয়ের ১০ উপায়

অনলাইন থেকে আয়ের ১০ উপায়

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন নির্ভরতা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। করোনার মহামারিতে বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রায় ঘরবন্দি জীবন পার করলেও থেমে নেই প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম। অধিকাংশ কর্মকাণ্ড চলছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এতে খুলছে অনলাইনে আয়ের নতুন দুয়ার। অলস সময়কে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত আয় কিংবা প্রচলিত অফিস বাদ দিয়ে ঘরে বসে অধিক আয়ের জন্য অনেকেই খণ্ডকালীন ও ফুলটাইম কাজ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনলাইনে আয়ের বিভিন্ন মাধ্যমকে। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এ পথকে আরও মসৃণ করেছে।

অনলাইনে আয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কাজের সুযোগ দেয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। আপনার দক্ষতার তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে কাজ প্রদানের জন্য রয়েছে নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ঘণ্টায় পাঁচ থেকে এক শতাধিক ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে। ফ্রিল্যান্স কাজের অর্থ আনা কঠিন হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গেটওয়ে ও অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে অর্থ আনা যায়। আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, গুরু, ফাইভারআর, ওয়ার্কএনহায়ার, ফ্লেক্সজবস ডটকমের মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অনলাইনে আয়ের জনপ্রিয় মাধ্যম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এটি এমন একটি বিপণন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কে বহিরাগত ওয়েবসাইটের সূত্রে বা রেফারেন্সের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রি হলে বিক্রেতা সেই ওয়েবসাইট বা অ্যাকাউন্টকে লাভের নির্ধারিত অংশ কমিশন হিসেবে দিয়ে থাকেন। এর জন্য নিজস্ব ওয়েব পেজ বা ব্লগ প্রয়োজন হয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়ায় যখন আপনার সাইট থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা কোনো ক্রেতা কিনবেন, তখন থেকেই আপনি আয় পেতে থাকবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে গবেষণা, অ্যাকাউন্ট ও লিংক তৈরি, ওয়েবসাইট তৈরি, কন্টেন্ট তৈরি ও প্রমোশন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

গ্রাফিক্স ডিজাইন

অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্যতম ভালো একটি উপায়। গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজে যারা দক্ষ, তাদের জন্য রয়েছে অনেক সুযোগ। নকশায় রঙের সমন্বয় ও সৃজনশীল চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে আয় করতে পারেন বিপুল অর্থ। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনার ডিজাইন জমা দিন। সেটি বিক্রি হলে আয় শুরু হবে। একটি নকশা থেকে অনেক দিন পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। নিয়ত অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বাড়ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদা। এনভ্যাটো, ক্রিয়েটিভ মার্কেট, সেলফি, আকনভাইন্ডার, পিকফেয়ার, লাভলি, ফানটেরো, কানভা ডটকমের মতো মাধ্যমে আপনার নকশা বিক্রি করতে পারবেন।

ওয়েব কনটেন্ট

অনলাইনে আয়ের মাধ্যম হতে পারে আপনার নিজস্ব ওয়েব কনটেন্ট। এ জন্য প্রয়োজন নিজের ওয়েবসাইট। প্রয়োজন মতো ওয়েবসাইট তৈরি এবং কনটেন্ট আপ হলে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন মঞ্জুর হলে গুগলের বিজ্ঞাপন যখন আপনার সাইটে দেখানো শুরু হবে এবং তাতে ক্লিক পড়বে, তখন আয় শুরু হবে। ওয়েবসাইটে ট্রাফিক যত বেশি হবে, আয় তত বাড়বে।

অনলাইন টিউটর

অনলাইনে টিউটর এখন আর নতুন কিছু নয়। কোনো বিষয়ে যদি আপনি পারদর্শী হন তাহলে সেই বিষয়ে পাঠদান করে অনলাইনে আয় করতে পারেন। অনলাইন টিউটরদের এখন চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। যে কোনো স্থান থেকে সব বয়সী শিক্ষার্থীদের আপনি শিক্ষা দিতে পারবেন। দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য ভাষার শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনলাইন টিউশনি করা যায়। অনলাইন টিউশনির জন্য আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সেখানে সফল হলেই ওয়েবিনার পরিচালক হিসেবে অনলাইন সেশন পরিচালনার সুযোগ পাবেন। দক্ষতা যত বাড়বে, আয়ের পরিমাণও বাড়বে।

ইউটিউব

ইউটিউব আয়ের বিষয়ে এখন সবার জানা। ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি ও সৃজনশীল সম্পাদনার ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আয় করতে পারবেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করুন। চ্যানেলের ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। কোন ধরনের ভিডিও রাখবেন, তা নির্ধারণ করে ইউটিউবের নিয়ম অনুসরণ করুন। মানুষের আগ্রহের বিষয়ে মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের দেখার ওপর আপনার আয় নির্ভর করছে, তাই আকর্ষণীয় ও ভালো মানের ভিডিও আপলোড করুন। ব্লগ থেকে এটির পার্থক্য হলো কন্টেন্টের। আপনার আপলোডকৃত ভিডিওর ভিউয়ের হিসেবে গুগল থেকে অর্থ পাবেন।

সার্চ, রিভিউ ও জরিপ

অনলাইন সার্চ, রিভিও ও জরিপে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতে পারেন। অনলাইন সার্চ ও পণ্যের পর্যালোচনা লিখে অনেকেই আয় করছেন। অনেক ওয়েবসাইট জরিপে অংশ নিলে অর্থ প্রদান করে। অনেকে এসব কাজে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। কেননা অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাকিং তথ্য প্রদান করতে হয়। এ কাজের সত্যতার জন্য স্ক্যাম যাচাই-বাছাই করে নিয়ে কাজ করলে ঝুঁকি থাকে না।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে। অনলাইনে গ্রাহক টানতে সৃজনশীল আইডিয়া প্রয়োজন। লেখা, পোস্টার, ভিডিওসহ নানা কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ ও ভাইরাল করতে পারলে ভালো অর্থ আয় করা যায়।

ওয়েব ডিজাইন

অনলাইনে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা অনেক। প্রতিটি কাজের দ্বারা ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। অনেকে নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরির জন্যও ওয়েব ডিজাইনার খোঁজেন। নিজেদের ওয়েবসাইট খুলেও সেখান থেকেই ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। কোডিং ও ওয়েব ডিজাইন ওয়েবসাইট তৈরিতে প্রধান দুটি কাজ। ক্লায়েন্ট ও কাজের মানের ওপর ভিত্তি করে ডিজাইনারের আয় বাড়ে।

ডেটা এন্ট্রি

অনলাইনে আয়ের সহজ একটি উপায় হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও দ্রুতগতির টাইপিং দক্ষতায় এ কাজ অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে করতে পারবেন। সহজে কাজ পাওয়া ও দ্রুত অর্থ আয় করতে হলে কোনো একটি বিষয়ে অধিক পারদর্শী হতে হবে।

ব্লগিং

লেখালেখি অনেকের শখ। কিন্তু এই শখের বিষয়টিও আপনার আয়ের উৎস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্লগসাইট তৈরি করে ওয়ার্ডপ্রেস বা টম্বলার প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ব্লগ শুরু অথবা নিজে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে হয়; তাই এ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ব্লগ অপশনটা বেছে নিতে পারেন। ব্লগে বিজ্ঞাপন, ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল, পণ্যের পর্যালোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে আয় আসবে।

Sharing is caring!

Leave a Comment