সফল ফ্রিল্যান্সার নোমান
সজীব হোসাইন, রংপুর : ‘প্রথম অবস্থায় ব্যক্তিগত ইন্টারনেট ব্যবহারে সুবিধা না থাকায় সাইবার ক্যাফেতে বসে ইন্টারনেটে নানা ধরণের কাজ দেখতাম। ফটোশপ এবং ওয়েব সাইট ডিজাইনের কাজ দারুণ মজা লাগত। নিজে নিজেই কাজ করতে শুরু করলাম ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও দেখে। তখনো ভাবতে পারিনি এটা থেকে উপার্জন করা সম্ভব। একদিন পত্রিকায় আউটসোসিং সর্ম্পকে জানতে পারলাম। দেখে খুব ভালো লাগল, কারণ যেসব কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে তা আমি ইতোমধ্যে নিজে নিজেই শিখে নিয়েছি।’ এভাবেই নিজের সফলতার শুরুর গল্প বলছিলেন রংপুরের কারমাইকেল কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা সফল ফ্রিল্যান্সার আহসান উদ্দিন নোমান, যিনি কেবল নিজেই সফল নন; তার প্রতিষ্ঠিত কুইক টিমে কাজ করে স্বাবলম্বী প্রায় দুই শতাধিক তরুণ।
ধীরগতির ইন্টারনেট আর প্রযুক্তিগত নানা সমস্যা নিয়েই ২০১০ সালে মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু নোমানের। শত বাধা পেরিয়ে স্বপ্নবাজ এই তরুণের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মিলেছে ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’।
নোমান শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, স্বপ্ন দেখেন উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে। যারা এখনো নানা কারণে প্রযুক্তি জ্ঞান তথা আউটসোর্সিং জ্ঞানে অজ্ঞ। তিনি নিজে কাজ করতে গিয়ে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সে সব সমস্যায় যেন নতুনদের পড়তে না হয় তাই নিয়মিত স্বল্প খরচে প্রশিক্ষণ চালু রেখেছেন কুইক টিমের মাধ্যমে।
টিম নিয়ে কাজ করা সম্পর্কে নোমান বলেন, ‘শুরুর দিকে একাই কাজ করতাম। হঠাৎ একদিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্লায়েন্টের একটি বড় কাজের প্রস্তাব পাই। যার বাজেট ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। কিন্তু সেটা আমার একার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। কাজটিতে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনেক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেও সহযোগিতা পাইনি। তাই এখন টিমের মাধ্যমে কাজ করছি। এতে দ্রুত এবং অধিক কাজ করা সম্ভব হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার টিমের মাসিক আয় বর্তমানে প্রায় ২৫/৩০ হাজার ডলার। তবে ইন্টারনেটের গতি ও সুবিধা পর্যাপ্ত না হওয়ায় আয়ের বড় একটা অংশ ব্যয় হয় ইন্টারনেট বিল পরিশোধে।’ নোমানের অভিযোগ ঢাকার তুলনায় তিনগুণ টাকা বেশি দিয়ে তিনি রাজধানীর মতো দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পান না।’
তিনি আরও জানান, ‘যারা নিঃস্বার্থভাবে দেশে ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা দরকার এবং সেইসাথে সরকারকে অবশ্যই স্বীকৃতপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সার দিয়ে প্রকল্পগুলোকে সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং পরিচালনার ব্যাবস্থা করতে হবে।’
নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে নোমান দি প্রমিনেন্টকে বলেন, ‘দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আউটসোর্সিংয়ের মতো সম্ভবনাময় খ্যাতকে নতুন প্রজন্মের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করতে চাই।’
নতুনদের আউটসোর্সিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে নোমান বলেন, ‘নতুনরা দ্রুতই অর্থ উপার্জন করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু দ্রুতই আউটসোর্সিং থেকে ভালো কোনো ফল না পাওয়ায় তারা আউটসোর্সিং থেকে সরে দাঁড়ায়।’ তিনি আউটসোর্সিংয়ে সফলতার জন্য অনেক কষ্ট এবং দীর্ঘ সাধনা দরকার বলে মনে করেন।
রংপুর অঞ্চলের আউটসোর্সিংয়ের সম্ভবনা সম্পর্কে নোমান বলেন, ‘প্রযুক্তিগত চিন্তা-চেতনা, সঠিক দিক নির্দেশনা এবং সরকার যদি ইন্টারনেট গতি বাড়িয়ে ব্যয় কমায় তাহলে অবশ্যই রংপুর অঞ্চলের মানুষ আউটসোর্সিংয়ের মতো সম্ভবনাময় খ্যাতে আগ্রহ দেখাবে।’