“সাংবাদিকতা” পড়াশোনায় ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা কতটুকু!
- আবু রিফাত জাহান
সাংবাদিকতা শেখার এবং সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ৪ বছর আগে গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ধ্রুব ব্যানার্জী। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ থেকে স্নাতক পাশ করে, এখন দেশের মূলধারার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে সাংবাদিকতা করছেন। প্রতিনিয়ত তার করা সংবাদ ও উপস্থাপনা দর্শকদের নজর কাড়ছে। তারই সাথে তার সহপাঠী আফরিদা ইফরাত, কুদরাত ই খুদা হৃদয়, নিলয় বা অন্যান্যরাও মূলধারার সাংবাদিকতায় কর্মনিবেশ আছেন।
স্নাতক শেষে বসে নেই কেউ; মিডিয়া কিংবা যোগাযোগের পছন্দমত বিভিন্ন প্লাটফর্মে নিজেদের মেলে ধরেছেন বাকিরাও। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের অন্যান্য বিষয়ের মতো সাংবাদিকতা ও যোগাযোগের পড়াশোনা যে পরিমাণ আলো ছড়াচ্ছে কিংবা কর্মক্ষেত্রে এই বিষয়ের শিক্ষার্থীদের চাহিদা যে কোনো অংশেই কম নয়; এরপরে আর দ্বিধা থাকার অবকাশ নেই।
এটা তো গেল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতক পাশ করা একটি ব্যাচের তথ্যের জরিপ। দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিভাগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী কিংবা প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সাফল্য যথেষ্ট আশানুরুপ; এবং দিন-কে-দিন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে এই বিভাগ।
দেশের সুবিশাল ক্ষেত্র প্রিন্ট- ইলেকট্রনিক- অনলাইন-রেডিও মিডিয়ার সাংবাদিক, সম্পাদক, সহসম্পাদক, কলামিস্ট, উপস্থাপক, বার্তাকক্ষ নিয়ন্ত্রক, প্রযোজক ছাড়াও আরো নানাবিধ কর্মক্ষেত্রে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের সামনে। সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিভাগে পড়াশোনা করে গণসংযোগ, বিজ্ঞাপন এজেন্সি, ফিল্ম মেকিং, ব্যাংকিং ও শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ অনেক বেশি।
এতকিছুর পরেও সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগে পড়াশোনা নিয়ে এদেশের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সংশয় থেকেই যায়। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার কথা চিন্তা করাও কঠিন ছিল। সেই বহু আগের বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের এক বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের জিডিপি-তে মিডিয়ার প্রভাব দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৫ শতাংশ মিডিয়ার অবদান; যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও অনুসরণীয়। তাই বাংলাদেশেও এই সেক্টরের প্রতি বিশেষভাবে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। ফলে, সুযোগ বাড়ছে তরুণ প্রজন্মের জন্য যারা সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিভাগে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চান।
তবে, শুধু গতানুগতিক পড়াশোনাতেই সাংবাদিকতায় ভালো করা যায় না – এমনটিই মনে করেন এই বিষয়ের অভিজ্ঞজনেরা। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আফতাব হোসেন মনে করেন, “আমাদের এই বিষয়ের কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রম হওয়া উচিত অনেক বেশি ব্যবহারিক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারত অবস্থা থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করা উচিত, আর সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে নিজ ক্যাম্পাসের অসংখ্য কন্টেন্ট বা বিষয়। কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আলো ছড়াবে তখনই, যখন তাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর দক্ষতার জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করবে এবং সুচারুরুপে নির্দেশনা প্রদান করবে।”
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশের প্রায় সকল সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদেরই একজন আফরিদা ইফরাত হিমিকা মনে করেন, বর্তমান সাংবাদিকতা মূলত প্রযুক্তিনির্ভর এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাত্রা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ শিখে নিলে চাকরি পাওয়া নিয়ে কখনো সংশয়ে থাকতে হয় না। তাছাড়া শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা- কর্মজীবনের হাতে-খড়ি হিসেবে কাজ করে।
সাংবাদিকতা পড়াশোনা নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আছে, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে আগে এই বিষয়, এর সুযোগ, পাঠ্যক্রম ও প্রাক্তনদের সম্পর্কে জানতে হবে। শিক্ষা জীবন থেকেই হতে হবে ব্যবহারিক ও তত্ত্বীয় জ্ঞান আহরণে মনোযোগী; আর অভিভাবকদেরও সন্তানদের মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই সুস্থধারার গণমাধ্যমে বিচরণ করবে আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্ম।