বুয়েটের সেরা চার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
২০১১, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন যথাক্রমে আশরাফুল ইসলাম, নাফিস ইরতিজা, অনিক সরকার ও শোয়াইব আহমেদ। আগামী শনিবার আবার আসছে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা। ১৪ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে এক হয়েছিলেন গত চার সালের চার প্রথম। কে কীভাবে নিয়েছিলেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, এ নিয়েই কথা হলো।
আশরাফুল ইসলাম ও শোয়াইব আহমেদ পড়েছেন ঢাকার নটর ডেম কলেজে। নাফিস ইরতিজা ছিলেন ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র। ওদিকে অনিক সরকার এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে, পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজে। চারজনের মধ্যে একটা মিল—ভিন্ন ভিন্ন সালে হলেও চারজনই বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন।শোয়াইবের চোখে চশমা নেই। থাকলে আরও একটা মিল খুঁজে পাওয়া যেত!
যা হোক, চার মেধাবীর কাছে প্রথম প্রশ্ন—পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে কার কী হাল ছিল? শুরুতেই মুখ খুললেন ‘বড় ভাই’ আশিক। বলছিলেন, ‘এই সময়ে এসে নতুন করে কিছু না পড়াই ভালো। তাই আমি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শুরু থেকে যা পড়েছি, সেগুলোর মধ্যে কঠিন বিষয়গুলোই বারবার দেখে নিচ্ছিলাম।’ তাঁর কথার সঙ্গে অনিক যোগ করলেন, ‘আমি বিগত বছরের প্রশ্নগুলোতে শেষ মুহূর্তে চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম। প্রশ্ন কী রকম আসবে, উত্তর কী রকম হবে, কত সময়ের মধ্যে কতটুকু উত্তর করব—এসব নিয়ে নিজে থেকে একটা ধারণা তৈরি করে রাখছিলাম।’
এ তো গেল এক সপ্তাহ আগের কথা। আর আগের রাত? ভয়কে জয় করতে তাঁরা কী মন্ত্র জপছিলেন? হেসে নাফিস ইরতিজার উত্তর, ‘ভয় পাওয়ার কী আছে? মনে করতে হবে, বিভিন্ন জায়গায় আমরা যে রকম মডেল টেস্ট দিই, ঠিক সে রকম আরেকটা পরীক্ষা। আমি আগের রাতে সব অধ্যায়ের সূত্রগুলোতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম।’ এবার কথা জুড়ে দিলেন ‘ছোট ভাই’ শোয়াইব, ‘কিছু অধ্যায় থেকে বুয়েটে সব সময় প্রশ্ন আসেই। আমি সেই অধ্যায়গুলোর ওপর জোর দিয়েছিলাম।’
আশরাফুল ইসলাম মনে করিয়ে দিলেন, ‘এবার বুয়েট পরীক্ষার আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের পরীক্ষা আছে। আমাদের সময় এ রকম পরপর দুই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের পরীক্ষা হয়েছিল। আমার কাছে এটা সুবিধাই মনে হয়েছিল। আলাদা প্রস্তুতি নেওয়া লাগেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ভালো হয়েছিল বলে বুয়েটের জন্য আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছিল।’ উল্টো দিকটাও তুলে ধরলেন নাফিস, ‘হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা খারাপ হলে বুয়েট পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তরভিত্তিক। যেখানে এখন বুয়েটের পরীক্ষায় কোনো নৈর্ব্যক্তিক থাকে না। সুতরাং ক ইউনিটের পরীক্ষা খারাপ হলেও মন খারাপ করার কিছু নেই। পরদিনের জন্য ভালোমতো প্রস্তুতি নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’ এবার একটু অন্য রকম প্রসঙ্গ। কত নম্বর পেলে বুয়েটে চান্স পাওয়া যাবে বা কতটি প্রশ্নের উত্তর করা জরুরি? শোয়াইব জবাব দিলেন একটু রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে, ‘বুয়েটে কখনো নম্বর প্রকাশিত হয় না। তাই এটা আসলে জানা সম্ভবও নয়। প্রশ্নের ওপরও নির্ভর করে। প্রশ্ন সহজ হলে অবশ্যই ভালোমতো উত্তর করে আসা উচিত।’
কথায় কথায় জানালেন, চারজনের প্রত্যেকেই কমবেশি দু-একটি বাদে সব প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলেন। ‘প্রচলিত আছে, উত্তর পুরোপুরি ঠিক না হলেও বুয়েটের পরীক্ষায় আংশিক নম্বর দেওয়া হয়। যদিও সেটা নিশ্চিত নয়। যেহেতু কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই, সব কটি প্রশ্নেরই উত্তর করে আসার চেষ্টা করা উচিত,’ বললেন অনিক।
২০১১ সালের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আশরাফুল মনে করেন, পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনিক সরকার একটু যোগ করলেন, ‘প্রশ্ন দেখে সহজ মনে করে উত্তর শুরু করলেও দেখা যাবে, মাঝপথে গিয়ে আর মিলছে না। তাই বলে নার্ভাস না হয়ে মনে রাখতে হবে, ৬০টি প্রশ্ন। দু-চারটা আটকে গেলেও বসে না থেকে বাকিগুলো উত্তর করতে হবে।’ নাফিস বললেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। একদম প্রথম প্রশ্নটাই তিনি পারছিলেন না। তাই বলে সময় নষ্ট করেননি। বাকিগুলোর উত্তর লিখেছেন। আশিক বললেন, পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর প্রস্তুতি ভালো ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় বসে দেখলেন, পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নগুলোই কঠিন এসেছে। তাই পদার্থবিজ্ঞান রেখে আগে গণিতের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখেছেন।
সবশেষে এবারের পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি করে পরামর্শ চাওয়া হলো চার প্রথমের কাছে।
আশরাফুল বললেন, ‘শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু পড়া উচিত নয়।’ নাফিসের ভাষ্য, ‘মাথায় রেখো, এটা আর পাঁচটা সাধারণ পরীক্ষার মতো। নার্ভাস হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ অনিক বললেন, ‘বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে সময় ভাগ করে নিয়ে রাখলে ভালো।’ সবশেষে বললেন শোয়াইব, ‘পরীক্ষার তিন ঘণ্টাই আসল। যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে।’
দেখতে দেখতে সময় শেষ হয়ে এল। চারজন আগে কখনো এভাবে একত্র হননি। আড্ডা তো নয়ই। তবে মুহূর্তটি কেন বন্দী করে রাখা নয়? আশরাফুল তাই মুঠোফোন বের করে দাঁড়িয়ে গেলেন, সেলফি দিয়েই শেষ হোক এই আড্ডা।
ও হ্যাঁ! এবারের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানাতেও ভোলেননি তাঁরা।
এক নজরে বুয়েট-ভর্তি পরীক্ষা ২০১৬
পরীক্ষা দেবে: ৯১৫৭ জন
মোট আসনসংখ্যা: ১০৮৫
ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২২ অক্টোবর, শনিবার
পরীক্ষার সময়: ৩ ঘণ্টা
মোট নম্বর: ৬০০