ট্যুরিজমে পড়ে কাউকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না : মাহবুব পারভেজ

ট্যুরিজমে পড়ে কাউকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না : মাহবুব পারভেজ

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর হচ্ছে পর্যটন। প্রতিনিয়ত এই খাতে কাজের সুযোগ বাড়ছে।ফলে,বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণদের পড়ালেখার অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন বিষয় এখন টুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এই বিষয়ের উপর চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুব পারভেজ। সম্প্রতি দি প্রমিনেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাকারে তিনি ট্যুরিজমে পড়ার বিষয়ে এবং বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে কথা বলেন। আজ পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রবিউল কমল


11898599_10206393271062340_4026307742558530780_nপ্রমিনেন্ট : ট্যুরিজম নিয়ে তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আছে। তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন ড্যাফোডিলে ভর্তি হবেন?

মাহবুব পারভেজ : এটা খুব ভালো একটি প্রশ্ন। শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলে ভর্তি হবেন কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের সেরাটাই দিয়ে থাকি। তাছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের কারিকুলামে বেশ তফাৎ আছে। এখানে শুধু পড়ানো হয় না একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। আর সেজন্য যা করার দরকার আমরা তার সবটুকুই করে থাকি।

প্রমিনেন্ট : অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনাদের তফাৎ কোথায়?

মাহবুব পারভেজ : আমরা আসলে চার বছরের পুরো কারিকুলামকে চারটা সেগমেন্টে ভাগ করেছি। যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে আছে বলে আমার জানা নেই। সেগমেন্টগুলো হলো- রেগুলার, ইভেন্ট, ল্যাব এবং কো-কারিকুলাম। রেগুলার সেগমেন্টের আওতায় আছে ট্যুর, ট্রি-প্ল্যানটেশন, তৃতীয় কোনো ভাষা শেখানো (ফ্রাঞ্চ বা স্প্যানিশ ভাষা) এবং অবশ্যই কোর্স সমুহ। ইভেন্টের মধ্যে আমরা বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং সেমিনার এর আয়োজন করি এবং এখানে দেশের ও দেশের বাইরের এক্সপার্টরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন ট্যাুরিজম বিষয়ে।আমাদের নিজস্ব প্রফেশনাল হাউজ কিপিং, সারভিস এবং প্রডাকশন (কিচেন ) ল্যাব আছে যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নেই। প্রফেশনাল বলছি এই কারনে যে এই হাউজ কিপিং ল্যাবে সত্যিকার অর্থে দেশের বাহিরের অতিথিরা অবস্থান করেন, কিচেন ল্যাবে ইউনিভার্সিটির যাবতীয় অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার উপাদান তৈরী হয় যাতে ট্যুরিজম বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ গ্রহন করে। এছাড়াও দ্বিতীয় বছরের শেষে ছেলে মেয়েরা চার মাসের জন্য অংশগ্রহন করে অন-এডুকেশন ট্রেনিং এ, যেখানে তারা বাংলাদেশের যে কোন পাচঁ/ তিন তারকা হোটেল, ক্লাব, রির্সোট, ট্টান্সর্পোট অথবা ট্রাভেল এজেন্সিতে হাতে কলমে কাজ শেখে।  কো-কারকুলামের মধ্যে আছে কালচারাল প্রোগ্রাম, ডিবেট, খেলাধূলা এবং অডিও-ভিজ্যূয়াল প্রেজেন্টেশন। আছে বিভাগের নিজস্ব ফুটবল এবং ক্রিকেট টিম, ডিবেট এক্সপার্ট, গায়ক যারা বিশ্ববিদ্যালকে রিপ্রেজেন্ট করছে।

13781783_10154422421582203_2336423743690053788_nপ্রমিনেন্ট : কোনো শিক্ষার্থী যদি ড্যাফোডিলে এই বিষয়ে পড়তে আগ্র্রহী হয় তাহলে তার খরচ কেমন হতে পারে?

মাহবুব পারভেজ : এখানের টোটাল কোর্স ফি ৪ লাখ ৯০০০০ টাকা। তবে একাডেমিক রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ৫০% পর্যন্ত ওয়েভারের ব্যবস্থা আছে।

প্রমিনেন্ট : এই বিষযে পড়ানোর ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়?

মাহবুব পারভেজ : পর্যটন এবং বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবস্থপনার বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ এটি একটি সেবামুলক পেশা।

প্রমিনেন্ট : এই বিষয়ের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন?

মাহবুব পারভেজ : বর্তমানে এই খাতে প্রায় ৪৮০০০ জব খালি আছে। তাছাড়া এই খাতে দক্ষ লোক একেবারে নেই বললেই চলে। ২০২২ সালের মধ্যে পর্যটন খাতে ১০ লক্ষ দক্ষ লোকের প্রয়োজন হবে। তাই আমি মনে করি এই বিষয়ে পড়ার পরে কাউকে ক্যারিয়ার ভাবতে হবে না।

13342953_10154320745737203_7776820593107001705_nপ্রমিনেন্ট : বাংলাদেশ কেন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় দেশ হতে পারে?

মাহবুব পারভেজ : বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনাময়ী দেশ। এদেশে ছড়িয়ে আছে অপরিমেয় সৌন্দর্য। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যিক সব সম্পদেই সমৃদ্ধ। এ কারণে যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকদের কাছে চির সবুজ ঘেরা বাংলাদেশ এক স্বপ্নের দেশ হিসেবে বিবেচিত। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এদেশে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু।

প্রমিনেন্ট : বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে কেন?

মাহবুব পারভেজ : পর্যটন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। কিন্তু আমাদের দেশে যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে, সে সব স্থানের পরিচিতি যদি যথাযথ ভাবে প্রচার করা হয় না। তাই আমার দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। তাছাড়া নিরাপত্তা এবং যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই।

প্রমিনেন্ট : কোন স্থানগুলোর প্রচারণার দরকার আছে বলে আপনি মনে করেন?

মাহবুব পারভেজ : আমার মনে হয়  চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত, ফয়েজ লেক, পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই লেক, শুভলং ঝর্ণা, নেভি ক্যাম্প, পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাতীয় উদ্যান, চাকমা রাজবাড়ি, খুলনার সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, নওগাঁর সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, বাঘা মসজিদ, মহাস্থানগড়, রংপুরের রামসাগর, সিলেটের জাফলং ও চা বাগান, কুমিল্লার ময়নামতি, বান্দরবানের নাফাখুম ও অমিয়খুম জলপ্রপাত এবং মাধবকুন্ড জলপ্রপাতসহ  বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ, পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা, লেক এগুলোর প্রচারণা করার দরকার। তাহলে আমাদের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে।

13892116_10154482701362203_6118417310210947877_nপ্রমিনেন্ট : বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশে আসতে চান না। আমরা কীভাবে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারি?

মাহবুব পারভেজ : বিদেশি পর্যটকরা আসতে চান না এটা সঠিক নয়। আমাদের দেশে প্রচুর বিদেশি পর্যটক আসতে চান। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আমাদের ট্রান্সপোর্টো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আবাসিক সুবিধা তেমন ভালো না। আমরা যদি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি তাহলে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি পর্যটক আসবেন। যা আামাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

প্রমিনেন্ট : আমরা জানি পর্যটন খাতে আমাদের জিডিপির হার মাত্র ৩%, এই হার কি বাড়ানো সম্ভব?

মাহবুব পারভেজ : অবশ্যই সম্ভব। আমারা যদি এই খাতে আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারি তাহলে পর্যটন খাতে আমাদের জিডিপির হার হবে ১৫%।

প্রমিনেন্ট : পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। যা বাংলাদেশে অবস্থিত। আমরা কীভাবে কক্সবাজারকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করতে পারি?

13315600_10154320746352203_7398507315630963769_nমাহবুব পারভেজ : কক্সবাজারে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর।  প্রকৃতি তার উদারহস্তে ঢেলে সাজিয়েছে এই অঞ্চলকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বে সৌন্দর্যের মুকুট ধারণ করতে পারে কক্সবাজার। আমরা থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্রসৈকতে দেখি, সেখানে সব সময় পর্যটকদের ভিড়। এটি সম্ভব হয়েছে সেখানে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। পুরো এলাকায় পর্যটকবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়ে আছে। আর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনা করায় তা সম্ভব হয়েছে। এই সৈকত নেটিং দিয়ে ঘেরাও করা রাখা হয়েছে। যাতে স্নান করতে গিয়ে কেউ প্রাণ না হারায়। কিন্তু আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্নান করতে গিয়ে প্রতিবছর মূল্যবান প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। সৈকতে স্নান করার জন্য তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। আমরা বলছি না, ১২০ কিলোমিটার সৈকতকে নেটিংয়ের আওতায় আনতে হবে। যেখানে পর্যটকদের বিচরণ বেশি, সেখানেই নেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক। যাতে আর কোনো প্রাণ না ঝরে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কক্সবাজার শহরের যানজট নিরসনে প্রধান সড়কটি প্রশস্ত করতে হবে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড তৈরি করা প্রয়োজন। এখানে সাগরতলের বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগৎকে তুলে ধরা হবে। কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা যায়।

প্রমিনেন্ট : পর্যটন স্থানসমূহকে আকর্ষণীয় করতে আপনার পরামর্শ…

মাহবুব পারভেজ : পর্যটন স্হান সমুহকে আরো আকর্ষনীয় করতে বিনোদন উপকরন যোগ করা যেতে পারে, যেমন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং, আন্ডার ওয়াটার ওয়াকিং, ওয়াটার স্কি, প্যারাসুট গ্লাইডিং ইত্যাদি।

প্রমিনেন্ট : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

মাহবুব পারভেজ : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং দি প্রমিনেন্টের জন্য শুভ কামনা। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment