ছোট্ট টেকনিকে দারুণ প্রস্তুতি
- শেখ এহসান সৌরভ
বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে আপনাকে এটার পেছনে সময় দিতে হবে। আপনি সময় না দিলে যত্ই মেধাবী হন ৩ ধাপের যেকোনো একটিতে আটকে যাবেন। কিন্তু সময় টা দিতে হবে কিছু শর্ত মেনে। যেমন আপনি বিসিএস এর জন্য চাকরী ছেড়ে দিলেন কিন্তু পড়বেন পড়বেন করে পড়া হচ্ছে না। আবার অনেকে পড়তে বসেন কিন্তু বেশীক্ষন টিকে থাকা হয়না !! আসলে এই বয়সে টানা পড়ালেখা করাটাও অনেক কষ্টকর।
৩৫ তম বিসিএস দিতে গিয়ে আমি এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমি খুব তাড়াতাড়ি পড়তে পারতাম কিন্তু বেশীক্ষণ বসে পড়তে পারতাম না। POMODORO একটি জাপানী টেকনিক যেটা দু ধরনের কাজ করে:
১। অনেক বেশী কাজ বা পড়ার চাপ থাকলে তা ভাগ করে কমিয়ে দেয়।
২। কম সময়ে অনেক বেশী কাজ করতে সাহায্য করে যার মানে কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
এখন আসি এটা কিভাবে কাজ করে? এবং বিসিএস এ এটা কিভাবে হেল্পফুল হতে পারে?
এটা হেল্পফুল হবে কি হবেনা তা নির্ভর করে আপনার উপর। একেকজনের পড়ার টাইম , টেকনিক একেকরকম। তবে যারা দিশকুল খুজে পাচ্ছেন না তারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
এই সিস্টেমের ৬ টি ধাপ আছে। সবগুলোই অনুসরন করতে হবে না তবে আমি যতটুক পারি বিসিএস প্রিপারেশান এর সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করছি। আমার ক্ষেত্রে আমি যেভাবে ব্যবহার করেছিলাম। আর আমার ক্ষেত্রে ভালো কাজেও দিয়েছে।
ধাপ : ১ (সিলেবাস ভাগ)
এখানে আপনাকে পুরো কাজ বা সিলেবাসকে ভাগ করে নিতে হবে। যদিও ২৫ মিনিট করে এক একটা পোমোডোরো এর কথা বলা হয়েছে কিন্ত বিসিএস এর সিলেবাস টা বিশাল ২৫ মিনিট এ তেমন কিছুই পড়া যায় না তাই আমি নিজের ক্ষেত্রে একটানা ৪৫ মিনিট পড়ার প্ল্যান করেছিলাম। যেমন ৩৫ রিটেনের পুরো সিলেবাস টিকে আমি ভাগ করেছিলাম ৩৮০ টি পোমোডোরো তে। প্রতিটি ৪৫ মিনিট করে। সিলেবাস ধরে টপিক অনুযায়ী কত সময় লাগতে পারে সেটার একটা অনুমান। যেমন – বাংলা সাহিত্য প্রাচীন যুগ এ ৫ টা পোমোডোরো, মধ্যযুগটা একটু বড় ৮–১০ টা এভাবে। তবে তার আগে কোন টপিক টা কোন বই থেকে পড়বেন সেটা গুছিয়ে নিতে পারলে ভালো। প্রস্তুতিটাকে ৩ ভাগে ভাগ করে নিন: রিসোর্স কালেকশান, প্ল্যানিং আর ডুয়িং। পোমোডোরো টা হলো প্ল্যানিং তার আগে কি কি ধরনের বই কিনতে হবে কিনে ফেলে কোন বই থেকে কতটুক কি পড়বেন ঠিক করে ফেলুন। এতে কিভাবে শুরু করবেন তা জানার সাথে সাথে কিভাবে শেষ করবেন তাও জানা হয়ে যাবে । এটা আপনার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিবে বহুগুন।
ধাপ : ২
ধরুন আপনি মোটামুটি একটা প্ল্যান করে ফেলেছেন যে সিলেবাস শেষ করতে আপনার ৩০০ টি পোমোডোরো লাগবে। আর আপনার দিন আছে ৩০। তাহলে সহজেই বুঝতে পারছেন আপনাকে দিনে ১০ টি ভাগ শেষ করতে হবে। এখন এই ১০ টি ভাগ দিবেন কিভাবে। প্রথমেই আপনার সারাদিনের ব্যস্ততা অনুযায়ী ভাগ করে ফেলুন আপনি সকাল, দুপুর, রাতে মেক্সিমাম কতক্ষন পড়তে পারবেন। তা অনুযায়ী ভাগ করে নিন আপনার প্রতিদিনের পড়ার টারগেট। কথা হচ্ছে ৪৫ মিনিট করে কি টানা পড়তেই থাকবেন? না তাহলে তো আর ইফেক্টিভ হলনা। পোমোডোরো টেকনিকের মুল কথায় হলো এফিসিয়েন্সি এবং ইফেক্টিভনেস। প্রতি ৪৫ মিনিট পর একটা ৫ মিনিটের রিভিউ থাকবে। ৪৫ মিনিট শেষ হলে পড়া যেখানে আছে থামিয়ে ফেলুন। গত ৪৫ মিনিটে যা পড়েছেন ৫ মিনিটে চোখ বুলিয়ে নিন। তারপর ১০ মিনিট ব্রেক। এই ১০ মিনিটে কি করবেন আর কি করবেন না তা ধাপ ৩ এ বলছি।
ধাপ : ৩
যে ৪৫ মিনিট আপনি পড়বেন ততক্ষন distracting material গুলো দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। যেমন: মোবাইল, ডাটা কানেকশান কিনবা ল্যাপ্টপ। সব সাইলেন্ট মুডে থাকবে এবং দূরে। ৪৫ মিনিট পর আপনি ৫ মিনিট রিভিউ করবেন। তারপর ১০ মিনিট আপনি আপনার ম্যাসেজ, কিনবা কল চেক করে কথা বলে নিতে পারেন। এই ১০ মিনিট আপনি যেকোন কিছু করতে পারেন যা আপনাকে রিফ্রেশ করবে। তবে দীর্ঘস্থায়ী কিছু করা যাবে না যেমন মুভি দেখা , বা এমন কাউকে কল দেয়া যার সাথে ঘন্টা খানেক কথা না বললে হয় না । গান শুনতে পারেন, বন্ধুর সাথে কথা বলতে পারেন, কিছু খেয়ে নিতে পারেন। কারণ মানুষ একটানা যেমন কাজ করতে পারেনা তেমনি অনেকক্ষন বিরতি নিলে আপনার মনোযোগ উঠে যেতে পারে।
এভাবে ৪ টি পোমোডোরো নেয়ার পর আপনি ১০ মিনিটের জায়গায় একটি বড় ন্যাপ নিতে পারেন। ১ বা ২ ঘন্টার। এই সময়ে আপনি উপরে যে কাজ গুলো করতে নিষেধ করা হয়েছে তার সবকিছু করতে পারেন, ঘুম ও দিতে পারেন, বাইরে থেকে ঘুরেও আসতে পারেন।
এভাবে যেকোন একদিন রিসোর্স কালেকশান করে , প্ল্যান করে পড়ে দেখুন। আপনার ক্ষেত্রে কাজটি কতটুকু সফলতা দিচ্ছে। দেখবেন আপনি এক ঘন্টায় যা পড়তে পারতেন তার তুলনায় অনেক বেশী পড়তে পারছেন, আপনি যতটুক মনে রাখতে পারতেন তার চেয়ে অনেক বেশী মনে রাখতেও পারছেন। ১০–১২ টা পোমোডোরো দিয়ে দেখুন একদিনে অনেক কিছু পড়া হয়ে যাবে। একঘেয়েমীও লাগবে না।
আরও বিস্তারিত কিছু জানতে চাইলে ইউটিউব বা গুগল করে জেনে নিতে পারেন। POMODORO technique দিয়ে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে।