গন্তব্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
- ক্যারিয়ারে ডেস্ক
দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৫টি। আসন সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯৯২-২০১১ দুই দশকে অনুমোদন পায় ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১২-১৬ পাঁচ বছরেই অনুমোদন পেয়েছে ৪৩টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এইচএসসি পরীক্ষা পাসের পর প্রায় সব শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে মাত্র ৫০ হাজার। বাকি শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সরকারি নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পরবর্তীতে এর দায় শিক্ষার্থীদের কাঁধে পড়ার কারণে বিপাকে পড়তে হয়। আবার সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে অবকাঠামো ও অন্যান্য উপকরণের অভাবও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন না মানার কারণে চাইলে সরকার যে কোনো সময় বন্ধও করে দিতে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে।
এতসব শঙ্কার মধ্যেও আলো ছড়াচ্ছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তির জন্য ভর্তিযুদ্ধ হয়। সুপারিশও আসে নানা দিক থেকে। আবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকটের কারণে বাধ্য হয়েও ভর্তি হতে হয় অনেককে। সেশনজট না থাকায় এখন অনেক শিক্ষার্থীর পছন্দও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু সীমিত আসন আর লক্ষ শিক্ষার্থীর কারণে হয়তো সে সুযোগটি সবার হয়ে ওঠে না। কিন্তু এইবলে হতাশ হলে চলবে না। নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নিজের স্বপ্ন নিয়ে। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি অনেক ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষার একটি বড় অংশ পড়াশোনা করছে।
যে কারণে আগ্রহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট, দিনের পর দিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া পছন্দমতো বিষয় বেছে নিতে পারায় অনেকেরই প্রথম পছন্দ এসব বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার একটি বড় অংশ ভর্তি হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারই এখন ছেলেমেয়েদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। এতে খরচটা বেশি হলেও সময় লাগছে কম। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম টিউশনি ফিতেও পড়াশোনা করতে যাচ্ছে।
রয়েছে নানান সুবিধা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। আইন অনুযায়ী, মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ভর্তি করানোর সুবিধা। এর মধ্যে ৩ শতাংশ থাকবে দরিদ্র পরিবারের ও বাকি ৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভালো ফলাফলের বা সিজিপির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃত্তি ও মোট কোর্স ফির মধ্যে একটি ছাড় দিয়ে থাকে।
আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে কম টিউশনি ফি নেওয়া হয়। এসএসসি ও এইচএসসি ফলের ওপরও রয়েছে নানা রকমের ছাড়।
ভর্তি হওয়ার আগে হতে হবে সচেতন
বাংলাদেশে ভালো ও নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত ঠকাচ্ছে যার কারণে এতগুলো অর্থ নষ্ট না করার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। আবার বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে সরকার এই সেশন থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করে দিয়েছে সেগুলো সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হলে পরে ঝামেলায় পড়তে হবে না। ভর্তির আগে খোঁজ নিতে হবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়েছে কি না কিংবা কালো তালিকাভুক্ত কি না, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকলেও তাদের পরিচালিত অনেক কোর্সের অনুমোদন থাকে না, এ বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঢাকার বাইরের শাখার অনুমোদন নেই কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই, নিশ্চিত হতে হবে পড়াশোনার মানের বিষয়ের দিকটিও। পছন্দেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি কেমন, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা আছে কি না। বিষয় নির্বাচনেও সতর্ক হতে হবে, যে বিষয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে সে বিষয়ের চাহিদা আছে কি না এবং জানতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বিষয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক আছেন কি না।
বছরে রয়েছে তিনবার ভর্তির সুযোগ
বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ম্প্রিং, সামার ও ফল। সাধারণত এ তিন সেমিস্টারে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্প্রিং’-এর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এপ্রিল-মে মাসে ‘সামার’ ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ‘ফল’ সেশনে ভর্তি প্রক্রিয়া। এছাড়া ‘উইন্টার’ ও ‘অটাম’ সেশনেও ভর্তিরও সুযোগ দেয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে ভর্তি কার্যক্রম। ভর্তি ফরম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাডমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে পাসপোর্ট আকারের ছবি যুক্ত করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি ও এইচএসসির সব সনদ, নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি, প্রশংসাপত্র ও আবেদন ফি জমার রসিদ।
উচ্চ শিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ১৯৯২ সালে। ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের প্রয়োজনে এই সংখ্যা এখন ৮৩টি। অনুমোদনে অপেক্ষায় আছে আরো কয়েক ডজন। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন আইন করা হয়।
ভর্তির যোগ্যতা
বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ (চতুর্থ বিষয় বাদে) চাওয়া হয়। জিপিএ-২.৫০ থাকলেও আবেদন করা যায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘ও’ লেভেলে চারটি বিষয়ে জিপিএ-৩.০০ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে দুটি বিষয়ে জিপিএ-৩.০০ চাওয়া হয়। এই যোগ্যতাগুলো থাকার পরও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসির ফল- এ দুটোর সমন্বয়ে মেধাতালিকা করা হয়। নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রস্তুতিটা ভালো থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সেই সঙ্গে গণিতেও ভালো করতে হবে।