ইন্স্যুরেন্স শিল্পে স্বাগতম !
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ইন্স্যুরেন্স শিল্পে এক সময় মানুষ বাঁকা চোখে তাকালেও এখন সেই দৃষ্টি অনেকটাই বদলে গেছে! এই পেশায় এখন অনেক তরুণ যুক্ত হচ্ছেন। নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে ইন্স্যুরেন্স শিল্পে কাজের পরিধি বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বাড়ছে উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিধি। ঝুঁকি মোকাবেলায় মানুষও অবলম্বন চায়। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের চাহিদা বুঝে নতুন নতুন পলিসির প্রচলন ঘটায়। এই পলিসি লুফে নেন গ্রাহক। বছর কয়েক আগেও দেশে বীমা শিল্প শুধুই প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে। আর এখানে রয়েছে তারুণ্যের জয়জয়কার। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা সমানতালে কাজ করছেন এ শিল্পে। আপনাকেও স্বাগতম!
যোগ্যতা
বীমা প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যে কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। তবে বর্তমানে চাকরির বাজারে এই পদে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। বীমা প্রতিনিধি পদে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যে কোনো ব্যক্তিকেই পরিশ্রমী হতে হয়। পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ ঘটিয়েই এ শিল্পে সফল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচয় করানো সম্ভব। ধৈর্যশক্তি ও কাজের প্রতি অঙ্গীকারবোধ এ পেশায় একজন ব্যক্তির মূল পাথেয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রশিক্ষণ
একজন ব্যক্তিকে যোগ্য বীমা প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিগুলো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে। প্রথমেই একজন বীমা প্রতিনিধিকে কোম্পানি ৩-৭ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়। এই ট্রেনিংয়ে ব্যক্তিগত গুণাবলি এবং কোম্পানির বিভিন্ন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত শেখানো হয়। ফলে এ পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করতে যে কোনো ব্যক্তিই সক্ষম।
কাজের ক্ষেত্র
দেশে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স- এ দুই ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। জেনারেল ইন্স্যুরেন্স মূলত গ্রহণ করে থাকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যক্তির জন্য হয়ে থাকে। ক্লায়েন্টের দক্ষতা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি বিভিন্ন স্কিম রয়েছে এসব ইন্স্যুরেন্স পলিসিতে। এ ক্ষেত্রে বীমা প্রতিনিধি তার ক্লায়েন্টের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে কোম্পানি প্রদত্ত বিভিন্ন পলিসি উপস্থাপন করেন। পলিসি গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম প্রদান পর্যন্ত সব কাজই একজন বীমা প্রতিনিধিকে করতে হয়। বীমার পলিসি গ্রহণ করানোর সঙ্গে সঙ্গে বীমা প্রতিনিধির টার্গেটের হিসাব শুরু হয়। ফলে একজন বীমা প্রতিনিধি সারা মাসে নিশ্চিতভাবেই তার টার্গেট পূরণ করতে পারেন।
কাজের পদ্ধতি
এখানে কাজের সময় সাধারণত সরকারি নিয়মানুযায়ী সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে সত্যিকার অর্থে এই সেক্টরে কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। বীমা প্রতিনিধি হিসেবে কাজের পদ্ধতি অনেকটা স্বাধীন ব্যবসার মতো। একজন বীমা প্রতিনিধিকে কোম্পানির সময়ানুযায়ী সকালে অবশ্যই হাজিরা দিতে হয়। সেখানে প্রতিদিন এক ঘণ্টার ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়। আগের দিনের কাজের হিসাব, সাফল্য-ব্যর্থতা এ প্রোগ্রামের মাধ্যমেই নির্ণয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো কাজে ব্যর্থ হলে কীভাবে তাতে সাফল্য আনা যাবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা নিতেও নির্দেশনা পাওয়া যায় ঊর্ধ্বতনদের কাছ থেকে।
প্রতিদিন সকালের মিটিংকে এ পেশার সাফল্যের অন্যতম সহায়ক মনে করা হয়। মিটিং শেষ করে বীমাকারী তার পরিকল্পনামাফিক ক্লায়েন্টদের তালিকা অনুযায়ী আউটডোর ওয়ার্কে বেরিয়ে পড়েন। মূলত সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগের মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করা থাকে। তবে প্রতিদিন এমনভাবে সবার কাছ থেকে সাক্ষাতের অনুমতি নেওয়া হয়, যেন একজন বীমা প্রতিনিধি একদিনে ৮-১০ জন ক্লায়েন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। সারাদিন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের পর বিকেলে কোম্পানিতে হাজিরা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কিছু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। এ ক্ষেত্রে একজন বীমা প্রতিনিধি কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বাধীন!
আয়-রোজগার
এ পেশায় নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। মূলত টার্গেট ওরিয়েন্টেড জব হিসেবে একজন ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে কাজ করেন। চাকরিতে প্রবেশের পর তাকে মাসে সুনির্দিষ্ট ইন্স্যুরেন্স পলিসি করানোর টার্গেট দেওয়া হয়। তবে এই টার্গেট অবশ্যই প্রার্থীর যোগ্যতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়। ফলে যে কেউ মাস শেষে তার কাঙ্ক্ষিত টার্গেট পূরণ করতে সক্ষম হন। কোম্পানিভেদে তাই ২০-২৫ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে এ পেশায়। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এ আয় হতে পারে ৩৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া জীবন বীমা করপোরেশনের এজেন্ট থেকে ডেভেলপমেন্ট অফিসার হলে সরকারি বেতন স্কেলে মাসিক বেতন পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে কমিশনও।
ব্যাপক বিস্তার
বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স অতিবর্ধনশীল শিল্প হিসেবে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবন বীমার পাশাপাশি বাড়ি-গাড়িসহ অসংখ্য বীমা যুক্ত হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রায়। ফলে পরিশ্রম ও ধৈর্যের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তিই তার কর্মজীবন বীমা প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করতে পারেন।