মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আধুনিক বিশ্বের তরুণদের কাছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বহুল কাক্সিক্ষত ও স্মার্ট পেশা হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে এর পরিচিতি এবং কাজের ক্ষেত্র কিছুদিন আগেও একেবারে নাজুক ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি এখন পেশাজীবী ও তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক পরিচিত ও আগ্রহের হয়ে উঠেছে। শুরুতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীর কর্মক্ষমতা যথাযথ ব্যবহারের উদ্দেশে মানবসম্পদ বিভাগের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কেন না, একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওপর। ছোট-বড় প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যেমন একটি অ্যাকাউন্টস সেকশন থাকে তেমনি কর্মীদের কর্মদক্ষতা যাচাই- মানোন্নয়ন ও পারফরমেন্স মূল্যায়নে একটি মানবসম্পদ বিভাগ কাজ করে। এখানে বিভিন্ন পদে চৌকস, কর্মঠ ও উচ্চ শিক্ষিত লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। তাই স্মার্ট ও মেধাবী তরুণদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পেশায় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
দেশ-বিদেশের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া হাউস, পোশাক শিল্প, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানবসম্পদ বিভাগে এখন বেশি বেশি জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো মানবসম্পদ বিভাগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় এই সেক্টরে কর্মসংস্থান বাড়ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রেও এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।
ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রদের অনেক আগে থেকেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কোর্স পড়ানো হয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের প্রবল আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ বিভাগ খুলে আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। পেশাজীবীদের ঝোঁক থাকায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রফেশনাল মাস্টার্স পড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনেও এ বিষয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এ কোর্সের পরিচালক অধ্যাপক এমএ আক্কাসের কাছে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাই। অধ্যাপক ড. ফারুক আহমদ ও ড. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে।
মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীদের কাজের ধরন কি জানতে চাইলে ড. ফারুক আহমদ জানান, প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন, প্রশিক্ষণ, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, কর্মীদের কার্যপরিধি নির্ধারণ থেকে শুরু করে কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা যেমন- বার্ষিক ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসর ভাতা, বেতন, বোনাস প্রভৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে থাকেন এই বিভাগের কর্মকর্তারা। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার (এইচআরডি) কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা কেমন পেয়ে থাকেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মোশাররফ হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানভেদে এইচআরডির একজন অফিসারের বেতন হতে পারে সর্বনিম্ন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তী পদোন্নতি নির্ভর করবে তার কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর। মন দিয়ে কাজ করলে এক থেকে দুই বছরের মাথায় বেতন ৪০ থেকে ৫০ ছাড়িয়ে যাবে। আর বিভাগের প্রধানের বেতন ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকারও বেশি হয়।
তিনি জানান, ব্যবসায় শিক্ষা ও এইচআরএম বিষয়ে ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা প্রাধান্য পেলেও অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্ররাও এ পেশায় আসতে পারেন। প্রার্থীর নেতৃত্বগুণ, ধৈর্য, সদালাপ, সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা এবং দেশের শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, একজন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অফিসারের ভালো যোগাযোগ দক্ষতা এবং অন্যের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। কর্মজীবনে একজন হিউম্যান রিসোর্স অফিসারের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসী হতে হয়।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ড. ফারুক আহমদ জানান, সাধারণত বড় বড় দেশী এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে পরিপূর্ণ কার্যক্ষেত্র রয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট, ব্যাংক, মিডিয়া হাউস, ওষুধ কোম্পানি, প্রকাশনা সংস্থা, এনজিও, টেলিকমিউনিকেশন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগটির সুবিস্তৃত কার্যক্ষেত্র রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত মানবসম্পদ উন্নয়ন নামে কোনো বিভাগ না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং, স্ট্যাটিসটিক্স, প্ল্যানিং ইত্যাদি বিভাগে মূলত মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজগুলোই করা হচ্ছে।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়টি পড়ানো হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ কোর্সের মধ্যে এইচআরএম বিষয়টি পড়ানো হয়। এ ছাড়া প্রফেশনাল মাস্টার্স ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ইন্সটিটিউট অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট, বিয়াম ফাউন্ডেশন। বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হচ্ছে।