বিসিএস লিখিত পরীক্ষা : গণিতের প্রস্তুতি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারি। পরীক্ষার কলাকৌশল নিয়ে বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ দিচ্ছেন বিগত পরীক্ষার শীর্ষ মেধাবীরা। এ পর্বে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা। লিখেছেন ২৯তম বিসিএসে ফরেন অ্যাফেয়ার্স ক্যাডারে প্রথম মো. মাহবুর রহমান।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় ৫০ করে মোট বরাদ্দ ১০০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর তোলার সুযোগ আছে এ দুটি বিষয়ে।এতে চেষ্টা করলে ৮০ থেকে ৯০ নম্বর তোলা যায়। আবার ভুল হলে বেশি নম্বর কাটা যাবে। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা প্রতিদিন চর্চার বিষয়। বিরতি দিলে অনেক কিছুই ভুলে যাবেন। তাই প্রতিদিন গণিত চর্চা করুন, দেখবেন কঠিন টপিকও সহজ হয়ে গেছে। অনেকের ধারণা, গণিতে বিজ্ঞানের ছাত্ররাই ভালো করে, এটি মোটেও ঠিক নয়। চর্চা করলে যেকোনো বিভাগের ছাত্রই এতে ভালো নম্বর পেতে পারে।
গাণিতিক যুক্তি
গাণিতিক যুক্তি অংশে ১২টি প্রশ্ন দেওয়া থাকবে, উত্তর দিতে হবে ১০টির। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫। বীজগণিত, পাটিগণিত ও জ্যামিতি—তিনটি অংশ থেকেই প্রশ্ন করা হবে। বীজগাণিতিক সমস্যা, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টি সমাধান করলে কাজে দেবে। ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সুদকষা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভ-ক্ষতি, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্তসংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, অনুসিদ্ধান্তগুলোর জন্য পুরনো ও নতুন সিলেবাসের গণিত ও বীজগণিত বই দেখতে হবে। ১৯৯৭ সালের আগের নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের একটা গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। মূল বইটা পাওয়া যায় না। এর পাটিগণিত অঙ্ক সমাধান করলে অনেক কাজে দেবে। নবম-দশম শ্রেণির বীজগণিত ও জ্যামিতি বই উদাহরণসহ পড়তে হবে।
সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও জ্যামিতিক প্রগমন, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, সেটতত্ত্ব, ভেনচিত্র, সংখ্যাতত্ত্বের জন্য চর্চা করতে হবে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে। বিন্যাস ও সমাবেশের জন্য একাদশ শ্রেণির বীজগণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় ও সম্ভাবনার জন্য দ্বাদশ শ্রেণির বিচ্ছিন্ন গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় দেখতে হবে। একটি অঙ্ক অনেক নিয়মে করা যায়। জটিল কোনো নিয়মে না গিয়ে শুদ্ধ নিয়মে অঙ্ক করা শিখতে হবে।
বিগত বছরের গণিত প্রশ্ন খুব ভালো করে দেখবেন, এমনকি জ্যামিতিগুলোও। কারণ গণিতের প্রশ্ন রিপিট হয়। কমপক্ষে ২০টি উপপাদ্য আয়ত্তে রাখবেন।
কোনো অধ্যায় বা অঙ্ক যদি খুব কঠিন লাগে, তা করতে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করবেন না। বাজার থেকে যেকোনো একটি গণিত লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। অনেক সহায়ক বই পাওয়া যায় বাজারে। টপিকস অনুসারে প্রস্তুতি নিলেই এ অংশে ভালো করা যাবে।
প্রতিদিন কিছু না কিছু অঙ্ক অনুশীলন করুন। অনেকেই অঙ্ক করতে গিয়ে শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রিলিমিনারির বেলায় এ টেকনিক ঠিক থাকলে লিখিত পরীক্ষার বেলায় উল্টো ফল হতে পারে। প্রতিটি স্টেপ দেখাতে হবে বিস্তারিতভাবে। কোনো সাইড নোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন বাদ না যায়। বাসায় গণিত অনুশীলন করার সময়ও তাই শর্টকাট না করে পুরো অঙ্ক লিখে করবেন।
মানসিক দক্ষতা
একমাত্র মানসিক দক্ষতা পরীক্ষা নেওয়া হয় প্রিলিমিনারির আদলে। ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটি ভুলের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। এটিই লিখিত পরীক্ষার একমাত্র নেগেটিভ মার্কিং। যেকোনো বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মানসিক দক্ষতা অংশের প্রশ্ন একটু জটিল হয়। এ অংশে পুরো নম্বর পাওয়া বেশ কঠিন।
ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বুঝেশুনে উত্তর করতে হবে। কোনো প্রশ্নে একবার চোখ বুলিয়েই সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। গাইড ও সহায়ক বইয়ের পাশাপাশি পড়তে হবে তিন-চারটা আইকিউ টেস্টের বই।
ভার্বাল রিজনিং বা মৌখিক যুক্তি অংশে কিছু ঘোরানো কথাবার্তা দিয়ে একটা প্রশ্ন থাকে। বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, ভূগোল বা অন্য যেকোনো বিষয় সম্পর্কিত একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া থাকতে পারে, যেটা পড়ে বের করতে হবে কোন অংশটা মিসিং। এ ক্ষেত্রে ভাষা, বানান, গণিত ও ইংরেজি গ্রামারে বেসিক দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে।
অ্যাবস্ট্রাক্ট ও মেকানিক্যাল রিজনিংয়ে কিছু ডায়াগ্রাম দেওয়া থাকে, যেখানে কোনো অবজেক্ট কিংবা আইডিয়ার বদলে যাওয়ার ধরনটা ভালোভাবে খেয়াল করে পরবর্তী অবস্থানটা দেখাতে বলা হবে। কিছু ছবি কিংবা ডায়াগ্রাম দিয়ে সে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নও হতে পারে। স্পেস রিলেশনস অংশে বিভিন্ন অবজেক্ট বা উদাহরণ দিয়ে সেগুলোতে লেটার কিংবা নম্বরের অবস্থান সম্পর্কিত কোয়ালিটেটিভ কিংবা কোয়ানটিটিভ প্রশ্ন হতে পারে।
স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ অংশে ভুল বানানে, ভুল ব্যাকরণে, ভুল যতিচিহ্নে কিছু শব্দ কিংবা বাক্য দেওয়া থাকবে। সেগুলো ঠিক করতে হবে। কিছু এলোমেলো বর্ণ বা শব্দ ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ শব্দ কিংবা বাক্য গঠন করতেও বলা হতে পারে। একটু বুদ্ধি খাটালেই উত্তর করা যাবে।
নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি গণিত হলেও একটু ভিন্ন ধাঁচের। এতে কোনো সিরিজে, ছকে বা ডায়াগ্রামে মিসিং নম্বর বের করতে হবে। গণিত আর কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে সহজে উত্তর করা যাবে।
গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বইয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেটও সহায়ক হতে পারে। মানসিক দক্ষতা অংশের সিলেবাস দেখে বিভিন্ন টপিকস লিখে সার্চ দিতে পারেন। আইকিউ টেস্ট ও প্রশ্ন সমাধান পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। সমাধান করলে কাজে দেবে।
নিশ্চিত না হলে মানসিক দক্ষতা অংশের উত্তর না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এতে নেগেটিভ মার্কিং আছে। এটি পরীক্ষার ফল রীতিমতো পাল্টে দিতে পারে।