চাকরিটা চুক্তিভিত্তিক

চাকরিটা চুক্তিভিত্তিক

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা বড় চাকরিতে জয়েনের পূর্বশর্ত হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আপনার পোর্টফোলিওটা নিস্তেজ আর হালকা! বলি, একটু ইতিবাচক মন নিয়ে নিজের দিকে তাকান। একটু আস্থা খুঁজুন নিজের মধ্যে। ভাবনাটা একটু প্রসারিত করুন। দেখবেন, ঠিকই সহজ এবং ভালো একটা চাকরি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সহজ এ জন্য, তুলনামূলক এই চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশ সহজ। কিন্তু চাকরির মান, বেতনও অনেক ভালো। আগ্রহ হচ্ছে কি? চলুন কীভাবে, কোথায়, কেমন করে এই চুক্তিভিত্তিক চাকরি পাবেন সে সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক :


মৌখিক পরীক্ষায় নিয়োগ
সময়ভিত্তিক নিয়োগ মানেই চুক্তিভিত্তিক চাকরি। ধরুন, কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনি দুই বছরের জন্য নিয়োগ পেলেন। দুই বছর পর চাকরির মেয়াদ বাড়তেও পারে আবার শেষও হয়ে যেতে পারে। কিংবা তাদের অন্য কোনো উইংসেও নিয়োগ পেতে পারেন যদি আপনার এবং নিয়োগদাতার মধ্যে মতানৈক্য হয়। মানে, চাকরিটা যখন সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুযায়ী হয়, তখন সেটাকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি বলে। সাধারণত প্রজেক্ট বেসিস হয়ে থাকে এ চাকরিটা। প্রজেক্টের ওপর নির্ভর করে চাকরির সময়সীমা নির্ধারণ হয়। অনেকেই আছেন, শুরুতে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিটাকে দীর্ঘ করে নেন, তার পর স্থায়ী চাকরির জন্য আবেদন করেন। এতে চুক্তিভিত্তিক চাকরির অভিজ্ঞতাটাকে নিয়োগকর্তারা ইতিবাচকভাবে দেখেন। এ কারণে চুক্তিভিত্তিক চাকরি খুবই জনপ্রিয় চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। এর জন্য বেশি কষ্টও করতে হয় না। সাধারণত ছোট্ট মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়েই এ চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সোনার হরিণ
ছোট-বড় প্রায় সব চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই এরকম চাকরির অফার করে থাকে। বাংলাদেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা-ইন্স্যুরেন্স, ফার্ম, দেশি-বিদেশি এনজিও ইত্যাদি স্থানে প্রতিনিয়ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে খুব ভালো বেতন হয় চুক্তিভিত্তিক চাকরিগুলোয়।

সাধারণত প্রজেক্ট বেসিস হয়ে থাকে এই নিয়োগগুলো। হয়তো কোনো এনজিও বিদেশি তহবিল পেল বাংলাদেশে একটা প্রজেক্ট দাঁড় করানোর জন্য। দেখা যায়, এ জন্য তাদের ১০০ জন লোকবল দরকার। এই প্রজেক্টের ডিউরেশনকেন্দ্রিক লোকগুলো নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি অফিসেও চুক্তিভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও প্রায় ৯৭ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি অফিসে চুক্তিভিত্তিক চাকরির বিপক্ষে অবস্থান নেন। বাংলাদেশের চেয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তিভিত্তিক চাকরির মান ভালো, বেতন কাঠামোও ভালো। তাই অনেকেই জীবনের একটা বড় সময় বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করে থাকেন, একটা শেষে ফের অন্যটায়।

যেখানে পাবেন খোঁজ
অনলাইন জব পোর্টালগুলোতে নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়ে থাকে এমন চাকরির। কিছু প্রতিষ্ঠান দৈনিক পত্রিকাতেও চুক্তিভিত্তিক চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। নিয়মিত খোঁজখবর রাখলে এমন চাকরি সহজেই পেতে পারেন। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে বাণিজ্য মেলা হয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় বিক্রয় ও বিপণনের জন্য কয়েকশ’ তরুণ-তরুণী ও শিক্ষিত বেকার এখানে চাকরি পেয়ে থাকেন। খুব ভালো মানের সেলারি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন এ চাকরিতে।
সবচেয়ে বড় কথা, মার্কেটিং জবে আগ্রহীদের জন্য এটার চেয়ে বড় অভিজ্ঞতার চাকরি আর হতে পারে না। তাই অনেকের কাছে এই চুক্তিভিত্তিক চাকরিটা লোভনীয় অফার। সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ নিয়োগগুলো হয়।

সুযোগ-সুবিধা
চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানটি যদি ভালো মানের হয়, তাহলে প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পাবেন এ চাকরি থেকে। যেমন- ট্রান্সপোর্ট, বাসস্থান, বোনাস-ভাতা, বেতনাদি। তবে চুক্তিভিত্তিক চাকরির সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো, এই চাকরি যদি আপনার ভালো না লাগে তাহলে সহজেই ছেড়ে দিতে পারবেন। তেমন কোনো ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হয় না।

যদিও কিছু প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে চাকরি ছাড়তে পারবেন না বলে বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটা খুবই সীমিত প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। সুতরাং এ দিক থেকে চিন্তা করলে চুক্তিভিত্তিক চাকরির এটা একটি অবশ্যই পজিটিভ দিক। তবে চাকরি ছেড়ে দেওয়াটাই সমাধান নয়। অনেকে স্ট্রাগল করেও একটা চাকরি নিয়মিত করে শুধু নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়ানোর জন্য।

বেতন-ভাতা
এ ধরনের চাকরিতেও যোগ্যতার মাপকাঠি রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণির কর্মচারী- সব ধরনের নিয়োগই এখানে হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের ধরনের ওপর নির্ভর করেও বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। মাসব্যাপী মেলার বিক্রয় প্রতিনিধিদের বেতন ১৫-২৫ হাজার টাকা হয়। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১০-৫০ হাজার টাকা, করপোরেট হাউসগুলোতে ১২-৭০ হাজার টাকা, সরকারি অফিস ও এনজিওতে সুযোগ-সুবিধা বেশি হলেও বেতন কম হয়ে থাকে। তবে ভবিষ্যতে চাকরি স্থায়ী হওয়ার একটা সুযোগ থাকে বলে এখানে বেতন কম হলেও চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরকারি চুক্তিভিত্তিক চাকরির চাহিদা বেশি।

সময়সীমা
সর্বনিম্ন এক মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছর। দুই বছরের বেশি দরকার হলে ফের নিয়োগ দেওয়া হয়। যেহেতু চাকরিটা প্রজেক্টকেন্দ্রিক হয়ে থাকে, তাই প্রজেক্টের সময়সীমা হলো চাকরির সময়সীমা। জয়েন করার আগে ভালোভাবে নিয়মকানুন দেখে নিন। হ্যাঁ, এটা ঠিক, আপনি চাইলেই চাকরিটা ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু নৈতিকতা মেনেই চাকরি ছাড়া আপনার জন্য ভালো। হুট করে চাকরি ছেড়ে দিলে আপনার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়তে পারে। তাই নয় কি?

মালিকের সুবিধা-অসুবিধা না দেখলে আপনার ভবিষ্যৎ খুব একটা সুবিধার হবে না- এটা বলা যায়। তাই চাকরি পেয়ে গেলে কাজ করুন মন দিয়ে। এই অভিজ্ঞতায় পরবর্তী সময়ে বড়সড় চাকরি পেয়ে যেতে পারেন!

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment