বিসিএসে ইংরেজি বিতর্ক: কোন পক্ষে যাবেন আপনি?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি ) আসন্ন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পিএসসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দি প্রমিনেন্ট তাদের ফেসবুক পাতার মাধ্যমে তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের কাছে জানতে চেয়েছিল পিএসসির এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মতামত। সেখানে ৫৮৩ জন পাঠক তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। দৈবচয়নভিত্তিতে নির্বাচিত ১১ জনের মতামত প্রকাশ করা হলো দি প্রমিনেন্টের পাঠকদের জন্য।
ফুয়াদ ফয়সাল
যদি উত্তরপত্রের মূল্যায়ন কেবলমাত্র লেখা উপস্থাপনের মানের উপর নির্ভর করে করা হয় তবে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ইংরেজিতে উত্তর লেখার কারণে যদি ওই পরীক্ষার্থী অতিরিক্ত নম্বর পায় তবে এমন সিদ্ধান্ত অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দিতি দেবনাথ ঝুমুর
অবশ্যই বাংলা। কারণ আমাদের দেশের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে যাদের অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যেখানে এদেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুবিধা থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বঞ্চিত সেখানে পিএসসি এমন সিদ্ধান্ত নেয় কীভাবে তা বোধগম্য নয়। তবে পরীক্ষার মাধ্যম বাছাইয়ের সুযোগ থাকলে ইংরেজি চলতে পারে, এতে কেউ কেউ উপকৃত হবে।
রিক্তা রিচি
বিসিএস পরীক্ষা মাতৃভাষায় হলেই ভালো। পরীক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা। মাতৃভাষায় মনের ভাব যতটা সহজে প্রকাশ করা যায় তা অন্য ভাষায় করা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, বিসিএস হচ্ছে প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের পরীক্ষা। রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেণির নাগরিকরা যদি শুদ্ভভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে না জনেন তবে তা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
রাতুল মৃধা
অবশ্যই এটি পিএসসির ভালো উদ্যোগ। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখানে বাংলাকে কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে না। যদি মনে করা হয় বাংলা অবমূল্যায়িত হচ্ছে তাহলে আমি মেডিকেলের ছাত্র, আমার বই বাংলায় ছাপানো হোক।
লিটন হোসেন
জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হলে এবং নিজের মেধা ও দক্ষতা বাড়াতে হলে ইংরেজির বিকল্প নেই। কারণ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে হলে ইংরেজি জানতেই হবে। আমি মনে করি, আজ হোক, কাল হোক ইংরেজি যেহেতু শিখতেই হবে সেহেতু ভয় পেয়ে লাভ নেই। পিএসসিকে সাধুবাদ জানাই এমন উদ্যোগের জন্য।
সিদরাতুল ফারজানা আঁখি
পরীক্ষার মাধ্যম অবশ্যই বাংলা হওয়া উচিত। প্রথম কারণ, আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই দেশের সব পরীক্ষা, শিক্ষার মাধ্যম এবং অফিস আদালতে দাপ্তরিক ভাষা বাংলাই হওয়া উচিত। দ্বিতীয় কারণ, আমরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তারা বলতে গেলে সবাই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এই সিদ্ধান্ত নির্যাতনমূলক।
তাজমিন তানি
বাংলাতেই পরীক্ষা হওয়া উচিত। যিনি মাতৃভাষায় নিজের মেধার পরিচয় দিতে পারবেন না তিনি পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষায় বেশি পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। তাছাড়া যিনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডার হবেন তার ইংরেজির পণ্ডিত হওয়ার দরকার কি? যাদের পণ্ডিত বানানো প্রয়োজন তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পণ্ডিত বানানো যেতে পারে। অথবা ইংরেজি পরীক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করে যুগপোযোগী করা যেতে পারে, পরীক্ষার নম্বর বাড়ানো যেতে পারে। যিনি ইংরেজি পরীক্ষার ভালো করবেন, বেশি নম্বর পাবেন তাকে ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডার দেওয়া হবে।
মাহবুব মাশফিক
অবশ্যই ইরেজিতে হওয়া উচিত। কারণ একজন বিসিএস ক্যাডারের সব সেক্টরে সমান দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইংরেজির বিকল্প নেই। কারণ ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা।
মানকুমারী চাকমা
আমি বাংলার পক্ষে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের কথা যেখানে বলা হচ্ছে সেখানে পিএসসির এমন সিদ্ধান্ত হঠকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। গুটিকয়েক ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বিপদে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
আব্দুল হাদি খান
আমি ইংরেজির পক্ষে। কারণ, ১. ইংরেজিতে লিখলে বেশি ভাব প্রকাশ করা যায়, ২. ইংরেজিতে লেখা বেশি সুন্দর হয়, ৩. ইংরেজিতে দ্রুত লেখা যায়, ৪. ইংরেজিতে পাঠ্য উপকরণ সহজলভ্য এবং ৫. ইংরেজিতে লিখলে সময় সংকটে পড়তে হয় না।
মোস্তাফিজুর রহমান শাওন
আমি মনে করি বাংলাদেশ বিষয়াবলী, বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি অংশ বাংলায় হওয়া উচিত। এর বাইরে সবকিছু ইংরেজিতে হতে পারে। তাহলে বাংলা ও ইংরেজি—দুই ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীরা। আর পিএসসির চাওয়া তো এটাই।