চাকরি জোটে না উচ্চশিক্ষায়ও
- শরীফুল আলম সুমন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১১ সালে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর গত ছয় বছরে ২৫টি সরকারি চাকরির মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুইবার বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন অর্ধশত। দু-একটি বেসরকারি চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু বেতন খুব কম; তাই যোগ দেননি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অনেক চাকরির চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি। দু-একটি বেসরকারি চাকরি যা-ও হয়েছিল কিন্তু বেতন এত কম যে তার চেয়ে প্রাইভেট পড়িয়েই বেশি টাকা আয় করা যায়। দেখা যায়, একটি চাকরিতে লোক নেবে চারজন অথচ অংশ নিচ্ছে চার হাজার। যাদের টাকা আছে, মামা-চাচা আছে, শেষ পর্যন্ত তারাই চাকরিটি বাগিয়ে নেয়। এখন মনে হয়, যদি এসএসসি পাসের পর কারিগরি বা ডিপ্লোমাতে পড়তাম, তাহলে ঠিকই একটা যুতসই চাকরি করতে পারতাম।’
দেশে এখন এমন ‘বেকার জাহাঙ্গীরের’ সংখ্যা অসংখ্য, যারা অন্তত স্নাতক শেষ করছে কিন্তু যুতসই একটি চাকরি পাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষিতদের বড় একটি অংশই বেকার থেকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মবাজারের সঙ্গে সংগতিহীন শিক্ষাব্যবস্থার কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেনারেল এডুকেশনে পড়ে কত লোক চাকরি পেতে পারে, তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। এখনো এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জেনারেল এডুকেশনে পড়ছে। আর স্নাতকোত্তর শেষ করেও তাদের বড় অংশই বেকার থেকে যাচ্ছে।
গত বছর জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় ১৫ হাজার পদে নিয়োগ দিতে নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে। মাত্র ১৫ হাজার পদের জন্য আবেদন জমা পড়ে ১৩ লাখ। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে আবেদন করেছে প্রায় ১২ জন করে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, যদি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীর আবেদনের সুযোগ থাকত তাহলে আবেদনের সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বাড়ত।
সম্প্রতি ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ মে এই বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার ১৮০ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ জন্য গত বছরের ৮ জানুয়ারি দুই লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন চাকরিপ্রত্যাশী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এক হাজার ২২৬ জনকে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন। অর্থাৎ একটি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৯৯ জন।
এভাবে সরকারি হোক বা বেসরকারি, যেকোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেই এক পদের বিপরীতে সাধারণত কয়েক শ প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সর্বশেষ (২০১৪ সালের মার্চে প্রকাশিত) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৪৭ শতাংশই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছে কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। ভারতে শিক্ষিত বেকারের হার ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় এ হার মাত্র ৭.৮ শতাংশ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও উচ্চশিক্ষায় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এখানকার নীতিনির্ধারকরা জানেন না, শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোন খাতে কত শিক্ষার্থী প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো হলো তথ্য-প্রযুক্তি, কৃষিজাত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, তৈরি পোশাক খাত, পর্যটন ও পর্যটন সেবা, হালকা কারিগরি নির্মাণ খাত প্রভৃতি। কিন্তু এসব খাতের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত যথাযথ কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন (বিশেষায়িত ও সাধারণ) কর্মীর অভাব রয়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারে না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে বিষয়ে তারা সুযোগ পায়, তাই পড়তে বাধ্য হয়। আর চাকরির ক্ষেত্রে যে সুযোগ আসে সেখানেই যোগ দিতে অনেকটা বাধ্য হয় তারা। বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক হয়েও অনেকে জনপ্রশাসনের চাকরি করছে। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়া শেষে একটি আইটি কোর্সে ভর্তি হয়ে আইটি খাতে কাজ করছে, এমন কর্মীর সংখ্যাও কম নয়। মেডিক্যাল বা প্রকৌশলে পড়েও সরকারের প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডারে কত কর্মকর্তা রয়েছেন, এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যানও নেই।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশের উপযুক্ত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৬ সালে প্রকাশিত) বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে জাতীয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার লাখ ৫৫ হাজার ১৮৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক পাস করেছে। আর ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছে ৬১ হাজার ৪৮২ জন। সেই হিসাবে ২০১৫ সালে মোট স্নাতক পাস করেছে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ জন। তবে ওই বছরে সরকারি কর্ম কমিশনসহ (পিএসসি) অন্য সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নিয়োগ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার কর্মী। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং বিভিন্ন ব্যাংকসহ বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি হবে না। তাতে দেখা যাচ্ছে, পাস করা বাকি তিন লাখ স্নাতকই বেকার রয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। পরের তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কমেছে ৪.২ শতাংশ হারে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কমবে ৪ শতাংশ হারে।
২০১৫ সালে প্রকাশিত আইএলওর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বেকারত্ব বাড়ছে—বিশ্বে এমন ২০টি দেশের তালিকায় ১২ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএলওর মতে, বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির বর্তমান হার ৩.৭ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৫ অনুযায়ী, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে শিক্ষিতদের জন্য মাত্র ছয় লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে মাত্র তিন লাখ উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি চাকরি বা কাজ পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিহীন শিক্ষাব্যবস্থার কারণে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। তবে কারিগরি ও বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে।
চাকরির বাজার কঠিন হয়ে পড়ায় মেডিক্যাল কিংবা প্রকৌশলে পড়াশোনা করেও অনেকে বাধ্য হয়ে যোগ দিচ্ছেন সাধারণ কোনো পেশায়। আবার বিশেষায়িত বিষয়ে পড়ালেখা করেও অনেকে চাকরি করছেন অন্য খাতে। সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা, ইসলামের ইতিহাস বা দর্শনের মতো বিষয়ে পড়ালেখা করেও ব্যাংকে চাকরি নিচ্ছেন, এমন উদাহরণ মিলবে ভূরি ভূরি। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, পরে সে বিষয়ে চাকরি না পাওয়ায় পেশার ক্ষেত্রেও উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে না।
দেশে এখন ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৮৫টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম পছন্দ থাকে সাধারণত বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রেশন)। তবে পাস করার পর তারাও চাকরির বাজারে হন্যে হয়ে ঘোরে, জুতসই চাকরি জোটে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় খোলার অনুমতি দেয় ইউজিসি। কিন্তু কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে কী পরিমাণ আসনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আর এ বিষয়ের চাকরির বাজার কত, সে হিসাব তাদের কাছেও নেই। অথচ তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলেই ইউজিসি যেকোনো বিষয় খোলার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘মূলত দুই কারণে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। প্রথমত কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। দ্বিতীয়ত স্কিল গ্যাপ (যোগ্যতার ঘাটতি) বাড়ছে। আমাদের দেশে এখন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে কৃষি, সেবা ও শিল্পে। কিন্তু ডিমান্ড (চাহিদা) অনুযায়ী লোকবল সাপ্লাই (সরবরাহ) করা যাচ্ছে না। আমাদের শিক্ষিত বেকার বাড়লেও গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও লেদার গুডসে বিপুলসংখ্যক বিদেশি কাজ করছে। মূলত যেসব খাতের গ্রোথ বেশি সেখানেই বিদেশিরা বেশি কাজ করছে। এখন সরকারের উচিত মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়া। যাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। আর যে ধরনের শিল্প গড়ে উঠছে তার সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মী তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। বেশি জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়। ’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘ভবিষ্যতে কোন খাতে চাকরির বাজার কেমন হবে, কোন বিষয়ের প্রতি জোর দিতে হবে আর কোন বিষয়ের অনুমোদন বাড়ানো যাবে না, সে হিসাব সরকারকেই রাখতে হবে। বিশেষ করে বিদেশে আমাদের কোন খাতের জনশক্তি প্রয়োজন, দেশেরও কোন খাতে দক্ষ লোক দরকার, সে হিসাব করেই কোর্সের অনুমোদন করতে হবে। সারা বিশ্বে নার্সের চাহিদা থাকলেও আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ কম। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সিংয়ে পড়ার জন্য আসন রয়েছে মাত্র তিন হাজার ৮৮৫টি। আর বেসরকারি পর্যায়ে পড়তে হলে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। ফলে নার্সিং বিষয়ে অনেকের পড়ার আগ্রহ থাকলেও সুযোগ মিলছে না। ফলে ভালো বেতনে অনেক দেশ থেকে নার্সিংয়ে লোক নিয়োগের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশ সে সুযোগ নিতে পারছে না। ’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়েই এখন যেসব বিষয়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে সেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ কম। বিশেষ করে ন্যানো প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি, প্রকৌশল, নিউক্লিয়ার প্রকৌশল, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও পানিসম্পদ, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বনজসম্পদ, মৎসসম্পদ, খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও গ্যাস উত্তোলন, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও নার্সিং, চর্মশিল্প, টেক্সটাইল প্রকৌশল, ফ্যাশন ডিজাইন, অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, অটোমোবাইল প্রকৌশল, মেরিন আর্কিটেকচার, মেরিন বায়োলজি, সামাজিক বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে দু-চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও তাতে আসনসংখ্যা খুব বেশি নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ফিনল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে বড়, লোকসংখ্যায় কম ও অত্যন্ত ধনী দেশ। সেখানে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় যায়, বাকিরা যায় টেকনিক্যালে। অথচ আমাদের দেশে উল্টো। সবাই উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। যে সংখ্যক ছেলে-মেয়ে বিএ, এমএ পাস করে, এত চাকরি দেওয়ার জায়গা তো আমাদের নেই। তাই বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এরপর ইতিহাস, দর্শনে অনেক ছেলে-মেয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে গবেষণার জন্য স্বল্পসংখ্যক ছেলে-মেয়ের পড়লেই চলে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ঝোঁক বিবিএ, এমবিএ। অথচ গার্মেন্টের জন্য লোক বিদেশ থেকে আনতে হয়। আসলে এ ব্যাপারে আমাদের একটা জাতীয় নীতি দরকার। কোন বিষয়ে কত লোক দরকার সে হিসাবেই আমাদের বিষয় চালু রাখতে হবে। আর অষ্টম ও দশম শ্রেণির পর শিক্ষার্থীদের ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল এডুকেশনে পাঠাতে হবে। ’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমাদের এখন দরকার দক্ষ জনবল। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের জন্য এত চাকরি আমাদের নেই। এ জন্য আমরা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছি। বর্তমানে এ খাতে শিক্ষার্থীর হার ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টে একসময় ১৯ হাজার বিদেশি কাজ করত। এখন তা ১২ হাজারে নেমে এসেছে। আমরা সরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও টেক্সটাইল ও ফ্যাশন ডিজাইনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এখন শিক্ষার্থীদের বিএ-এমএ পাস করার চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় পড়তেই বেশি উৎসাহিত করছে।