‘মিডিয়াতে কাজের ক্ষেত্র অনেক’
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
অধ্যাপক মফিজুর রহমান। গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন ১৯৯৭ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে একই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। উচ্চতর শিক্ষা ও ট্রেনিং গ্রহণ করেছেন ইউরোপ ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কাজ পাগল ও তরুণপ্রাণ এ মানুষটি সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে চাকরির ধরন, যোগ্যতা ও স্বপ্নপূরণের কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন এক সাক্ষাৎকারে।
: ‘চাকরির ক্ষেত্র’ হিসেবে বাংলাদেশের মিডিয়া নিয়ে আপনার মতামত
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: আমি মনে করি- আগের তুলনায় ক্যারিয়ার হিসেবে মিডিয়া এখন অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তরুণদের মধ্যে তো একটা অংশই আছে, যাদের স্বপ্নই হলো- মিডিয়ার মতো এমন চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারে আসা। কেননা এ অঙ্গনে কাজের পরিধি যেমন দিনদিন বাড়ছে তেমনি দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে অন্য ক্ষেত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
: কাজের পরিবেশ বিবেচনায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা আধুনিক হয়েছে-
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: আগে তো সাংবাদিকতা ছিলো একটা চ্যারিটির মতো। এখন মিডিয়া অফিসগুলো বেশ আধুনিক, ঝকঝকে। বিজ্ঞাপনের বাজারও অনেক। লক্ষ্য করলে দেখবেন- আমাদের মিডিয়া হাউজগুলোও কিন্তু ইতোমধ্যেই একটি কর্পোরেট লুক নিয়েছে। চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী মিডিয়া সংশ্লিষ্টরা এখন অনেক বেতনও পাচ্ছেন। অনেক প্রিন্ট মিডিয়ায় ওয়েজবোর্ডও অনুসরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের ব্যাপক পরিচিতি ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটা ভালো স্ট্যাটাস দাঁড়িয়ে গেছে। পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীও বেশ সুনামের সাথে এ পেশায় কাজ করছেন। আমি তো বলবো অন্য আট-দশটা পেশার চেয়ে এখন মিডিয়ায় নারীদের আরো সরব উপস্থিতি। তাই এ কথা সহজেই বলা যায় যে- মিডিয়ায় কাজের পরিবেশ এখন যথেষ্ট উন্নত। তবে আরো উন্নত হওয়ার সুযোগ আছে।
: অনেকেই এখনও মিডিয়াকে স্থায়ী পেশা হিসেবে নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া যারা আসেন অনেকেই একটা সময় চলে যেতে বাধ্য হন; কেন এমনটা ঘটছে?
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: আমাদের দেশে গণমাধ্যমের বয়স কিন্তু খুব একটা বেশি না। বেসরকারি টিভির কথা ধরলে ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়কে আমরা ধরতে পারি। সে হিসেবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিস্তার কেবল হতে শুরু করেছে। তবে আমার মতে- এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই মিডিয়া কিন্তু একটা শক্ত ভীতে দাঁড়িয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মালিক পক্ষের সহযোগিতা থাকলে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। অনেকের কাছে আবার চাকরির স্থায়ীত্বের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তাই অন্য চাকরিতে চলে যান।
: যারা মিডিয়া সংশ্লিষ্ট একাডেমিক জ্ঞান নিয়ে আসেন অথবা যারা অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন; তাদের কর্মপরিধি-দক্ষতা-যোগ্যতা নিয়ে আপনার মন্তব্য–
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: অবশ্য যারা একাডেমিক জ্ঞান নিয়ে এ লাইনে আসবেন তারা এগিয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে এটা যেহেতু একটি চ্যালেঞ্জিং ও ক্রিয়েটিভ লাইন; সুতরাং এখানে সবারই কাজের সুযোগ আছে। আর একটি কথা- মিডিয়ায় কিন্তু কাজের ক্ষেত্র ও বিভাগ অনেক। তাই অন্যান্য বিষয়ের গ্রাজুয়েটদেরও কাজের যথেষ্ট সুযোগ আছে।
: যারা মিডিয়ায় আসতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ-
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: প্রথমেই মনে রাখতে হবে মিডিয়া একটা চ্যালেঞ্জিং, আধুনিক ও সৃজনশীল পেশা। এখানে কাজ করতে হলে তাকে সব সময় মনে-প্রাণে তরুণ থাকতে হবে। নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট রাখতে হবে। আর অবশ্যই মিডিয়া বিষয়ক সাধারণ বিষয়গুলো আয়ত্তে নিতে হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট পরিভাষা ও সাংবাদিকতার নতুন নতুন ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এবং আশপাশে যা ঘটছে সে বিষয়েও জানার পরিধি বাড়াতে হবে। প্রতিনিয়ত ভিন্ন ও নতুন কিছু করার আগ্রহ থাকতে হবে।
: কাজের মান ঠিক রাখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: ইনহাউজ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিভাগকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে জনবল নিয়োগ করা, মিডিয়া সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে নিত্য নতুন কোর্স চালু করা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার মনোভাবসহ সাংবাদিকতায় যে সব নিত্য নতুন বিষয় যোগ হচ্ছে সেগুলো নিয়ে সেমিনার বা প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। তবে আমি নির্দিষ্ট সময় পরপর ইনহাউজ ট্রেনিংকে বেশি গুরুত্ব দেবো।
: আপনার কাছে সফলতা মানে কী?
অধ্যাপক মফিজুর রহমান: ভালো মানুষ হওয়া।