সফলদের ১৪টি সাধারণ বৈশিষ্ট্য
ড্যান শাওবেল : আমি ফোর্বস-এ প্রকাশিত সফল মানুষদের দেখছি। ২০০৭ সাল থেকে অন্তত এক হাজারের অধিক সিইও, তারকা, লেখক, রাজনীতিবীদ এমনকি মহাকাশচারীর সাথে কথা বলেছি। এসব সফল মানুষের সাথে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলার সময় সবার মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি যা তাদেরকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এমন ১৪টি ব্যাপার আজ আপনাদের বলব, যা তাঁদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
১) তারা জানেন কখন থাকতে হবে আর কখন চলে যেতে হবে
- সফল ব্যক্তিরা জানেন ঠিক কখন তাদের কর্মী পরিবর্তন করতে হবে, কখন একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে হবে অথবা বন্ধ করে ফেলতে হবে। তাদের ভালো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্বেও প্রচেষ্টার ত্রুটি করেন না।
২) যা করতে বলা হয় তার চেয়েও বেশী করে
- সফলরা কাজের শুরুতেই দেখে নেন তারা কাজটা কতটা করতে পারবেন। তাদের উপর ন্যাস্ত কাজগুলো করার পর তারা আরও চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে চান। এমনকি তারা যেকোনো একঘেয়েমী কাজও অনায়াসে করতে রাজি হয়, যেখানে অন্যরা দলনেতা ছাড়া করে না।
৩) সফল হওয়ার জন্য ব্যর্থ হতে প্রস্তুত
- সফল মানুষ জানেন সফলতা সহজে আসে না। সফল হওয়ার জন্য তাঁরা ব্যর্থ হতে প্রস্তুত থাকেন। প্রতিটি ব্যার্থতা থেকে তারা শিক্ষা নেন, যেন পরবর্তীতে তা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং সফলতা অর্জনে সহায়ক হয়। যেখানে অনেক মানুষ ব্যর্থ হওয়ার পর আশা ছেড়ে দেয় সেখানে সফল ব্যক্তিরা কঠিন ধৈর্য্যের পরিচয় দেন, আরো উদ্যমী হন।
৪) নিজেই নিজের ভাগ্য রচয়িতা
- ভাগ্য এবং সফলতা কঠোর পরিশ্রমের ফলে পাওয়া যায়। সফল ব্যক্তিরা জানেন, অগোছালো কাজের মধ্য দিয়ে কখনো ভাগ্যবান বা সফল হওয়া যায় না। তারা প্রতিদিন কমপক্ষে একটি কাজ করেন নিজেদের ভালো অবস্থানে রাখতে, ভাগ্যবান হতে এবং ভাগ্যকে আরো সম্প্রসারিত করতে।
৫) বাস্তবসম্মত স্বপ্নদ্রষ্টা
- সফল মানুষরা প্রতিদিন ঘুম থেতে জেগে উঠার পর সারা দিনের পরিকল্পনা করেন, যেখানে ব্যর্থ ব্যক্তিরা পরবর্তীতে কি করবে তা ভাবতে ভয় পায়। অপরদিকে সফল ব্যক্তিরা জানেন, তাদের সকল দুর্বলতা কাটিয়ে এটার পিছনে সকল প্রচেষ্টা দিতে বা বিনিয়োগ করতে তারা সক্ষম।
৬) সকল কাজের জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত
- সফল ব্যাক্তিরা কাজ সম্পাদনের জন্য অপর ব্যাক্তির উপর নির্ভর করেন না। এর পরিবর্তে তারা চিন্তা করেন এবং সবকিছুর সমাধান খুঁজে বের করেন। যদি তারা ভুল করেন তাহলে তা অবিলম্বে শোধরানোর চেষ্টা করেন এবং একই ভুল দ্বিতীয়বার করেন না।
৭) যা দ্বারা প্রভাবিত হয় তা পরিবর্তন করতে পারে
- অর্থনৈতিক প্রবণতা দ্বারা প্রভাবিত হলেও সফল মানুষ এটার জন্য অপেক্ষা করেন না। তারা নিজেরাই চারপাশের পরিবর্তন ঘটান এবং অন্যদের অনুপ্রেরণা হন।
৮) তারা বাজার পরিবর্তনে সমন্বয় সাধন করতে পারে
- সফল ব্যাক্তিরা নিজেদেরকে পুনরাবিষ্কার করতে পারেন ব্যবসা জগতে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য। তারা জানেন আপনি যদি বদ্ধ বা বিকাশহীন থাকেন এবং পরিবর্তনকে এড়িয়ে চলেন তাহলে আপনি পশ্চাদপদতায় রয়ে যাবেন। তারা ক্রমাগত নতুন ধারনা নিয়ে আসে, পরবর্তী বড় কাজ খুঁজে বেড়ান এবং দক্ষতা অর্জন করেন।
৯) তারা কার্যকরভাবে তাদের গল্প বলতে জানে
- আপনি যদি সফল ব্যক্তিদের সাথে হাঁটেন এবং জিজ্ঞেস করেন যে তারা কি করে, তারা সবকিছু সংক্ষিপ্ত অথচ দ্যেতক অর্থবহ ভাবে বলতে জানে। তারা জানে তারা কে, কি করে, এবং কীভাবে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হয়। তাদের শক্তিশালী ভঙ্গি আছে এবং তারা প্রবর্থক ও আত্ববিশ্বাসী হয়।
১০) তারা মানুষকে সঠিক প্রশ্ন করতে পারেন যারা সঠিক উত্তর দিতে জানেন
- সফল মানুষ তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে জানেন। যারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তারা সেই ব্যক্তিদের কে কল বা ইমেইল করতে ভয় পান না। তারা সর্বদা সঠিক উত্তর নিয়ে প্রস্তুত থাকেন এবং অন্য কোন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক হয়।
১১) তারা জীবনব্যাপী শিক্ষার্থী
- অনেকেই ভাবেন যে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হয়ে গেলে পড়াশুনা শেষ হয়ে যায় কিন্তু সফল ব্যাক্তিরা সারাজীবন শিক্ষার্থী থাকেন। তারা ক্রমাগতই নতুন জিনিস শিখেন এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেন। নতুন কাজ শুরু করতে ,ব্যার্থ হতেও তারা ভয় পান না।
১২) তারা জানেন তারা কে
- সফল ব্যক্তিরা আত্ববিশ্বাসী হন এবং তারা নিজেদের ও অন্যদের পরিচালনা করতে পারেন। তাদের নিজস্ব দৃষ্টি ও লক্ষ্য আছে এবং দৈনিক ভিত্তিতে এটি আনতে অনুসন্ধানী হয়। যেটা তাদের জন্য ভালো না তার পিছনে সময় নষ্ট করেন না।
১৩) তারা প্রাপ্তির চেয়েও ভ্রমণ সম্পর্কে উত্তেজিত থাকেন
- সফল ব্যাক্তি দ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে পরিহার করেন। তারা কঠিন কাজ, ঝুঁকি নেওয়া এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে টেকসই ক্যারিয়ার নির্মাণে আরও সাবধানী হয়। সকল প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও ভ্রমণকে উপভোগ করেন। কারণ, তারা এমনই কাজ করছেন জীবনে যার অর্থ আছে।
১৪) তারা গ্রাস এর পরিবর্তে তৈরী করে
- যখন অধিকাংশ লোক ইমেইল পড়া, টিভি দেখা, পডকাস্ট শোনায় ব্যস্ত তখন সফল ব্যক্তিরা নতুন যন্ত্রপাতি, উপস্থাপনা ও ধারনা তৈরী করে। গ্রাসকরার পরিবর্তে তারা অন্যের কাজে আসতে পারে এমন জিনিস তৈরী করে।
‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ এই ধারনায় সিদ্ধহস্ত সফল ব্যাক্তিরা। তারা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে অনাকাংক্ষিত বস্তুকেও জয় করতে পারেন। প্রত্যেক সফল ব্যক্তির সফল হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে পরিশ্রমের পাহাড়। জীবনে ব্যার্থতা থাকবেই তাই বলে পিছু না হেটে সামনের পথে ধাবিত হওয়ায় ই সফলতার লক্ষণ।