সুখী হওয়ার ১১ দফা
কর্মী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তু প্রতিষ্ঠান হোয়েন আই ওয়ার্কের বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজান প্যাটেল। তিনি প্রদায়ক হিসেবে নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখেন বিখ্যাত সাময়ীকি ফোর্বস, এন্টারপ্রেনার ও ইনকর্পোরেট ডটকমে। সম্প্রতি ‘সফলদের সুখী হওয়ার উপায়’ নিয়ে তিনি একটি নিবন্ধ লিখেছেন ইনকর্পোরেটে। তাঁর সেই নিবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন রিক্তা রিচি।
আপনি চাইলে এই মুহুর্তেই আপনার ব্যবসায় এবং ব্যক্তিগত জীবনে সফল ও সুখী হতে পারেন। ভাবছেন, কীভাবে? খুব সহজ। এ জন্য আপনাকে মাত্র ১১টি ধাপ অবলম্বন করতে হবে।
১. বই পড়ি হপ্তায় একটি
- একজন উদ্যক্তা কখনোই জ্ঞান অর্জন করা এবং নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকে না। জানার কৌতূহল ও জ্ঞান অর্জন করা উদ্যক্তা হয়ে উঠার জন্য স্বাভাবিক। সফল ব্যক্তিরা প্রতিটি কাজ শুরু করেন জরুরী ভিত্তিতে, সমস্যা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে অথবা অনুপ্রেরণা দিয়ে যা ব্যাবসা দাঁড় করানোর জন্য একটি উত্তম পথ। এসব অনুপ্রেরণা খুঁজতে হয় বই থেকে। সপ্তাহে একটি বই পড়ার জন্য আপনার খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। আপনি যেহেতু উদ্যেক্তা, তাই আপনি পড়বেন উদ্যেক্তা, উৎপাদন ও বিপণন বিষয়ে বিষ্ময়কর মডেল সম্পর্কে। শুরু করার জন্য শত শত বই আছে যা থেকে ধারনা পাবেন। তাহলে দেরি কেন, আজই শুরু করুন যেকোনো একটি বই দিয়ে।
২. অন্যের পাশে পরামর্শ নিয়ে
- অন্যকে সাহায্য করা সুখী হওয়ার একটি ভালো পথ যা আপনাকে নেটওয়ার্ক তৈরিতে এবং দক্ষতার পরিমার্জন করতে সাহায্য করবে। মেন্টরিং আপনাকে নতুন নতুন ধারনা দেবে, সুযোগ সুবিধা দিবে এবং আপনার ইন্ডাস্ট্রি এবং অনুসারীদের নতুন আলো দেখাবে।
৩. প্রতিদিনের পরিকল্পনা
- সবাই বলে যে জীবন সংক্ষিপ্ত। কিন্তু তারা কখনোই বলে না, প্রতিদিন পরিকল্পনা করে অতি তাড়াতাড়ি, কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। আগামীকাল আপনি কি করবেন তা ভেবে আগের রাতে কিছু সময় ব্যয় করুন। প্রতিমাসে, সপ্তাহে আপনি কতটুকু কাজ সম্পাদন করেছেন এবং আরো কতটুকু কাজ করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরী করুন। সময় এবং লক্ষ্যকে আপনি যত বেশী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তত বেশী সুখী হতে পারবেন।
৪. কৃতজ্ঞতার অনুশীলন
- কৃতজ্ঞতা ব্যাতীত সুখ লাভ করা যায় না। এজন্য আমাদের মনে রাখা উচিত, প্রথমত আমাদের কোন কারণে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। আমরা যারা আগামী নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত, তারা কখনোই হতাশার চক্র থেকে বের হতে পারি না। তাই কারও প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ারও সময় হয় না আমাদের। এ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসুন। নিয়মিতভাবে আপনার বন্ধু, সহকর্মী থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এবং তা অনুশীলন করুন। দেখবেন সফলতা আপনার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।
৫. অপ্রয়োজনীয় অবশ্য পরিত্যাজ্য
- সবকিছু অর্জনের প্রবণতা আমাদের কখনো সুখী করতে পারে না। নতুন একটি বিএমডাব্লিও কিনে আপনি হয়ত কয়েক সপ্তাহের জন্য চমৎকার সুখ পাবেন, কিন্তু কিছুদিন পর অন্য একটি বাস্তবিক লক্ষ্য দ্বারা এটি ম্লান হয়ে যাবে। নতুন গাড়ি বা লেক এর পাশে বাড়ি কিনতে চাওয়ার মাঝে কোনো ভুল নেই। কিন্তু সফলতার প্রতীক হিসেবে এটার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করার মাঝেও সুখ নেই। অপ্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ, ছোটখাটো আবরণ, অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি ত্যাগ দিন। সুখী হওয়ার পথ সুগম হবে।
৬. অর্থই জীবনের যথার্থ নয়
- রিচার্ড ব্রানসনকে দেখুন। তিনি একজন মহাধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তিনি কাজের মধ্যেই তার সুখ খুজে নিয়ছেন। তিনি যদি শুধুমাত্র টাকার জন্য কাজ করতেন তাহলে একটি পর্যায়ে গিয়ে তিনি হয়ত কাজ বন্ধ করে দিতেন। তার পরিবর্তে তিনি এখনো কাজ করে যাচ্ছেন এবং দৃষ্টি নিবন্ধ করেছেন নতুন নতুন ব্যবসায়ের দিকে।
৭. ডায়েরি লিখুন
- সাধারণত মানুষ নিজের চিন্তা, হতাশা, লক্ষ্যের কথা ডায়েরিতে লিখতে চায় না। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে প্রতিদিনের জার্নাল আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষমতাধর করে দিতে পারে এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিফিলন ঘটায়। আপনার সপ্তাহটা কেমন যাচ্ছে, কোন কোন লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং আপনার ক্যারিয়ার কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করুন।
৮. অভিজ্ঞতার আলোয় চলুন
- হাভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক মাইকেল নরটন বিজ্ঞানের খরচ নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং তিনি খুঁজে পেয়েছে যে, বস্তুগত বিষয় নিয়ে করা অভিজ্ঞতায় মানুষ অধিক আনন্দ লাভ করে। নরটন আরো আবিষ্কার করেছেন যে, আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বেশি সুখী করে তোলে।
৯. ঢের অবসর চাই
- ছুটির সময়সূচী আমাদেরকে দৈনিক রুটিন থেকে মুক্তি দেয় যা আমাদের সুখী হওয়ার জন্য জরুরী। অভিজ্ঞতার উপর টাকা খরচ করতে, বন্ধু এবং পরিবারের সাথে পুণর্মিলন ঘটাতে অবসর সাহায্য করে। অধ্যাপক নরটন স্বীকার করেন যে, অবসর মানসিক চাপকে দূর করে দেয়।
১০. ক্ষমো অপরাধ
- রাগ পুষে রাখা দূর্বিপাক ও অসুখী হওয়ার একমুখী টিকেট। আমরা এই তিক্ততা নিয়েই বাঁচি, এবং পুরনো বস, সহকর্মী, সাবেক বন্ধু যে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের কথা ভেবে সময় ব্যয় করি। জীবনে এগিয়ে যাওয়া, জীবনকে উপভোগ করার পরিবর্তে হতাশার মধ্যেই জীবনকে কাটিয়ে দিই। এসব শুধু জীবনে যন্ত্রণাই বাড়ায়। তারচেয়ে অন্যকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজের সাথে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। ক্ষমা মানে এটা বোঝায়না যে আপনি একজনের অন্যায় কে অনায়াসে বরদাস্ত করছেন। এটা শুধু বোঝায় আপনি ক্রোধকে ঝেড়ে ফেলেছেন এবং জীবনের গতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।
১১. ‘সুখ’ এক পছন্দের নাম
- আমাদের আবেগ এবং চিন্তা প্রভাবিত হতে পারে অসুখী স্মৃতির সবকিছু দ্বারা। অতএব মন খারাপ করা অতীত ভুলে থাকাই শ্রেয়। সুখ একটি পছন্দ, এমন কিছু না যা হঠাৎ ঘটে। একটি গবেষণা জার্নাল থেকে জানা যায় যে, ইতিবাচক গান শোনার মাধ্যমে সুখ বৃদ্ধি পায়, বিশেষভাবে যখন যৌথ হয়ে গান শোনা হয় তখন অধিকতর সুখী হওয়া যায়। সুখী হওয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা নিয়মিত ভিত্তিতে হয়, আপনি আরো বেশী অনুপ্রাণিত হবেন নিজেকে সফলতার নতুন আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
সফল ব্যক্তিরা জানেন কীভাবে নিজেকে সুখী রাখতে হয়। তারা আরো বেশী জ্ঞান আহরণের জন্য নিয়মিত বই পড়েন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, রুটিনমাফিক কাজ করেন, অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না, অর্থের পিছনে ছোটেন না এবং তাদের রয়েছে ক্ষমা করার অসীম ক্ষমতা।
সূত্র : আইএনসি ডটকম।