২৪ ঘন্টা ২৪ কাজ
- শিমি আক্তার
সারা সপ্তাহ কাজ থেকে পালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এই ব্যস্ততার মধ্যেও সপ্তাহের প্রতিদিনই উপভোগ করতে হবে। আমাদেরকে ২৪ ঘান্টায় ২৪টি উপায় খুজে বের করতে হবে যাতে আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু কীভাবে তা করবেন চলুন দেখে নেই।
ঘুমানোর আগে যা করবেন
১. খাবার তৈরি শুধুমাত্র এ্যাথলেট বা ক্রসফিটারদের জন্যেই নয় পরবর্তী সময়ের জন্য খাবার তৈরিতে যে কেউই উপকৃত হতে পারেন । অর্থাৎ আপনি পুরো সপ্তাহের জন্য সকালের নাস্তার ব্যবস্থা ও দুপুরের খাবার করে রাখতে পারেন অথবা রাতের পূর্বেই শুধু লাঞ্চটা তৈরি করে রাখতে পারেন, যাতে আপনি সহজেই খাবার গ্রহণ করতে পারেন এবং অনেক সময় বাঁচাতে পারেন সকালের তাড়হুড়ো বা ব্যস্ততার মধ্যে।
২. আগামী দিন যে পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করবেন তা আগের রাতেই গুছিয়ে রাখতে পারেন যাতে সকালের ব্যস্ততায় কিছু বাড়তি সময় বাঁচে।
৩. শয্যার সময় ঘামার অভ্যাস থাকলে রাতে গোছল করে নিতে পারেন। এতে সকালে স্নানের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে এবং সময়ও বাঁচবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে সন্ধ্যাকালীন গরম জলের গোসল শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর ফলে আপনি ঘুমাতে গেলে কোনো বাধা ছাড়াই ঘুমাতে পারবেন।
.
সকালে করণীয়
৪. কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দুপুরের শেষভাগ বা বিকাল বেলা ব্যায়ামের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়, সকালে বাইরের কিছু কাজ বা ব্যায়াম আপনার মস্তিস্ককে সচল করে এবং শরীরের শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে যার কারণে আপনার সুন্দর একটি দিনের সূচনা হতে পারে।
৫. কর্মচাঞ্চল্য দিন শুরুর আগে কিছুটা সময় নিন। মনভরে একটু শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। দিনের শুরুর আগে সারাদিনের নির্ধারিত কাজ নিয়ে একটু ভাবুন এবং সহজেই শেষ করতে পারবেন মনে করে নিজেকে উৎসাহিত করুন। দেখবেন সবকিছু আরো অনেক সহজ মনে হবে।
৬. যখন নাস্তা করবেন একই সাথে খবরের উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিন। এতে বিশ্বের কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর থাকলে সে সর্ম্পকে আগে থেকেই ধারণা পেয়ে যাবেন এবং বুঝতে পারবেন এর ফলে আপনার ব্যবসা কোনভাবে প্রভাবিত কিনা।
৭. বিছানা ছাড়ার আগে মেইল ও মেসেজ ইনবক্স চেক করুন, সারাদিনের জন্য নির্ধারিত করণীয় কী কী কাজ আছে তা দেখে নিন যাতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বেছে নিতে পারেন, একই সাথে দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে পারবেন ও অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন।
৮. কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করার জন্য মনকে সতেজ করে তুলুন এজন্য হয়তো আপনার প্লে-লিস্ট থেকে পছন্দের দুই-একটি গান শুনতে পারেন অথবা অতীতের এমন কোনো মজার ঘটনা মনে করার চেষ্টা করুন যাতে একটু হাসি আসতে পারে।
৯. রাতে কী খেতে চান তা ভেবে রাখুন, এজন্য আপনার ফ্রিজে কী আছে আর কী কী বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে আবার ফ্রিজে যা আছে সেগুলো ঠান্ডা বা বরফ হয়ে আছে সেইগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় আনা লাগবে কিনা ইত্যাদি।
১০. হাসি মুখে দিনটি শুরু করুন। কষ্ট হলেও সুন্দরভাবে আপনার সহকর্মী, প্রতিবেশি বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করুন। অর্থাৎ আপনার অফিসের নৈতিকতার উন্নতি ঘটাতে হবে।
.
দুপুরের ক্লান্তিকে দুর করা
১১. অফিসে ১০-১৫ মিনিট আগে আসার চেষ্টা করুন তাহলে অন্যান্য সহকর্মীরে সাথে দিনের করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন অথবা নিজেই সরাদিনের কিছু কাজের বিশ্লেষণ করতে পারবেন। আবার বিভিন্ন সভা ও উপস্থাপনার বিষয় পুনরায় পাঠ ও সংশোধন করতে পারবেন।
১২. একটানা তিনটা পর্যন্ত কাজ করার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এসময় ক্যাফেইন জাতীয় কিছু খেলে ক্লান্তি দুর হতে পারে।
১৩. অফিসের চেয়ারে বসে যোগব্যায়াম করার চিন্তাটা অবশ্যই উদ্ভট মনে হতে পারে। কিন্তু যদি সহকর্মীদের সাথে কোনো ঝামেলা না পাকিয়ে এটা করা সম্ভব হয় তাহলে এটা হতে পারে মধ্যভাগের চাপ কমানোর এক দারুণ কৌশল।
১৪. জলখাবারের শক্তিকে কখনোই তুচ্ছ মনে করা যাবে না। স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার যেমন বাদাম, ইয়োগার্ট বা কলা সাথে রাখতে পারেন যা আপনার শরীরের শক্তি সঞ্চারিত করবে।
১৫. কাজের বিন্যাস করুন, একটু হাঁটাচলা করুন, কফি পান করার জন্য কফির দোকানে একটা ফোন করুন বা দিনের সংক্ষিপ্ত অংশে সেমিনার কক্ষ থেকে কিছু মেইলের জবাব দিন। এতে করে নিজে সতেজ হওয়ার নতুন একটা পরিবেশ পাবেন।
.
বিকালের কাজ
১৬. অফিস ত্যাগের ১৫মিনিট পূর্বে আগামী দিনের করণীয় বিশেষ কাজগুলো টু-ডু লিস্টে লিখে রাখুন। তাহলে পরবর্তী দিনের কাজ সময় মতো করতে পারবেন, কোন কাজ বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
১৭. অফিস থেকে বের হওয়ার আগে আপনার কাজের স্থান ও প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো পর্যায়ক্রমে গুছিয়ে রাখুন তাহলে পরবর্তী দিনের শুরুতে আপনার কাজ আরম্ভ করতে সহজ হবে।
১৮. কর্মস্থল থেকে বের হওয়ার সময় হলে অনর্থক বসে থাকবেন না। নিয়মিত সঠিক সময়ে অফিস থেকে বের হতে পারলে অফিসের প্রতি কর্মোদ্যোগ ও সন্তুষ্টি বজায় থাকবে যা পরের দিনটা শুরু করতে প্রনোদনা যোগাবে।
১৯. ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ততাপূর্ণ হওয়ায় সারাদিনের ঘটে যাওয়া সুন্দর বিষয়গুলো মনে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আপনার ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনাগুলো লিখে রাখুন এবং একটা সময়ে এসব স্মৃতিচারণ করুন দেখবেন ভালো লাগবে।
২০. ঘুমাতে যাওয়ার আগে থালাবাটি ও ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন তাহলে সকালে উঠে এগুলো পরিষ্কার করার চাপ থেকে মুক্তি পাবেন এবং সুন্দর পরিবেশে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।
.
শয্যাকালীন করণীয়
২১. শরীরকে বিছানায় এলিয়ে দেয়ার একটা উপায় বের করুন। সামান্য কিছু সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যানে মগ্ন হতে পারেন যা আপনার বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করবে এমনকি আপনার মনের গতি বাড়াবে।
২২. প্রতিদিন সকালের একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ্যালার্ম সেট করুন যা আপনার শরীরের ছন্দের সমন্বয় করতে সহায়তা করবে, এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার ক্লান্তি কমাবে।
২৩. সেল ফোন নিরব রাখুন এবং বিছানা যাওয়ার পূর্বে এর পাশাপাশি ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটকেও দুরে রাখুন। কারণ হাতের নাগালে থাকলে এগুলো আরেকটু ব্যবহারের ইচ্ছে জাগতে পারে ফলে আপনার রুটিন মাফিক কাজের ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন হতে পারে।
২৪. আপনি হয়তো ঘুম থেকে জাগার জন্য এ্যালার্ম দিয়ে রাখেন, কিন্তু ঘুমানোর জন্য কি কখোনো এ্যালার্ম ব্যবহার করেছেন? শয্যায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা পূর্বে এ্যালার্ম সেট করুন। আপনাকে মনস্থির করতে হবে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভোরের বাতাস গায়ে লাগাবেন আর এজন্য যুক্তি সঙ্গত সময়ে ঘুমাতে যান।