প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যদি কর্মহীন থাকেন, তাহলে সন্তানের ভরণপোষণ কি তাঁর বাবা কিংবা বাবার অবর্তমানে আইনগত অভিভাবক বহন করতে বাধ্য? এ বিষয় নিয়ে অনেক সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অনেক ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
আইন কী বলে
মুসলিম আইন অনুযায়ী নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ ও আইনগত অভিভাবক হিসেবে বাবার ওপর দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ একজন নাবালক সন্তানের অভিভাবক হবেন বাবা এবং এ সন্তানের সব দায়দায়িত্ব বাবার ওপর থাকবে। এমনকি বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও বাবাকেই নাবালক সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও বাবা কোনোভাবে তাঁর দায়িত্ব থেকে রেহাই পেতে পারেন না। কিন্তু সন্তান যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাহলে এ সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা পালন করতে বাধ্য নন। তবে ছেলেসন্তানের ক্ষেত্রে সাবালকত্ব অর্জন পর্যন্ত বাবা ভরণপোষণ দিলেও মেয়েসন্তানের বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবাই মেয়ের ভরণপোষণ বহন করবেন। মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে তাঁর বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। মেয়েসন্তান যদি সাবালক হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তাহলেও বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা ও কর্মহীন থাকেন, তাহলে বাবার কাছে ভরণপোষণ চাইতে পারেন। আর ছেলেসন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলেও যদি কর্মক্ষম না হন, বাবা ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য নন। তবে ছেলে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও মারাত্মক অসুস্থ থাকেন এবং শারীরিকভাবে কাজ করতে অক্ষম থাকেন, তাহলে বাবাকে এ ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্ক কিন্তু কর্মহীন ছেলে বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বাবা যদি কর্মক্ষম থাকেন, তাহলে কর্মহীন সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্বটি নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।
যদি বিরোধ হয়
বাবা-মা আর সন্তানের দায়-দায়িত্ব আইনকানুন দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। তখনই আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন, যখন বিরোধ দেখা দেয় কিংবা সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও শিক্ষাব্যবস্থার কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ের চাকরিতে ঢুকতে দেরি হয়ে থাকে। অনেকে আবার ব্যবসা করেন বা বিদেশ গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতেও খানিকটা সময় লাগে। আবার মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়েও দেরিতে করছেন। এ অবস্থায় বাবা-মা আর সন্তানের মধ্যে বোঝাপড়া থাকতে হবে। বাবাকেও অনুধাবন করতে হয় বাস্তবতা। হঠাৎ ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ভরণপোষণ বন্ধ করে দিলে ছেলে আরও বিপদে পড়তে পারেন। অনেক সময় বাবার চেয়ে মায়ের আয়-রোজগার ভালো হতে পারে কিংবা বাবা কোনো কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে মা সন্তানের ভরণপোষণ বহন করতে পারেন। বাবা-মা আর প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সম্পর্কের বাধ্যবাধকতা আইন দিয়ে নয়, নৈতিকতা দিয়েই টিকে থাকতে হয়। তবে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, সন্তান কর্মক্ষম হলে উল্টো ভরণপোষণ কিন্তু কর্মহীন বাবা-মাকে দিতে হবে। দেশে এ নিয়ে আইনও রয়েছে।