পথে পথে পড়াশোনা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দৈনন্দিন চলার পথে জ্যাম-যন্ত্রণার ভোগান্তি বা বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনায় বিরক্ত না হয়ে নতুন কিছু রপ্ত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে অনায়াসে অনেক অজানা বিষয় জানা যায়। পথের দু’পাশে একটু আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করলেই চোখে পড়ে শিক্ষার নানা উপকরণ। প্রতিদিন চলার পথে এগুলো চোখ বুলিয়ে নিলে সহজেই মনে গেঁথে যায়, আয়ত্তে চলে আসে অসংখ্য তথ্য যা কাজে লাগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে। তাই চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে হলে নিজেকে বদ্ধ রাখলে চলবে না। চোখকান খোলা রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাছাড়া একটানা পড়াশোনা করে একঘেয়েমিও চলে আসতে পারে। গুলিয়ে যেতে পারে জানা তথ্যও। এজন্য ভালো প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত পড়াশোনার পাশাপাশি সহায়ক হতে পারে চারপাশের নানা মাধ্যম, বিভিন্ন উপকরণ।
বিজ্ঞাপনের বিবিধ বিষয়
পথে বের হয়েই হয়তো জ্যামের কবলে পড়ে থেমে আছেন রাস্তার মাঝে। যে যানেই যান না কেন বসে না থেকে উপাই নেই। আশপাশে খেয়াল করলেই দেখবেন চারিদিকে হরেকরকম বিজ্ঞাপনি বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ব্যানার এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামফলক। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি সংস্থার সাফল্য সম্বলিত বিজ্ঞাপনও চোখে পড়বে। যেমন রাজধানীর বিজয় সরণির রাস্তার পাশে বিশাল বিলবোর্ডে বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে ইপিজেডের সাফল্যের ধারা। পাশাপাশি বিনিযোগ, নতুন শিল্প স্থাপন, উৎপাদনসহ আছে নানা তথ্যের হালনাগাদ। একই ধরনের বিলবোর্ড ঢাকা, গাজীপুরের কয়েকটি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। আবার ফার্মগেটের কৃষিবিদ ভবনের সামনে টাঙানো একটি ব্যানারে তুলে ধরা হয়েছে কৃষিক্ষেত্রের সাফল্য। কৃষির উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিনিয়োগ, ভর্তুকি, উৎপাদন বৃদ্ধি এমনকি দশ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার তথ্যও। এমনিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডে হয়তো উল্লেখ রয়েছে সিমেন্টের উপাদান আবার কোনোটিতে টুথপেস্টের উপকরণ। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার জন্য দারুণ কার্যকর এসব টুকিটাকি তথ্যসম্বলিত বিজ্ঞাপনি বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ব্যানার।
স্থাপনার স্থান
অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে আছে হয়তো আমাদের আশপাশে, চোখে পড়ে চলার পথে। এসব স্থাপনা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য শুধু বই পড়ে সব তথ্য মনে রাখা কঠিন। চোখে দেখলে মনে রাখা সহজ হয়। গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আবার পড়া বিষয়গুলো মিলিয়ে নেয়া যেতে পারে চলার পথে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নাম, লোগো, স্লোগান অবস্থান ইত্যাদি বিষয় জেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। একইভাবে কোথাও ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব নদী, পাহাড়, বন চোখে পড়ে সেগুলো সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা নিতে হবে। ধীরে ধীরে এই ইতিবাচক অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারলে কোনোকিছু ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না, ভুল উত্তর দেয়ার প্রবণতা কম থাকে।
নানা বানান
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বানান সংশোধন ও নতুন শব্দ জানা সহজেই আয়ত্তে আনার জন্য চলার সহায়ক হতে পারে পথের এসব উপকরণ। ইংরেজি ও বাংলা উভই বানানের ভুল সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হয় চর্চার। এই কাজটি রুটিন করে সব সময় করা হয়ে ওঠে না। তাই বেচে নেয়া যায় চলার পথ। যেমন রেস্টুরেন্ট, ব্যুরো, ইন্সটিটিউট ইত্যাদি শব্দেব বাংলা ও ইংরেজি বানান হরহামেশা চলতি পথে চোখে পড়ে। হয়তো কোনো কোনো সাইনবোর্ড, ব্যানারে ভুল বানানও থাকতে পারে সেই ভুল ধরে নিজেকে শুধরে নেয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে এভাবে। আবার অনেক সময় খুব সহজ এবং সাধারণ বানানও ভুল হয়। যে কোনো বাহনে বসে চলার সময় একটু লক্ষ্য রেখে এগুলে, এগুলো ঠিক করে নেয়া সহজ হয়। নিজের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতেও কাজে আসে এ পদ্ধতি।
দিবসের দিশে
বিশেষ দিবসে থাকে বিশেষ আয়োজন। পোস্টার, ব্যানারে সাজানো হয় পথের দু’পাশ। কখনও বা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালির, অলোচনা অনুষ্ঠান। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনের এসব নানা উদ্যোগ, আয়োজনে শানিত হতে পারে নিজস্ব প্রস্তুতি। বের হয়ে আসতে পারে নানা অজানা তথ্য। হতে পারে জানা তথ্যের হালনাগাদ। কোনো দিবসের তাৎপর্য, প্রতিপাদ্যসহ বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার কিংবা ক্রোড়পত্রের দিকে খেয়াল রাখলে অনায়াসেই মনে রাখা যায় দিবসভিত্তিক তথ্য। তাছাড়া লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভালো করাটা সহজ হয়।
পথে হোক পড়াশোনা
প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতির জন্য পাঠ্যবিষয়ের পাশাপাশি অর্থনীতি, অবকাঠামো, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভৌগোলিক পরিধি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়, চোখ রাখতে হয় চলমান ঘটনায়। এজন্য প্রাসঙ্গিক বইয়ের পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা, সমায়িকী পড়ার প্রয়োজন হয়। যাত্রা পথের দূরুত্ব ও অনুমানিক সময় চিন্তা করে হাতে নেয়া যেতে পারে পছন্দের পত্র। দৈনন্দিন সংবাদ পড়ার পাশাপাশি বিশ্লেষণ ভিত্তিক নিবন্ধ, পর্যালোচনা, সাক্ষাৎকার পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে তা পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজে আসে। চলতি পথে পড়াশোনার কাজটিও করতে পারেন নিজের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে। নিয়মিত খবরের পাশাপাশি প্রয়োজনমতো বিষয় রেকর্ড করে বা অ্যাপসের মাধ্যমে শানিত করতে পারেন নিজের প্রস্তুতি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অনিয়ন্ত্রিত পড়াশোনায় চোখে বা মস্তিষ্কের ওপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে। যে কেউ প্রতিযেগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারে, পৌঁছে যেতে পারে সাফল্যের দোড়গোড়ায়।