দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাংলাদেশ তার ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই নানারকমের দুর্যোগের শিকার। বাংলাদেশকে বলা হয় দুর্যোগের মাতৃভূমি। কারণ একমাত্র আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দুর্যোগ এখানে কম বেশি সংঘটিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম হল সাইক্লোন ও বন্যা।
প্রতি বছর দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে দুর্যোগজনিত কারণে দেশে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয় সেগুলো সঠিকভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টি দিন দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিষয় হিসেবে চাকরির বাজারেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাছাড়াও দেশের বাইরেও বিষয়টির অনেক কদর রয়েছে। এ জন্য এ বিষয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়ে পড়ালেখা করে আপনিও গড়তে পারেন আপনার সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কেন পড়বেন
নিজের ভালো অবস্থান তৈরি করার পাশাপাশি দেশকে সেবা করার সুযোগ, এর থেকে ভালো কি হতে পারে। এ সুযোগটি শতভাগ রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিষয়ে পড়াশোনা করলে। পড়ার জন্য কেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি বেছে নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দুর্যোগের সময় ও দুর্যোগপরবর্তী সময় সাধারণত মানুষ নানারকম কষ্ট এবং ভোগান্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। যার মূল কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার অভাব ও নানারকম অব্যবস্থাপনা। তাই আমি চাই, সঠিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হয়ে অন্তত সেই সময় সঠিক উপায়ে মানুষকে সাহায্য করে তাদের পাশে দাঁড়াতে। এ কারণেই মূলত এ বিষয়টি বেছে নেয়া এবং পড়ালেখা শেষে মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
কাজের সুযোগ থাকছে যেখানে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। এ বিষয়ে পড়ালেখা শেষে আপনি সরকারের পরিবেশ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস, এলজিইডি, ভূমি অধিদফতর, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ইত্যাদিতে রয়েছে চাকরির সুযোগ। পাশাপাশি সুযোগ থাকছে বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, এনজিও, ডোনার এজেন্সি, একাডেমিক ও রিসোর্স ইন্সটিটিউটসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেভ দ্যা চিলড্রেন, কেয়ার বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড, ইউএনডিপি, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি। এছাড়াও ডিজাস্টার, সাইক্লোন শেল্টার ডিজাইন, রেসিস্টেন্ট বিল্ডিং তৈরি, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ত্রাণ ও সাহায্য ব্যবস্থাপনা, টিমওয়ার্ক বিল্ডিং সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
বেতন কাঠামো
এ পেশার শুরুতেই আপনি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা সম্মানী পাবেন। পরে পর্যায়ক্রমে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেদে অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতীর ভিত্তিতে সম্মানী আরও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, এনজিও, ডোনার এজেন্সি, একাডেমিক ও রিসোর্স ইন্সটিটিউটসহ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির শুরুতেই স্মার্ট বেতন দিয়ে থাকে।
কোথায় পড়বেন
দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু যুগোপযোগী এ বিষয়টির ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্রভাবে চালু হয় ‘ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারিবিলিটি স্টাডিজ’। প্রাথমিকভাবে ২০০৯ সাল থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধীনে স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও ২০১২ সাল থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে স্বতন্ত্র এ ইন্সটিটিউটে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়:
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এই বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর ডিগ্রি চালু আছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। যোগাযোগ : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ১০২, শুক্রাবাদ, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৭। মোবাইল : ০১৭১৩৪৯৩০৫০। ওয়েব : www.daffodilvarsity.edu.bd ।
ব্র্যাক ইউনিভারসিটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক ২০০৫ সাল থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ২টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা চাওয়া হয় কমপক্ষে ৩ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এবং উপযুক্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হতে পারবেন।