চাকরি ছাড়ার আগে…
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
গত মাসে তাড়াহুড়োর মধ্যে চাকরি ছেড়ে নতুন অফিসে যোগ দিয়েছেন তাসনোভা নওরিন। পুরনো অফিসে কোনোমতে একটি পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নতুন অফিসে যোগ দেন তাসনোভা। আগের অফিসের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ই-মেইল ও ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তাসনোভা কোনো সাড়া দেননি। সাড়া না দেয়ায় যা হওয়ার তাই হয়েছে। যা তাসনোভার জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। পুরনো অফিসে কয়েক বছর চাকরি করায় তাসনোভার অর্জিত ছুটি বাবদ বেশ কিছু অর্থ বরাদ্দ ছিল। বিনোদন ছুটি-ভাতা ও গ্রাচ্যুইটি মিলিয়ে মোটা অংকের পাওনা ছিল তাসনোভার। আগের ছুটিছাটা আর বেতন-বোনাস সবমিলিয়ে বেশ বড় অংকের টাকা থেকে বঞ্চিত হন তাসনোভা।
এমন আচরণকে মানবসম্পদ পরামর্শকরা নিজের পেশার সঙ্গে দূরত্ব আর ব্যক্তিত্বের অধঃপতন হিসেবেই দেখেন। তারা বলেন, যেকোনো ব্যক্তিকেই চাকরি ছাড়ার আগে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত। হুটহাট সিদ্ধান্তে চাকরি পরিবর্তন শুধু নিজেরই ক্ষতি নয়, কর্মস্থলের সার্বিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের তথ্যমতে, যেসব কর্মী তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে চাকরি ছাড়েন, তারা সারা জীবনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়বার কর্মস্থল বদলাতে পারেন। তাদের নামে অফিসে ঊর্ধ্বতনদের সন্দেহের মাত্রা একটু বেশিই থাকে। এসএম গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, পেশার প্রয়োজনে মানুষ চাকরি বদলাতেই পারেন। নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চাকরি পরিবর্তনের সময় দায়িত্বশীল আচরণের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। এসিআই গ্র“পের সিনিয়র অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, আসলে চাকরি ছাড়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটি আর একবার মনের আয়নায় ঝালাই করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর চূড়ান্ত পরামর্শ হচ্ছে, চাকরি ছাড়ুন নীরবে, সতর্কতার সঙ্গে, যতটা সম্ভব গোপনে। ‘আমরা গ্রুপ’র মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার মারুফ আহমেদ বলেন, চাকরি ছাড়ার সময় প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক বিষয় ছাড়াও আবেগগত নানা বিষয়ও সংশ্লিষ্ট থাকে। এসব দিক না মিটিয়ে চাকরি ছাড়লে তা নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
যা করবেন
* স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছান : চাকরি ছাড়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি চাকরি ঠিক ছাড়ছেন কিনা। আবেগের বশবর্তী হয়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সে সিদ্ধান্তের কারণে যেন পস্তাতে না হয়; সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। চাকরি ছাড়ার পরে আপনি যদি আবার সে প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসেন বা ফিরতে চান, সেটা আপনার ও প্রতিষ্ঠানের উভয়ের জন্যই বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে।
* প্রতিটি অফিসেই চাকরি ছাড়ার কয়েকদিন আগে মানবসম্পদ বিভাগকে অবহিত করার নিয়ম চালু থাকে। এটিকে বলা হয়ে থাকে নোটিশ পিরিয়ড। এটি এক-দু’মাস কিংবা অফিস ভেদে ভিন্ন হতে পারে। এ সময় মানবসম্পদ বিভাগ নতুন কর্মী নেয়াসহ আপনার প্রাপ্য বেতন-বোনাসের হিসাব করার সুযোগ পায়।
* চাকরি ছাড়ার আগেই মানবসম্পদ বিভাগ থেকে অর্জিত ছুটি, চাকরির সময়কাল, বিনোদন সুবিধা সম্পর্কে জেনে আসুন।
* আপনার অর্জিত ছুটি আর বেতন-বোনাস-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে এ সময় আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর মানবসম্পদ বিভাগকে অবহিত করুন।
* আর্থিক হিসাব-নিকাশের দিকে খেয়াল রাখুন। বিল-বকেয়া কিংবা ছোটখাটো সব আর্থিক হিসাব মিটিয়ে ফেলুন।
* শেষ দিন পর্যন্ত পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।
* দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন : আপনি কোনো অফিসে কাজ করছেন মানেই সেখানে আপনার ওপর নির্ধারিত কিছু কাজের দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্বটা কিন্তু আপনার স্থানে আসা নতুন ব্যক্তিকে পালন করতে হবে। নতুন কর্মীকে আপনার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দিতে আপনিই সবচেয়ে ভালো পারবেন। তাই আপনার কাজ আপনিই বুঝিয়ে দিয়ে আসতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা ফাইলপত্রও বুঝিয়ে দিন।
* আপনার নামে অফিস থেকে বরাদ্দ হওয়া ল্যাপটপ-কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের সিম বা কোনো ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটস, গাড়ি-মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিন। এক্ষেত্রে লিখিত ছাড়পত্র নিতে ভুল করবেন না।
* পুরনো অফিস থেকে আপনার অব্যাহতিপত্র আর অভিজ্ঞতার সনদ নিতে ভুলবেন না।
* চাকরি ছাড়ার সময় অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে পুরনো রাগ-অভিমান কাটিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখুন।
* সবশেষে, পুরোনো কর্মস্থলের সবাইকে ই-মেইলে কিংবা সরাসরি ধন্যবাদ জানিয়ে নতুন উদ্যমে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করুন।
যা করবেন না
* নতুন চাকরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতি পত্র দেবেন না।
* স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দুই অফিসে একসঙ্গে কাজ করবেন না। এটি ক্যারিয়ারে ক্ষতি বয়ে আনবে।
* পুরনো অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা দলিলপত্র নতুন অফিসে কাজে লাগবে, এমনটা ভেবে নিজের সঙ্গে নেয়া উচিত নয়। যদি অতিপ্রয়োজনী মনে করেন তাহলে সফটকপি মেইলে কিংবা পেইনড্রাইভে নিয়ে নিতে পারেন।
* নতুন জায়গায় যোগদানের আগের কয়েকটা দিন পুরনো অফিসে নতুন অফিসের কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকুন।