পড়ার বিষয় : উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। সমাজে বিদ্যমান এই বৈষম্য আর সামাজিক কুসংস্কার শনাক্ত করে এর প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের মাধ্যমে নারীদের স্বীয় সম্মানের অবস্থানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে অধ্যয়নের সুযোগ তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে চালু হয়েছে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ। দেশের উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অবদান থাকা দরকার। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এ দেশে একটু একটু করে নারী-পুরুষ উভয়ে মিলে দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত নারীর অধিকার সঠিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিষয়ে পড়ালেখা করে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে গড়ুন নিজের ভালো অবস্থান। এ ছাড়া কলম ও সাহসের জোরে আপনিও আপনার নিজ স্থান থেকে চালিয়ে যেতে পারবেন বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন।
কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য :মূলত অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ উন্নয়নের প্রতিটি খাতে নারী কীভাবে অবদান রাখছেন অথবা সমাজের সব অবস্থানে নারীকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়- এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয় এ বিভাগের কার্যক্রমে। এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্য ও জরিপ চালনার মাধ্যমে বর্তমান সমাজে নারীর অবস্থান নির্ণয়সাপেক্ষে বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পন্থা নিরূপণ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণেও কাজ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে কী করে পুরুষের মানসিক উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন করা যায়, তার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম এবং ভর্তির যোগ্যতা :ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০১ সাল থেকে এ বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যারা একটু ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে পড়তে চান, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অন্তর্ভুক্ত এ বিভাগে ভর্তি হতে পারেন। শুরুতে এ বিভাগের নাম ছিল ডিপার্টমেন্ট অব উইমেন স্টাডিজ।
বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়ের সম্পর্কের গুরুত্ব দিয়ে এর নামকরণ হয়েছে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ। সেমিস্টার সিস্টেমে চার বছরের স্নাতক সম্মানে ভর্তির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার স্বাভাবিক নিয়মে ‘খ’ এবং ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে হবে। স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি এমফিল এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে এই বিভাগে।
কী কী পড়ানো হয় :উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের পড়াশোনার বিষয়ে রয়েছে বৈচিত্র্য। উইমেন সোসাইটি কালচার, উইমেন এনভায়রনমেন্ট, উইমেন মুভমেন্ট, ফেমিনিস্ট থিওরি, ফেমিনিস্ট কলোনিয়ালিজম বিষয়ে রয়েছে বিস্তর জ্ঞান লাভের সুযোগ। আর আছে জেন্ডার অ্যান্ড কালচার, জেন্ডার সিটিজেনশিপ অ্যান্ড গভর্নমেন্ট, গভর্নমেন্ট পোভার্টি অ্যান্ড লিটারেসি প্রভৃতি বিষয়। জ্ঞানের অন্যান্য শাখা, যেমন- নৃবিজ্ঞান, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানও পড়ানো হয় এ বিভাগে।
বিদেশে পড়ার সুযোগ :উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ থেকে পাস করে বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে অনেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগে ভালো ফল করতে পারলে নরওয়েতে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া কানাডা, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
কাজের ক্ষেত্র :কেন পড়ার জন্য উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বেছে নেওয়া? এ প্রশ্নের জবাবে ওই বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বৈষম্যের শিকার আমি। এই বৈষম্যের গোড়াপত্তন আমার পরিবারেই। অনেক সংগ্রাম করে এতদূর এসেছি। এ বিভাগটি যেন আমার কথাই বলে।’ ‘এ বিভাগে পড়তে আসার পরেই নারী বৈষম্যের দিকগুলো স্পষ্টরূপে ধরা পড়ে আমার চোখে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী নয়, এ বিভাগ আমাকে গড়ে তুলছে সচেতন নাগরিক হিসেবেও।’ কথাগুলো বলছিলেন একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আলী আহসান। এ বিভাগে অধ্যয়নের পর আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, শিক্ষাক্ষেত্রসহ সবখানেই মিলবে কাজের অফুরন্ত সুযোগ। তাই গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।
যোগাযোগ :ডিপার্টমেন্ট অব উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১০০০। ই-মেইল : wgs@du.ac.bd