আত্মবিশ্বাস বাড়াতে…
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
‘সাহস নিয়ে কোনো কাজ শুরু করলে শুরুতেই অর্ধেক বিজয় হয়ে যায়’ বলে বলেছিলেন কবি হাইরিন হাইনে। আর সফলতার এক প্রবাদ পুরুষ বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম আজাদ বলেছিলেন ‘সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।’ দারিদ্রের সর্বনিম্ন রেখায় থাকার পরও কেবল নিজের মেধা আর আত্মবিশ্বাসের সাথে সততার মিশ্রনে যিনি হয়েছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। রবার্ট ব্রুস যদি হাল ছেড়ে দিতেন তবে দেশমাতা মুক্ত করা সম্ভব ছিলো না।
সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। অনেকে আছেন যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবেই নিজেকে তুলে ধরতে পারেন না। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের শেষ বিন্দুতে পৌঁছাতে হলে আত্মবিশ্বাস অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। আত্মবিশ্বাস শুধু একটি শব্দ নয়, একটি শক্তি যা আমাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিও সহজ ভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
স্কুলের বাস্কেটবল দল থেকে বাদ পড়ে রুমে নিজেকে বন্দী করে যে ছেলেটি চিৎকার করে কেঁদেছিল, কিছুদিন পরেই অদম্য সেই ছেলেটিকে বিশ্ব চিনে নেয় ৬ বার এনবিএ চ্যম্পিয়ন হিসেবে। ছেলেটির নাম মাইকেল জর্ডান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রেকে চাকরি হারাতে হয়েছিলো কারণ অভিযোগ ছিলো টেলিভিশনের জন্য উপযুক্ত না সে।
তাই আপনিও পারবেন, না পারার কিছু নেই। তবে এক সাথে একই মানুষ সব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনা। এখানে তার ভালো লাগার ব্যাপারটিও কাজ করে। যে কাজটি ভালো লাগছে সেটি ঠিকঠাক করে গেলেও এক সময় ঠিকই পুরষ্কার পাবেন।
- ফিরে দেখুন : নিজেকে জানার চেষ্টা করুন ভালো ভাবে। কোন কোন বিষয় আপনার নিয়ন্ত্রণের ভিতরে আছে আর কোনটি নেই। নিজের ডায়েরীতে লিখুন এবং সে সকল বিষয় নিয়েই চিন্তা করুন যা পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার আছে। তা হতে পারে আপনার পেশাগত দিক বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক। যেটুকু আপনি সক্রিয় ভাবে পরিবর্তন করতে পারেন তাতেই নিজের সময় ও শক্তি ব্যয় করুন। যদি কোন কিছু আপনার সাধ্যের বাইরে থাকে তবে তা মেনে নিন এবং সামনে অগ্রসর হন। আপনার শক্তি অন্য কোথাও ব্যয় করুন।
- পরিবর্তন হওয়া : নোট করে প্রতিদিনের কাজগুলো থেকে ভুল চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। এভাবে প্রতিদিন একটি করে ভুল শুধরাতে থাকলে নিজের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন আসতে থাকবে। তাই নতুন নতুন বাধা আসলে তাকে মোকাবেলা করার জন্য নিজের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে পারা আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির একটি ভালো উপায়।
- কঠিন সময়ে হাসা : হাসিকে বলা হয় সর্বোত্তম ওষুধ। তবে কষ্টের মুহূর্তগুলোতে মানুষ হাসতে পারে না। সেই সময় আমাদের সুখের সময়গুলোর দিকে মনযোগ দেওয়া উচিৎ। নেতিবাচক ধারণা বদলাতে পারলে সে সময়ও ভেঙে পড়ে না মানুষ। তাই মনের মধ্যে নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখা উচিৎ।
- নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে চলুন: যদি কোন ব্যক্তি বা পরিস্থিতি আপনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে একটু ভেবে নিন সেই ব্যক্তি বা পরিস্থিতির আপনার জীবনে ঠিক কতটা গুরুত্ব আছে।ইতিবাচক বন্ধুত্ব এবং কাজ কর্মকে জীবনে প্রাধান্য দিন।
- নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন : মনে রাখবেন, আপনি আপনার সাধ্যের অতিরিক্ত কখনই কিছু করতে পারবেন না।পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে নিজেকে দোষ দিবেন না বরং ভাবুন আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে।
- কিছু শরীরচর্চা করুন : নিয়মিত কিছু শরীরচর্চা আপনাকে চিন্তা মুক্ত এবং শরীর গঠনেও সাহায্য করবে। কিছু ভাল ব্যায়াম আপনাকে চাপ মুক্ত করবে এবং সতেজ করবে। এসব আপনার আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। মেডিটেশন করতে পারেন।
- প্রিয়জনদের সাথে ভালো সময় কাটান: কাছের মানুষদের সাথে কিছু ভাল সময় কাটান। যা জীবনের কঠিন সময়েও আপনি মনে করতে পারবেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিবে।এটা আপনার ভিতরে আত্মসম্মান গড়ে তুলবে।
- চাপকে দূরে রাখুন : বের করুন কোন জিনিসটা আপনাকে চাপে ফেলছে। আপনি কি খুব বেশি কাজ করছেন। নিজের কাজকে বোঝা হতে দিবেন না। কার্য তালিকায় এমন কিছু কাজ অন্তর্ভূক্ত করুন যা আপনাকে আনন্দ দিবে।
- নতুন কিছু করুন: নতুন কোন শখ বা কাজ আয়ত্ব করুন। নতুনত্ব মন ও মস্তিষ্কের জন্য ভাল। এটা আপনাকে নতুন কিছু অর্জনের অনুভূতি দিবে এবং নিজের মূল্য বুঝতে সাহায্য করবে।
- ছোট এবং সহজ লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: কাজের এমন মানদ- বের করুন যা আপনি অর্জন করতে পারবেন। লক্ষ্য অর্জনের পর একটু থামুন এবং ভেবে দেখুন আপনি কতটুকু অর্জন করতে পারলেন।নিজের সাফল্য শনাক্ত করতে পারলে তা আপনার মনোভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
- পুরানো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করুন: এমন কোন বন্ধুকে ফোন করুন যার সাথে অনেকদিন আপনার কোন যোগাযোগ হয়নি।পুরানো সম্পর্কে নতুন করে ফিরিয়ে আনলে আপনার ভিতর সামাজিক বন্ধনের চেতনা গড়ে উঠবে। নিজেকে সকলের সাথে যুক্ত করলে আপনার মনও সতেজ হবে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
- মনের খোরাক যোগান: কিছু ভাল বই পরুনবা ভাল গান শুনুন যা আপনার চিন্তাজগৎকে আরও সমৃদ্ধ করবে। নিজেকে শিল্পচর্চায় ব্যস্ত রাখুন যা আপনাকে পূর্ণতা এনে দিবে। কিছু ছবিও দেখতে পারেন। হলিউডে এ নিয়ে প্রচুর ছবি তৈরি হয়েছে অগাস্ট রাশ, ফরেস্ট গাম্প, থ্রি ইডিয়টস, সোয়াশাংক রিডেম্পশান, পারসুইট অব হ্যাপিনেস,দ্য ব্লাইন্ড সাইড, ১২৭ আওয়ার্স, কোচ কার্টার ইত্যাদি।
- শেখার আগ্রহ তৈরি করা : প্রতিদিনের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কিছু না কিছু শিখি। ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষা অর্জন করা। আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে পারে যদি ব্যক্তির ভুল থেকে শিক্ষার্জন করার অভ্যাস থাকে। তাই জীবন থেকে শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে অবশ্যই নোট রেখে ভুলগুলোকে চিহ্নিত করে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
মিকি মাউসের স্রষ্টা ওয়াল্ট ডিজনি পত্রিকার চাকুরী থেকে চাকরীচ্যুত হয়েছিলেন। অভিযোগ ছিলো তার ইমাজিনেশন ক্যাপাসিটি এবং অরজিনাল আইডিয়া নাই। এরপর ২২টি একাডেমিক এওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি। তাই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, আপনিও পারবেন।