পড়ার বিষয় : অর্থনীতি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রফেসর ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিন প্রধান এবং পাশাপাশি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
: যারা অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করছে, তাদের কোন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ বেশি থাকে?
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : সৃষ্টির শুরুতে এই পৃথিবীতে শুধু একজন কিংবা দু’জন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ পৃথিবীতে প্রায় ৭৫০ কোটি মানুষ বসবাস করে। অর্থনীতি সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিত করে মানব জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করে। সংগত কারণেই যতই দিন যাচ্ছে, ততই এর প্রায়োগিত দিকটি বিস্তৃত হচ্ছে। তাই অর্থনীতির কর্মক্ষেত্র দিনে দিনে সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ, উন্নয়ন সংস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে চাকরির সুযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
: যারা অর্থনীতি বিষয়ে পড়তে চায়, তাদের এইচএসসি পরীক্ষার পর কেমন প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন?
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্য ইংরেজি, আর্থ-সামাজিক বিষয়াবলী, সাম্প্রতিক বিশ্বের ঘটনাপঞ্জী, চলতি ঘটনা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা অর্জন অতীব জরুরি। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করা একান্ত প্রয়োজন।
: যখন কোনো শিক্ষার্থী অর্থনীতিতে পড়ার সুযোগ পায়, তখন তিনি কোন উপায়ে নিজেকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে পারেন?
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : অর্থনীতিতে পড়ার সুযোগ পেলে একজন নিজেকে সংগত কারণেই সৌভাগ্যবান মনে করতে পারে। সার্বক্ষণিক অর্থনীতির মৌলিক তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ, গণিত, পরিসংখ্যান, সামাজিক বিজ্ঞান, সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা, জাতীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সবসময় নিজেকে আপডেট রাখা জরুরি। আর্থ-সামাজিক ইস্যুগুলোর সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রতিনিয়ত জ্ঞানার্জন প্রয়োজন। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণসহ তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক বিষয়সমূহ চর্চার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া দক্ষ হওয়ার জন্য প্রেজেনটেশন দক্ষতার উপরও জোর দিতে হয়।
: একজন শিক্ষার্থীর কি ভালো সিজিপিএ অর্জনের জন্য জোর দেয়া উচিত নাকি গবেষণাধর্মী বিভিন্ন কাজকে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত?
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : একজন শিক্ষার্থীর গবেষণাধর্মী বিভিন্ন কাজকে প্রাধান্য দেয়াটাই বেশি জরুরি। যার ফলশ্রুতিতে স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে সিজিপিএ যেমন ভালো হবে, তেমনি অর্থনীতির খুঁটিনাটি বিষয়েও সম্যক ধারণা জন্মাবে । আর এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভালো সিজিপিএ আপনাকে চাকরি ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।
: অর্থনীতি পড়ে গবেষণাধর্মী কাজের সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্ব আর্থ-সামাজিক গবেষণার উর্বর ক্ষেত্র। অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত নানাবিধ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা উদ্ভূত হয়। এসব সমস্যার সমাধান করতে গবেষণা খুবই জরুরি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আর্থসামাজিক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেমন : বিআইডিএস, সিপিডি, পিআরআই, উন্নয়ন সমন্বয় ইত্যাদিসহ আনুষ্ঠানিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক খাতে নানাবিধ গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তদুপরি, মানুষের মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্র যেমন : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, বিদ্যুৎ, পানি, শ্রমিকের অধিকার, মজুরি, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়েও ব্যাপক গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
: অর্থনীতিতে পড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ কতটুকু?
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে, অন্য যে কোনো বিষয়ের তুলনায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ বেশি। কেননা আঞ্চলিক, রাষ্ট্রীয়, বৈশ্বিক সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক সমস্যা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে অধ্যয়ন করলে দেশ তথা মানবতার সেবা করার সুযোগ অনেক বেশি। এক্ষেত্রে প্রথম যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হল ইচ্ছাশক্তি। কোনোভাবে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ বিদেশে অর্থনীতি বিষয়টির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেউ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চেষ্টা করলে এবং ভালো সিজিপিএ থাকলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগটা ত্বরান্বিত হয়।
: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
ড. শাহ্নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহ্মেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ