দক্ষ প্রজন্মের লক্ষ্যে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির বাজারটাও বদলে যাচ্ছে দ্রুত। ভালো সিজিপিএ যে ভালো চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না, সেটা এখন শিক্ষার্থীরা জানেন। কর্মক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হলে আরও কিছু দক্ষতা থাকতে হয়। এই দক্ষতাগুলো গড়ে তুলতেই সাহায্য করে ‘ক্র্যাশ কোর্স’।
ক্র্যাশ কোর্স কী? পুরো ঘটনাটা জানতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকানো প্রয়োজন।
২০১৫ সালের কথা। চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাবছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণন বিভাগের ছাত্র রায়হান খন্দকার। সে বছর এপ্রিলে তিনি হাজির হলেন তরুণদের জন্য ‘ক্র্যাশ কোর্স’ নামের একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ নিয়ে। কোম্পানিগুলোর চাওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতার যে ফারাক, সেটা কমিয়ে আনাই ছিল এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। রায়হান বলছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে দক্ষতার অভাব আছে। অনেক শিক্ষার্থী খুব সাধারণ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানেন না। কেউ দেখা যায় মাইক্রোসফট অফিসের ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেন না। কেউ কেউ ইন্টারভিউ দিতে ভয় পান। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রাথমিক বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে আমরা কাজ করছি।’
গত দুই বছরে মোট চারটি পর্বে (রায়হানরা বলছেন ‘সিজন’) কর্মশালার আয়োজন করেছে ‘ক্র্যাশ কোর্স’। সেখানে শেখানো হয়েছে মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট, মাইক্রোসফট অফিস, ব্র্যান্ডিং, পাবলিক স্পিকিংয়ের মতো বিষয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞজনেরা এই কর্মশালাগুলো পরিচালনা করেন। প্রতিটি সিজনে ছয়টি করে সেশনের আয়োজন করা হয়। প্রথম তিন সেশনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর হাতে-কলমে পরিচালিত হয় কর্মশালা। আর পরের তিন সেশনে হয় সেগুলোর ওপর পরীক্ষা।
‘অন্যান্য যেকোনো কর্মশালার সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা এখানেই যে, আমরা সবাইকে সার্টিফিকেট দিই না। প্রতিটি পরীক্ষায় যাঁরা শতকরা ৫০ ভাগের বেশি নম্বর পান, কেবল তাঁরাই সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন,’ বললেন রায়হান। পরীক্ষাগুলো যে আসলেই নামমাত্র নয়, তা বোঝাতে একটা তথ্যও যোগ করলেন তিনি। গত সিজনে মোট অংশগ্রহণকারী ২০৮ জন হলেও, সিজন শেষে সনদ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ‘এইস দ্য কেইস’ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ‘ক্র্যাশ কোর্স’। আর নব্য গ্র্যাজুয়েটদের ভালো চাকরি নিশ্চিত করতে ‘ক্যারিয়ার গ্রুম আপ’ নামক একটি সেমিনারেরও আয়োজন করেছেন তাঁরা।
নতুন সিজন শুরুর আগে ফেসবুক পেজে নিবন্ধনের জন্য নাম আহ্বান করা হয়। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নাম নিবন্ধন করতে হয়। বিনা মূল্যেও কিছু কিছু কর্মশালা পরিচালনা করে ক্র্যাশ কোর্স। প্রথম তিনটি সিজনে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করলেও গত সিজন থেকে এই আয়োজন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া সুযোগ আছে ক্র্যাশ কোর্সকে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাওয়ার। সে ক্ষেত্রে আগ্রহের কথা তাদের ফেসবুক পেজে জানালেই হবে। পেজের লিংক: goo.gl/3ceDOz
ক্র্যাশ কোর্সের আরেকটি দিক হলো, এর আয়োজকেরা কেবল গৎবাঁধা চাকরিতে বিশ্বাসী নন। তাঁরা মনে করেন, প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা পছন্দের জায়গা আছে। সেই পছন্দ অনুযায়ীই কাজের সুযোগ করে দিতে চেষ্টা করে ক্র্যাশ কোর্স। এ নিয়ে বেশ আশাবাদী শোনাল রায়হানকে। ‘এ দেশে প্রচুর স্কুলের ছাত্রছাত্রী ছবি আঁকতে পছন্দ করে। কিন্তু বড় হয়ে তারা চাকরির জন্য অন্য কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমরা যদি কোনো একটা স্কুলে গিয়ে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শিখিয়ে দিই, তাহলে সেই শিশুটাই কিন্তু পরবর্তী সময়ে একজন বড় ডিজাইনার হয়ে যেতে পারে। একটা সামান্য কর্মশালা একজন মানুষকে ভবিষ্যতে তার ভালোবাসার কাজটা করতে সাহায্য করবে—এটা তো অনেক বড় একটা ব্যাপার।’
কথায় কথায় রায়হান জানালেন ক্র্যাশ কোর্সের ভবিষ্যৎ-ভাবনাও। ‘আমাদের দেশের রেমিট্যান্স বাড়ছে, এটা সত্য। কিন্তু পুরোটাই আসছে যাঁদের দ্বারা, তাঁরা কায়িক শ্রমিক। এর অর্থ হলো, আমরা মানসিক শ্রমিক বিশ্ববাজারে পাঠাতে পারছি না। আমরা চাই সারা দেশে ক্র্যাশ কোর্স ছড়িয়ে দিতে। যেন একটি দক্ষ প্রজন্ম গড়ে ওঠে। যেই প্রজন্ম ভবিষ্যতে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়গুলোতে যেতে পারবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণের মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে পারবে।’