কৃষি অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক কর্মক্ষেত্র
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
কৃষিই বাঙালির কৃষ্টি। এদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কৃষিতে উন্নতির কারণে ১৬ কোটি মানুষের এদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের ৮০-৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। দেশ কৃষিনির্ভর হওয়ায় দারিদ্র্য দূরীকরণ ও গ্রামীণ উন্নয়নে কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব অনেক। আর এ গুরুত্ব থেকেই কৃষিকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যারা কৃষি অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন ও গবেষণা করছেন তাদের জন্য রয়েছে বহুমাত্রিক কর্মক্ষেত্র। দিন দিন ক্ষেত্রগুলো আরও বিস্তৃত হচ্ছে। রয়েছে দেশের বাইরেও কাজ করার অপার সুযোগ। সব মিলিয়ে কৃষি অর্থনীতির দিগন্ত এখন অনেক বিস্তৃত।
প্রসপেক্ট
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বটেই, কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রোকেয়া বেগম এ বিষয়ে বলেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নে এদেশে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের ভূমিকা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোতে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্ব উপলব্ধি করে কৃষি অর্থনীতিবিষয়ক কোর্স চালু করছে।
কর্মক্ষেত্র
কৃষি অর্থনীতির ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী গ্রাজুয়েটদের দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মকমিশনের আওতাভুক্ত বিসিএসের যে কোনো সাধারণ ক্যাডারে আবেদন করতে পারেন। যে কোনো সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে রয়েছে চাকরির সুযোগ। কৃষিভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে নিয়োগে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষি অর্থনীতির গ্রাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট, ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে পারেন। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, আন্তর্জাতিক ফসল গবেষণা ইন্সটিটিউট, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইন্সটিটিউট, আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্রে কৃষি অর্থনীতির গ্রাজুয়েটরা চাকরি পাচ্ছেন।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটরা সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন।
এনজিও-আইএনজিও
এছাড়া রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওতে (বেসরকারি সংস্থা) চাকরির সুযোগ। কোলপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি, বিভিন্ন সার ও চিনি কারখানা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, এশিয়া ফাউন্ডেশন, ড্যানিডা, কেয়ার, ব্র্যাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, আশা, প্রশিকা, এসিআই, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। বেসরকারি বীজ কোম্পানি, পেস্টিসাইড ও ইনসেক্টিসাইড কোম্পানিগুলোতেও কৃষিবিদদের কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। এসিআই, ব্র্যাক, স্কয়ার, অ্যাগ্রোবেট, প্রাণ, লালতীর, ন্যাশনাল অ্যাগ্রোকেয়ার, কৃষিবিদ গ্রুপ, অ্যাকশন এইডের মতো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানেও উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে শুধু কৃষির গ্রাজুয়েটদের।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়তে পারেন।
বিদেশে পড়ার সুযোগ
কৃষি অর্থনীতির গ্রাজুয়েটদের জন্য বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিশাল সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রতিবছর বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছেন এদেশের গ্রাজুয়েটরা।