‘প্রেসরিলিজ ছাপানোই শুধু পিআর এজেন্সির কাজ নয়’
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক রিলেশন (পিআর) এজেন্সি ইমপ্যাক্ট পিআর। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অ্যাকাউন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন মেহেবুব ই অদুজ্জামান। গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ করে দৈনিক প্রথম আলোর ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে কাজ শুরু করেন। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক এবং ডেইলি স্টারে কাজ করেন। তবে তিনি পাবলিক রিলেশন নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন। এক সময় সুযোগ তৈরি হলো অ্যাডফার্মের পিআর উইংয়ে কাজ করার। এরপর ২০০৬ সাল থেকে জড়িয়ে পড়েন বর্তমানের কর্মস্থল ইমপ্যাক্ট পিআর এজেন্সিতে।
: গণসংযোগ বিষয়টিকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গ্রহণ করছে?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: জনসংযোগ বা পিআর বিষয়টি আলাদা একটি পেশা বা কাজের বড় ক্ষেত্র হতে পারে দশ-বারো বছর আগে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং এ দেশীয় বড় কিছু শিল্পগোষ্ঠী জনসংযোগের প্রয়োজনীতা উপলব্ধি করে তারা ইন-হাউজ পিআর কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে দেশে পিআর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পর সেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে পিআর সেবা নেয়া শুরু করে। দেশের প্রথম পিআর এজেন্সি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ইমপ্যাক্ট পিআর প্রথমদিকে দেশি এবং বহুজাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে পিআর-এর প্রয়োজনীতা তুলে ধরে। কিন্তু তখন পিআর-এর গুরুত্ব বোঝানো খুবই কঠিন কাজ ছিল। তারপরও অল্প কিছু সংখ্যক দেশীয় বড় শিল্পগোষ্ঠী এবং বহুজাতিক কোম্পানি তাদের পিআর- এর দায়িত্ব ইমপ্যাক্ট পিআরকে দেয়। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খাতে বড় বড় শিল্প কারখানা চালু হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক প্রসার, পণ্য ও সেবা প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি পিআর- এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং তারা এখন পিআর এজেন্সির সেবা নিচ্ছে।
:বাংলাদেশে গণসংযোগ পেশার ভবিষ্যৎ কী?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: আমার কাছে মনে হয়ে হয়, বাংলাদেশে জনসংযোগ পেশার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। দেশে ক্রমাগত উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে সাথে দেশীয় অনেক শিল্পগোষ্ঠী তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের গন্ডি থেকে বিদেশের মাটিতেও সুনামের সাথে ব্যবসা করছে। ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য জনসংযোগের গুরুত্ব অনুভব করে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা জনসংযোগ বিভাগ খুলছে অথবা জনসংযোগ সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এ কারণে দেশের জন্য জনসংযোগ সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে এবং বর্তমান এজেন্সিগুলোও তাদের কলেবর বৃদ্ধি করছে। সুতরাং জনসংযোগ পেশায় আগ্রহীদের আগামীতে সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।
: আপনি গণসংযোগ পেশায় কীভাবে এলেন?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর আমি এই পেশা সম্পর্কে জানতে পারি। তখন থেকেই এ পেশায় আসার আগ্রহ তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সাংবাদিকতা শুরু করলেও মনে মনে এই পেশার প্রতি আগ্রহটা থেকে যায়। ডেইলি স্টারে কাজ করার সময় একটি বিজ্ঞাপনি সংস্থার জনসংযোগ বিভাগে কাজ করার অফার আসলে সেখানে জয়েন করি। এরপর বর্তমান প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্টে অফার পেলাম। সেই থেকে এখনও কাজ করে যাচ্ছি।
:এই পেশায় কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: প্রতিবন্ধকতার কথা বললে প্রথমেই বলতে হয়, ক্লায়েন্টের বাজেট এবং সে অনুয়ায়ী কাজের ডেলিভারি নিশ্চিত করা। ছোট কোম্পানির কথা বলাই বাহুল্য অনেক বহুজাতিক কোম্পানিও একটি পিআর এজেন্সির সাথে বিজ্ঞাপনি সংস্থার তুলনা করে। যা কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। এছাড়া প্রেসরিলিজ ছাপানোই শুধু পিআর এজেন্সির কাজ নয়। প্রেসরিলিজ ছাপানো ছাড়াও স্টেকহোল্ডার রিলেশন্স, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, মিডিয়া রিলেশন্স এবং ম্যানেজমেন্টসহ আরো অনেক বড় পরিসর নিয়ে বর্তমান পিআর এজেন্সিগুলো কাজ করে। কিন্তু ক্লায়েন্টকে এসব কাজের গুরুত্ব এবং মূল্য বোঝানো অনেকসময়ই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দক্ষ জনবলের অভাব। একটি ভিন্নধর্মী পেশা হিসেবে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও অনেকে এই পেশায় আসার পর কাজ শিখতে আগ্রহ না থাকায় ভাল করতে পারে না। তখন হতাশ হয়ে পড়ে। আবার যারা কাজ শিখে তারা খুব দ্রুত উন্নতির আশায় প্রাইভেট কোম্পানি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। তখন অফিসের উপর চাপ পড়ে যায়। কিন্তু ক্লায়েন্টকে এ বিষয়টি বোঝানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
:পিআরও হিসেবে এজেন্সি ও প্রাইভেট কোম্পানি, এই দুই ক্ষেত্রে কাজের পার্থক্য কী?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: প্রাইভেট কোম্পানির পিআর ডিপার্টমেন্টে কাজ করা হয়নি। প্রথম থেকেই এজেন্সিতে কাজ করছি। তবে বন্ধু-বান্ধব আছে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির পিআর ডিপার্টমেন্টে। তাদের সাথে আলোচনায় যতটুকু মনে হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের কাজটা অনেক সহজ। বিশেষ করে মিডিয়া রিলেশন্স এবং যেকোনো কনটেন্ট অ্যাপ্রোভালের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে পিআর এজেন্সিতে এক ছাদের অনেকগুলো মানুষ কাজ করে এ কারণে বিশেষ করে ক্লায়েন্টদের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে খুব সহজেই সবার সহায়তা পাওয়া যায়। এছাড়া মিডিয়া রিলেশন্স বা স্টেকহোল্ডার রিলেশন্সে অনেক সময় সিনিয়রদের সাহায্য পাওয়া যায়, যা একটি প্রাইভেট কোম্পনিতে পাওয়া যায় না। এজেন্সিতে কাজ করার আরেকটি বড় সুবিধা হলো অনেকগুলো সেক্টর সম্পর্কে জানা যায়। তাদের সব ধরনের পিআর অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। একটি এজেন্সি বিভিন্ন সেক্টরে নিয়ে কাজ করে যেমন; টেলিকম, আইটি, সিমেন্ট, এনার্জি ও পাওয়ার, রিটেইল, গার্মেন্টস ইত্যাদি। ভবিষ্যতে এজেন্সিতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কেউ যদি কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে অথবা বহুজাতিক কোম্পানির পিআর ডিপার্টমেন্টে চাকরির চেষ্টা করে তাহলে তার চাকরি পাওয়া যেমন সহজ হয়, সেই সাথে সে নিজেকে খুব সহজেই নতুন কর্মস্থলে মানিয়ে নিতে পারে।
:এই পেশায় নতুন যারা আসতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: কাজের প্রতি ডেডিকেশন, ক্লায়েন্টের কাজ ঠিক মতো বুঝে নিয়ে সময়মতো ডেলিভারি দেয়া, যোগাযোগ স্থাপনের মানসিকতা এবং তা ধরে রাখা। কুইক লার্নার এবং সর্বোপরি সততা এ সবগুলো বিষয় ঠিক থাকলে তার পক্ষে সফল পিআর প্রফেশনাল হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।
:একজন ভালো পিআরও হতে হলে কী কী যোগ্যতা থাকা উচিৎ?
মেহেবুব ই অদুজ্জামান: যারা এই পেশায় আসতে চায় তাদের জন্য বেসিক কয়েকটি বিষয় জানা দরকার। যেকোনো বিষয় নিয়ে লেখার আগ্রহ, মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মানসিকতা, নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ। এছাড়া ইংরেজিতে কথা বলতে ও লিখতে পারা। এছাড়া কম্পিউটারের বেসিক দিকগুলো এবং ইমেইল বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।