ওষুধ বিপণনে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সময়ের হাত ধরে বাড়ছে ওষুধ কোম্পানি। বাড়ছে ওষুধের চাহিদা। ফলে কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত বাজারে আনছে নিত্যনতুন ওষুধ। প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বিক্রয়কর্মীর। চাকরির বাজারে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ বা ওষুধ বিপণন একটি জনপ্রিয় ও সম্মানজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এ পেশায় উপার্জনও বেশ ভালো। কাজটি উপভোগ্য বলে মনে করতে হবে। ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে এই পেশায় উন্নতি করা সহজ। এক সময় শুধু পুরুষদেরই দেখা যেত ওষুধ বিপণনের এ পেশায়। এখন উল্লেখযোগ্য হারে নারীও যোগ দিচ্ছেন এই পেশায়।
ক্রেতা সৃষ্টির যোগ্যতা
অসংখ্য ওষুধ কোম্পানির মধ্যে অপসোনিন, নাভানা, বেক্সিমকো, স্কয়ার, গ্গ্নোব ফার্মাসিউটিক্যাল, ইবনে সিনা বেশ আলোচিত। এই ওষুধ কোম্পানিগুলো যাদের মাধ্যমে ওষুধ বাজারজাত করে, তারাই মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ বা বিক্রয় প্রতিনিধি। তারা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাদের কাছে মেডিকেল সায়েন্সের লেটেস্ট ইনফরমেশন থাকে।
এই ইনফরমেশন তারা ডাক্তারদের সঙ্গে শেয়ার করেন। অসংখ্য পণ্যের ভেতর আপনার পণ্যটি যে অধিকতর ভালো সেটা নিজস্ব মেধা, শ্রম ও কৌশল দিয়ে ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে হবে। বিক্রয় প্রতিনিধির এটাই হচ্ছে মূল কাজ। একজন সফল মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের কাজই হচ্ছে ক্রেতা সৃষ্টি করা। তাছাড়া এই পেশায় ভালো করার জন্য শিক্ষার দৌড়েও আপনাকে এগিয়ে থাকতে হবে। কেউ কেউ ভাবেন, মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ হতে গেলে উচ্চতর শিক্ষার দরকার নেই। এমন ধারণা ভুল। উচ্চতর শিক্ষা এখানে খুবই দরকার। শুধু উচ্চশিক্ষাই নয়, এ পেশায় আসতে হলে গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার্সের পাশাপাশি অবশ্যই এইচএসসি পর্যন্ত জীববিজ্ঞান পড়া থাকতে হবে। তাছাড়া এখানে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে।
যেমন হবে কাজ
এই ক্ষেত্রে আপনার কাজের ধরন দু’রকম হতে পারে। প্রথমত, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ বুঝিয়ে বলা। দ্বিতীয়ত, ওষুধের দোকানগুলো থেকে চাহিদা সংগ্রহ করা। পুরুষ কর্মীদের দুই ধরনের কাজ করতে হয়। তবে বেশিরভাগ কোম্পানিতে নারী কর্মীর কাজ শুধুই চিকিৎসক ভিজিট করা অর্থাৎ চিকিৎসককে নতুন ওষুধগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। তবে কিছু কোম্পানিতে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে দুটি কাজই করেন।
যেহেতু আপনার কাজ হচ্ছে ওষুধ সম্পর্কে ক্রেতাকে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া, তাই আপনাকে পণ্যটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি বাজারে আরও যত প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের কাজের ধরন দেখে নির্বাচন করতে হবে কৌশল। তাছাড়া কোম্পানি তো আছেই। কাজ শুরুর আগে কোম্পানি তার নিজের প্রয়োজনেই ৩০ থেকে ৪৫ দিনের ট্রেনিং করিয়ে নেবে।
থাকতে হবে যেসব গুণ
সবার আগে আপনার যে গুণটি থাকা উচিত তা হচ্ছে মানুষের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন। এ জন্য কিন্তু বাচনভঙ্গিটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার বাচনভঙ্গি এবং উপস্থাপন কৌশল হতে হবে মার্জিত। অর্থাৎ, উপস্থাপন কৌশলে ক্রেতাকে বোঝাতে সক্ষম হতে হবে, বাজারের অন্যান্য পণ্যের চেয়ে আপনার পণ্যটির গুণগত মান ভালো। থাকতে হবে চিকিৎসক আর ওষুধের দোকানগুলোয় নিজের কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা। পোশাক-পরিচ্ছদে হতে হবে মার্জিত।
কাজের বিশালতা
এক সময় বিদেশি ওষুধের রাজত্ব থাকলেও এখন মাথা তুলে সরব হয়ে উঠেছে দেশি ওষুধের কোম্পানিগুলো। বর্তমানে দেশি ওষুধ কোম্পানির সংখ্যা ২শ’র বেশি। সুতরাং প্রসারিত হচ্ছে ওষুধ কোম্পানি আর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ। নিজের একাগ্রতা, আগ্রহ আর পরিশ্রম দিয়ে এই ক্ষেত্রে উন্নতি করা সম্ভব। তাছাড়া আপনাকেও নতুন ক্রেতা তৈরির কথাও ভাবতে হবে। এই বিশেষ লক্ষ্য সামনে নিয়েই কাজ করতে হবে।
ক্রয়ক্ষমতা আছে এমন ক্রেতা বা জড়িত প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে এগোতে হবে। মানুষের মন এবং চাহিদা বিচিত্র। সেগুলো বুঝে আপনার পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। তবেই আপনি হবেন একজন সফল মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ।
আস্থা ও বিশ্বাস
আপনার পণ্য যে কোনো সময়ে যে কেউ প্রত্যাখ্যান করতেই পারে। আর এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে ধৈর্যটাই কিন্তু আপনার সম্বল। তখন ধৈর্য না হারিয়ে নিজেকে ট্র্যাকে রাখুন। বরং বাড়তি মনোযোগ দিন কাজে। তাছাড়া আপনার পণ্য এবং নিজের সম্পর্কে ক্রেতার কাছ থেকে শুনুন অভিযোগগুলো। তারপর কৌশলী সিদ্ধান্ত নিন। নিজেকে উতরানোর পথ খুঁজুন। পারলে ক্রেতার সামনে নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করুন এবং কীভাবে পণ্যটা উপস্থাপন করলে ক্রেতা আপনার পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী হবে সেটাও ভাবুন। আর পোশাক-পরিচ্ছদের কথাটাও মাথায় রাখুন। সবসময় মার্জিত পোশাক পরিধান করুন, যা আপনার ব্যক্তিত্বকে আরও আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তুলবে। এ ক্ষেত্রে সব সময় রঙচঙা পোশাক এড়িয়ে চলুন।
প্রযুক্তির হাতে হাত
সেকেলে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাই আপনি কাজের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফলটাকে কাজে লাগাতে পারেন। আপনার বা কোম্পানির ব্যক্তিগত পেজ থেকে চালাতে পারেন প্রচার। অনলাইন থেকে বিস্তর তথ্য নিয়ে আপনি আপনার উপস্থাপন কৌশল সাজাতে পারেন নতুন করে, যা অন্যদের চেয়ে আলাদা করে চেনাবে আপনাকে এবং আপনার নির্দিষ্ট পণ্যটাকে।
রেগে গেলে হেরে যাবেন!
ডাক্তার কিংবা ক্রেতার মানসিকতার কথা ভেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। এজন্য আপনি প্রথাগত নিয়মটাও ভাঙতে পারেন। তবে অবশ্যই বিষয়টি পজিটিভ হতে হবে। প্রয়োজনে কাজের তালিকা লিখে রাখুন। এই জগতের নিত্যনতুন আপডেট আপনার নখদর্পণে রাখুন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। আশপাশ কিংবা ক্রেতার আচরণে উত্তেজিত হওয়া চলবে না। ডাক্তারদের সঙ্গে পারলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করুন। সময় মেনে চলুন। নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তা আগেই জানিয়ে দিন। নিজ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের গুণগত মান খারাপ_ এমন কথা কাউকে বলবেন না। নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছা থাকলে যে কোনো পেশায় ভালো করতে পারেন।