৪ ধাপে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আপনার জীবনে কতবার ক্যারিয়ারে পরিবর্তন এনেছেন? আপনি যদি আর অন্য দশ জনের মতো হয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু বলা যেতে পারে আপনার পেশাগত জীবনেও কমপক্ষে একাধিকবার পরিবর্তন এসেছে। আসলে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা একবারে করে ফেলার মতো কোন বিষয় নয়। ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হয় ক্যারিয়ার পরিকল্পনা।
প্রত্যেক চাকুরীপ্রার্থীরই সময় নিয়ে তার ক্যারিয়ার সম্পর্কে পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই এই পরিকল্পনা কাজে লাগে। আপনার বর্তমান কর্মস্থল এবং চাকরি ভালো লাগুক আর নাই লাগুক, সব ক্ষেত্রেই এই পরিকল্পনা আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। বলা হয়ে থাকে, বর্তমান চাকরি এবং ভবিষ্যতের চাকরির মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। আর এই সেতু ছাড়া যেমন সহজেই পথহারা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি পরিকল্পনা থাকলে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।ক্যারিয়ার পরিকল্পনা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা একই সাথে আপনাকে নতুন কিছু শিখতে এবং নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
পেশা পরিকল্পনা দুই ধরণের হতে পারে- স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি।
স্বল্পমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
সাধারণত এক বছর থেকে শুরু করে পাঁচ বছর সময়ের জন্য শর্ট টার্ম বা স্বল্পমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়ে থাকে। মূলত এই স্বল্প সময় কাজের অভিজ্ঞতা থেকে এমন কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করার আগে সব ধরণের চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
পাঁচ বছর কিংবা এর থেকে বেশি সময়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে সব কিছুই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আর তাই আজকে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন, আজ থেকে কয়েক বছর পর সবকিছু সেভাবে নাও চলতে পারে। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে গেলে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখার প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি লম্বা সময়ের জন্য পেশাগত পরিকল্পনা তৈরি করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে এমন কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে যার কদর সবসময় করবে চাকুরীদাতার।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
এ প্রশ্ন আপনার মনের মধ্যে আসতেই পারে যে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বলতে আসলে কী বুঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা হলো নিজেকে জানা, নিজের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানা এবং কোন পেশায় স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়, সেটি খুঁজে বের করে সেভাবে কাজ করা। এর পাশাপাশি নিয়মিতভাবে নতুন কিছু শেখা আর সে অনুপাতে পেশাগত জীবনে পরিবর্তন আনাও ক্যারিয়ার পরিকল্পনারই অংশ বিশেষ।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা মূলত চারটি বিষয়ের একটি সমন্বয়। প্রথমত, নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং পছন্দের জায়গাগুলো খুঁজে বের করা। দ্বিতীয়ত, কাজ করা এবং শেখার যেসব সুযোগ রয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করা। তৃতীয়ত, যে কাজটি করছেন, সেটি যেন আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হয়। আর চতুর্থত নিয়মিতভাবে নিজের কাজের মূল্যায়ন করা এবং সেভাবে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
সফল ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা বা ক্যারিয়ার ভাবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চারটি ধাপ মেনে একটি সফল ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব।
নিজেকে জানা
একটি সফল ক্যারিয়ারের মূল শর্ত হলো নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা। কোন কাজটি করতে ভালো লাগে, কোন কাজে দক্ষ, এ সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ক্যারিয়ার পরিকল্পনার একেবারেই শুরুতেই ঠিক করতে হবে আপনি কোথা থেকে শুরু করতে চান। আর এই বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি এখন কোথায় আছেন, আপনি নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চান এবং আপনি কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তার উপর। এরপর নিজের আগ্রহ এবং কোন কাজে ভালো দক্ষতা আছে, সেগুলো জানতে হবে।
সম্ভাবনার সন্ধান
এই ধাপে আপনার কাজ হলো বিভিন্ন ধরণের পেশা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া। যে সকল পেশা সম্পর্কে আপনার আগ্রহ রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে নিন। প্রতিদিন আপনাকে কী ধরণের কাজ করতে হবে, কাজের পরিবেশ কেমন, কী ধরণের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন, এই কাজের মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব—এসব কিছুই জেনে নিন। এর পাশাপাশি এখান থেকে আপনি কী শিখতে পারবেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, সেটাও জেনে নিতে হবে। তবে এই ধাপে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর এবার আপনার লক্ষ্য নির্ধারণের পালা। বিভিন্ন ধরণের পেশার মধ্য থেকে যে পেশাটি আপনার আগ্রহ, যোগ্যতা, দক্ষতা সবকিছুর সাথে মিলে যায়, সে পেশাটিই আপনার বেছে নেওয়া উচিত।
কাজে নেমে পড়া
ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে গেলে এবার আপনার কাজ শুরু করার পালা। এই ধাপে রয়েছে ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ, যোগ্যতা অর্জন প্রভৃতি বিষয়। পেশা পরিকল্পনা যাই হোক আর যতদিনের জন্যই হোক না কেন, পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে।