৩৮তম বিসিএস: শুরু হোক প্রস্তুতি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। আবেদন করা যাবে ১০ জুলাই থেকে, শেষ তারিখ ১০ আগস্ট। নিয়োগ পাবেন দুই হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা।
অনেকের কাছেই বিসিএস স্বপ্নের চাকরি। সম্প্রতি ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। বিভিন্ন ক্যাডারে মোট দুই হাজার ২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইশরাত শারমীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪টি ক্যাডারের শূন্যপদের বিপরীতে ১০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি ৭০০ টাকা। তবে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের আবেদন ফি ১০০ টাকা। টেলিটকের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ময়মনসিংহসহ আটটি বিভাগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে পিএসসির ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) ও http://bit.ly/2tgFcbC লিংকে।
নতুন যত নিয়ম
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক জানান, ৩৮তম বিসিএস থেকে প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনলাইন আবেদনের সময় সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন নিয়মে লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। তাঁদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে। ২০০ নম্বরের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ লিখিত পরীক্ষা থেকে ৫০ নম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে। আলাদা করে যুক্ত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এতে বরাদ্দ থাকবে ৫০ নম্বর। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনেও প্রশ্নপত্র থাকবে। এতে করে ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবেন ইংরেজি ভাষাতেই। সাত বিভাগের পাশাপাশি এবার নতুন বিভাগ ময়মনসিংহেও পরীক্ষা নেওয়া হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবণ্টন
বিসিএসের প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারিতে ৩৫তম বিসিএস থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। বাংলায় ৩৫ নম্বর, ইংরেজিতে ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়ে ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২০, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০, সাধারণ বিজ্ঞানে ১৫, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ১৫, গাণিতিক যুক্তিতে ১৫, মানসিক দক্ষতায় ১৫ নম্বর ও নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে থাকবে ১০ নম্বর।
বাংলা
৩১তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম ফারহানা জাহান উপমা জানান, বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, সমার্থক-বিপরীতার্থক শব্দ, সন্ধি, প্রত্যয়, সমাস, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য সংকোচন থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে প্রাচীন যুগ থেকে চর্যাপদ, মধ্যযুগ থেকে মঙ্গলকাব্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন—এসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে। আধুনিক যুগ থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আল মাহমুদ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, জব সলিউশন, নবম-দশম শ্রেণির বোর্ডের ব্যাকরণ বই, হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা, ড. হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা।
ইংরেজি
গ্রামার অংশে ভালো করতে হলে এতে ভালো দখল থাকতে হবে। লিটারেচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়কাল, খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের উক্তি, কবিতার লাইন, জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা পড়তে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গ্রামার বই সহায়ক হতে পারে। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি ও লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ বইটি বেশ কাজের। সঙ্গে পড়তে পারেন রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, জন ইস্ট উডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামার, অ্যা প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্সামস, প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ। ভোকাবুলারির জন্য পড়তে পারেন ম্যাক ক্যারথি ও ও-ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ, নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজি। বিগত সালের বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্ন থেকে কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গাণিতিক যুক্তি
২৯তম বিসিএসে ট্যাক্স ক্যাডারে তৃতীয় মহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত এমন সব অঙ্কই থাকে, যা শর্টকাটে সমাধান করা যায়। ভালো করার মূলমন্ত্র বারবার অনুশীলন। অন্তত বিগত ১২ বছরের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। এতে প্রশ্ন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা হবে। বিভিন্ন গাইড বইয়ের মডেল টেস্টগুলো দিতে হবে। অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই দেখতে হবে। পুরনো সিলেবাসের বইয়ের অঙ্ক সমাধান করলেও কাজে দেবে।
মানসিক দক্ষতা
আইকিউ টেস্টের বই প্রস্তুতিতে কাজে আসবে। অনেক ওয়েবসাইট আছে, যাতে আইকিউ টেস্ট থাকে। সিলেবাসের বিভিন্ন টপিক গুগলে ইংরেজিতে লিখে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে নিয়মিত সলভ করুন। আগের সব বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সলভ করে ফেলুন। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন করা হয়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। কমনসেন্স, বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগালেই ভালো করা যাবে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানের সিলেবাস অনেক বড়। যেসব টপিক থেকে প্রায় বছরই প্রশ্ন আসে, সেগুলো রাখতে হবে পড়ার তালিকায়। প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞান ও গাইড বইয়ের পাশাপাশি পড়তে হবে পত্রপত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা। বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই সহায়ক হবে। নিয়মিত চোখ রাখুন খবরের কাগজ, ইন্টারনেটে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে।
সাধারণ বিজ্ঞান
৩৩তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম রিদওয়ান ইসলাম জানান, সাধারণ বিজ্ঞানে ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন থাকে। গুরুত্ব বুঝে বইয়ের প্রায়োগিক বিষয়গুলো দাগিয়ে পড়লে কাজে দেবে। বোর্ডের সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়তে হবে। এই বইগুলো ভালোমতো পড়লে প্রিলিমিনারির জন্য বাড়তি তেমন কিছু না পড়লেও চলে। তবে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। বাড়তি প্রস্তুতির জন্য এসব বই দেখতে পারেন।
কম্পিউটার ও তথ্য–প্রযুক্তি
কম্পিউটার অংশের সিলেবাসের বেশির ভাগ অধ্যায়ই নবম-দশম শ্রেণির কম্পিউটার বইতে আছে। একাদশ শ্রেণির বইটিও দেখতে পারেন। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির যেসব প্রশ্ন এসেছে, সেগুলো পড়ে ফেলুন। প্রায়ই কম্পিউটারের কিছু প্রাথমিক ধারণাভিত্তিক প্রশ্ন আসে। অন্তত দুটি ভালো প্রকাশনীর অনেক বেশি প্রশ্ন দেওয়া আছে—এমন গাইড বই ও জব সলিউশন সঙ্গে রাখুন। যত বেশি প্রশ্নের সমাধান করবেন, ততই বাড়বে ভালো করার সম্ভাবনা।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ভূগোল বলতে যা আছে, সেটি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক ভূগোল। এতে বাংলাদেশের সীমানা, সীমান্তবর্তী জেলা, ভূ-প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিবেশ পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসৈকত, নদ-নদী থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশে ভালো করার জন্য মাধ্যমিকে ভূগোল পড়া থাকলে কাজে দেবে।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এ অংশের প্রশ্নের উত্তরের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার কমন সেন্স। একটুখানি মাথা খাটালেই উত্তর বের করা সম্ভব। পড়তে হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পৌরনীতি ও নাগরিকতা ও অনার্স লেভেলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই। সিলেবাসের টপিকসংশ্লিষ্ট অনেক লেখা ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন সম্পর্কীয় বিভিন্ন প্রবন্ধ, পত্রিকার সম্পাদকীয়, বেসরকারি সংস্থার প্রকাশনা, বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন পড়লে এ অংশে ভালো করা সম্ভব।