৩৮তম বিসিএস : প্রস্তুতি শুরু করেছেন তো ?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশের চাকরির বাজারে বর্তমানে সিভিল সার্ভিসের চাকরিগুলোকেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিবেচনা করা হয়। কারণ বিসিএস ক্যাডারদের জন্য রয়েছে জনপ্রশাসনে যুক্ত থেকে দেশের কাজে সরাসরি অবদান রাখার এবং পদোন্নতি পেয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবদান রাখার সুযোগ, সামাজিক মর্যাদা, চাকরির নিরাপত্তা, চাকরিজীবন শেষে পেনশন সুবিধা এবং অন্য আনুষঙ্গিক নানা সুবিধা।
এসব দিক বিবেচনায় রেখেই ক্যাডার সার্ভিসের চাকরিগুলো এখন তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই দেশের চাকরি প্রত্যাশীদের বড় একটি অংশ ক্যারিয়ার হিসেবে বিসিএসকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে স্থান দিচ্ছেন।
চাকরি প্রার্থীদের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ করে দিতে সম্প্রতি ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি। যারা আবেদন করতে আগ্রহী তাদের এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
পদসংখ্যা–২০২৪ : আপনার জন্যই হয়তো দুয়ারে কড়া নাড়ছে ৩৮তম বিসিএস। ২০ জুন ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি। পরীক্ষায় বিভিন্ন ক্যাডারে এবার দুই হাজার ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪টি ক্যাডারের শূন্যপদের বিপরীতে ১০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।
কোন ক্যাডারে কতজন : বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩৮তম বিসিএসের উল্লেখযোগ্য শূন্য পদগুলো হচ্ছে- প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার ৩০০টি, পুলিশ ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার ১০০টি, স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন ২২০টি, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পাঁচটি, কৃষি ক্যাডারের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৯টি, পররাষ্ট্র ক্যাডারের সহকারী সচিব ১৭টি, আনসার ক্যাডারের ৩১টি, মৎস্য ক্যাডারের ২০টি, সহকারী বন সংরক্ষক ২২টি, শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক ৯৭৩টি, ভেটেরিনারি সার্জন ২৫টি, সহকারী প্রকৌশলী ৩১টি, কর ক্যাডারের সহকারী কর কমিশনার ৯টি, তথ্য ক্যাডারের ৩৫টিসহ মোট ২০৪২টি।
কিছু নতুনত্ব : বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সূত্রে জানা গেছে, আবেদনকারীদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য উল্লেখ করা অনলাইন আবেদনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ১১ জুলাই পিএসসি থেকে জানানো হয়, এনআইডি ছাড়াও আবেদন করতে পারবে। তবে ভাইভার সময় এনআইডি চাওয়া হবে। নতুন নিয়মে লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দু’জন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। তাদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে। ২০০ নম্বরের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ লিখিত পরীক্ষা থেকে ৫০ নম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে। আলাদা করে যুক্ত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এতে বরাদ্দ থাকবে ৫০ নম্বর। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনেও প্রশ্নপত্র থাকবে। এতে করে ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবেন ইংরেজি ভাষাতেই। সাত বিভাগের পাশাপাশি এবার নতুন বিভাগ ময়মনসিংহেও পরীক্ষা নেয়া হবে।
বেঁছে নিন আপনার পছন্দের ক্যাডার : বিসিএস আবেদনের সময় অনেকেই যে ভুলটা করেন তা হচ্ছে, ক্যাডার চয়েসে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অনেকেই ক্যাডার সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। তাই দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় নামার আগে নিজের মনমতো ক্যাডার পছন্দ করুন। সব ক্যাডার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তারপর আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ক্রমানুসারে লিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন যেন এর মধ্যে যে কোনো একটি ক্যাডার পেলেই চাকরি শুরু করতে পারেন মনের আনন্দে। পছন্দের ক্যাডার পেলে কাজের প্রতি ভালোবাসাটা বেড়ে যাবে আপনার।
যেভাবে আবেদন : ১০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি ৭০০ টাকা। তবে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের আবেদন ফি ১০০ টাকা। টেলিটকের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ময়মনসিংহসহ আটটি বিভাগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে পিএসসির ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) I http://bit.ly/2tgFcbC wjsGK লিংকে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবণ্টন : বিসিএসের প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারিতে ৩৫তম বিসিএস থেকে নেয়া হচ্ছে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। বাংলায় ৩৫ নম্বর, ইংরেজিতে ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়ে ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২০, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০, সাধারণ বিজ্ঞানে ১৫, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ১৫, গাণিতিক যুক্তিতে ১৫, মানসিক দক্ষতায় ১৫ নম্বর ও নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে থাকবে ১০ নম্বর।
বাংলা প্রস্তুতি : ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার হওয়া সাদেকুর রহমান সবুজ জানান, বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, সমার্থক-বিপরীতার্থক শব্দ, সন্ধি, প্রত্যয়, সমাস, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য সংকোচন থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে প্রাচীন যুগ থেকে চর্যাপদ, মধ্যযুগ থেকে মঙ্গলকাব্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে। আধুনিক যুগ থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আল মাহমুদ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, জব সলিউশন, নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ডের ব্যাকরণ বই, হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা, ড. হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা বিষয় বাংলা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা।
এছাড়া যে কোনো পাবলিকেশনের বাংলা প্রস্তুতি গাইড।
ইংরেজি : ৩৪তম বিসিএসে ইকোনমিক ক্যাডার এসএম হাসান জানান, গ্রামার অংশে ভালো করতে হলে এতে ভালো দখল থাকতে হবে। লিটারেচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়কাল, খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের উক্তি, কবিতার লাইন, জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা পড়তে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গ্রামার বই সহায়ক হতে পারে। ভোকাবুলারির জন্য পড়তে পারেন ম্যাক ক্যারথি ও-ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ, নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজি। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি ও লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ বইটি বেশ কাজের। সঙ্গে পড়তে পারেন রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, জন ইস্ট উডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামার, প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্সামস, প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ। বিগত সালের বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্ন থেকে কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মানসিক দক্ষতা : ৩৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার পাওয়া আজমল হক জানান, অনেক ওয়েবসাইট আছে, যাতে আইকিউ টেস্ট থাকে। সিলেবাসের বিভিন্ন টপিক গুগলে ইংরেজিতে লিখে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে নিয়মিত সলভ করুন। আগের সব বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সলভ করে ফেলুন। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন করা হয়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। কমনসেন্স, বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগালেই ভালো করা যাবে।
গাণিতিক যুক্তি : ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া আতিকুল ইসলাম জানান, গণিতে যারা ভালো তাদের জন্য প্রিলিমিনারি পাস করা কঠিন কিছু নয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত এমন সব অংকই থাকে, যা শর্টকাটে সমাধান করা যায়। ভালো করার মূলমন্ত্র বারবার অনুশীলন। অন্তত বিগত ১২ বছরের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। এতে প্রশ্ন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা হবে। বিভিন্ন গাইড বইয়ের মডেল টেস্টগুলো দিতে হবে। অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ড বই দেখতে হবে। পুরনো সিলেবাসের বইয়ের অংক সমাধান করলেও কাজে দেবে।
বিজ্ঞান : সাধারণ বিজ্ঞানে ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন থাকে। গুরুত্ব বুঝে বইয়ের প্রায়োগিক বিষয়গুলো দাগিয়ে পড়লে কাজে দেবে। বোর্ডের সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়তে হবে। এই বইগুলো ভালোমতো পড়লে প্রিলিমিনারির জন্য বাড়তি তেমন কিছু না পড়লেও চলে। তবে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। বাড়তি প্রস্তুতির জন্য এসব বই দেখতে পারেন।
সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানের সিলেবাস অনেক বড়। যেসব টপিক থেকে প্রায় বছরই প্রশ্ন আসে, সেগুলো রাখতে হবে পড়ার তালিকায়। প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞান ও গাইড বইয়ের পাশাপাশি পড়তে হবে পত্রপত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা। বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই সহায়ক হবে। নিয়মিত চোখ রাখুন খবরের কাগজ, ইন্টারনেটে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়া কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, সুশাসন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এসব বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে।