পড়ার বিষয় এসিসিএ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্ট—প্রতিষ্ঠানটির নামেই চালু আছে ‘প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্সি’ নিয়ে পড়ার একটি আন্তর্জাতিক ডিগ্রি, সংক্ষেপে শিক্ষার্থীরা বলেন এসিসিএ। আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সাধারণত চার ধাপে স্নাতক সম্পন্ন করতে হয়। এসিসিএর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, দুই ধাপে সর্বনিম্ন তিন বছরেই স্নাতক সম্পন্ন করা যায়। এসিসিএর ফাউন্ডেশন কোর্স এবং দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করলে অ্যাপ্লায়েড অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতকের সমমান পাওয়া যায়। যার সনদ প্রদান করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর তৃতীয় ধাপে সম্পন্ন হয় স্নাতকোত্তর।
ব্যবসায় শিক্ষাবিষয়ক এই ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশে বসেই। এসিসিএ বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে যে কেউ এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী—অনেকেই এই ডিগ্রি নিচ্ছেন। একজন শিক্ষার্থী কেন এসিসিএ পড়বেন জানতে চাইলে এসিসিএ বাংলাদেশের প্রধান আহসানুল হক বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে পড়াশোনা শেষ করে যারা বৈশ্বিক চাকরির বাজারের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে চান, তাদের জন্য এসিসিএ হতে পারে অন্যতম পড়ার বিষয়। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে যাঁরা পড়তে চান। কারণ, এসিসিএ বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম। এখানে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে গড়ে তুলবে একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে।’ তিনি জানান, এসিসিএ সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য দেশেও রয়েছে কাজের সুযোগ। বিভিন্ন বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দাতা সংস্থাগুলোতে সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
এসিসিএর প্রথম ধাপ
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যেকোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা কোর্সে। তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে এসিসিএ শুরু করাটাই সুবিধাজনক। এই ধাপে মোট সাতটি বিষয় পড়তে হয়। তবে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা বা প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করার প্রয়োজন হয় না। এমনকি যাঁরা স্নাতক সম্পন্ন করে এসিসিএ করতে চান, তাঁদেরও ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা কোর্সটি করতে হয় না।
দ্বিতীয় ধাপ বা স্নাতক ধাপ
এসিসিএর মূল ধাপ এটি। ছয়টি পেপার পড়তে হয় এই ধাপে। ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। শেষে একটি থিসিস করার পর মেলে অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের সনদ। এই ধাপে পড়তে হয় অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট বা বিজনেস অ্যাকাউন্টিংয়ের মতো বিষয়। দ্বিতীয় ধাপ শেষ করার পর শিক্ষার্থী একজন অ্যাপ্লায়েড অ্যাকাউন্টিং গ্র্যাজুয়েট হিসেবে বিবেচিত হবেন।
স্নাতকোত্তরের জন্য তৃতীয় ধাপ
দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করার পরই অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাঁর কর্মক্ষেত্র বেছে নেন। তবে চাইলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নেওয়া সম্ভব বলে জানালেন এসিসিএ পড়ুয়া হাসনাইন আল মোর্শেদ। এই ধাপ সম্পন্ন করার জন্য পাঁচটি প্রফেশনাল পেপার শেষ করতে হয়। এসিসিএ বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা যায়। এসিসিএ বাংলাদেশই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যবস্থা করে দেয়। অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সঙ্গে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ আছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা যায়। এ ছাড়া সদস্যপদ নেওয়ার জন্য একটি এথিকস মডিউল সম্পন্ন করতে হয়। সেই সঙ্গে অর্জন করতে হয় তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা।
পরীক্ষা পদ্ধতি
শিক্ষার্থীরা দুটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে পারেন। হলে বসে খাতায় লেখা ছাড়াও কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া যায়। মূলত ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা কোর্সের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে দিতে হয়। এখন দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাগুলোও অনলাইনে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে এসিসিএ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এসব পরীক্ষা পরিচালনা করে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল। অনলাইনে পরীক্ষা দিতে হয় ব্রিটিশ কাউন্সিল, এলসিবিএস ঢাকা ও চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে থেকে।
যেমন খরচ
ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা কোর্সটি শেষ করতে চাইলে নিবন্ধন ও পরীক্ষা বাবদ খরচ হবে প্রায় এক লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপের বা স্নাতক সম্পন্ন করার জন্য খরচ হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। এবং তৃতীয় ধাপে এই খরচ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। প্রতিবছর ১০ হাজার টাকা বার্ষিক ফি দিতে হয়। এসিসিএর পড়াশোনা বাসায় বসেই করা যায় বলে জানান এসিসিএ পড়ুয়া মাশফিক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট কোর্স ম্যাটেরিয়াল অনলাইনে পাওয়া যায়। এরপরও কেউ চাইলে এসিসিএ অনুমোদিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করতে পারেন।’
যেখানে ভর্তি হবেন
বছরের যেকোনো সময় এসিসিএ কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসিসিএ বা ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন। কোনো ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে এসিসিএ বাংলাদেশের অফিসে যোগাযোগের ঠিকানা: গুলশান ভবন, চতুর্থ তলা, বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক, ৩৫৫ মহাখালী, ঢাকা। সরাসরি গিয়েও ভর্তি হওয়া যাবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট: www.accaglobal.com