চৌকস ক্যারিয়ার

চৌকস ক্যারিয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট [এইচআরএম] বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা আধুনিক বিশ্বের আলোচিত ও স্ট্মার্ট পেশা। এ জন্যই এর দিকে মনোযোগী হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম। আপনি যদি নিজেকে বুদ্ধিমান ও চৌকস মনে করেন, তবে পেশাটাকে আপন করে নিতে পারেন। বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা এবং কাজের ক্ষেত্রটি কিছু দিন আগেও একেবারে নতুন ছিল। কিন্তু সময়ের হাত ধরে এটি এখন তরুণদের কাছে ব্যাপক পরিচিত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

শুরুতে এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের কর্মীর কর্মক্ষমতা যথাযথ ব্যবহারের উদ্দেশে ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা’ বিভাগে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কেননা, একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের বড় একটা অংশ নির্ভর করে সেই প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওপর। তাই বসে না থেকে পেশাটাকে আপন করে নিতে প্রস্তুতি শুরু করুন আজ; ঠিক এখন থেকেই।

এইচআরএমের কাজ

এই পেশায় পা দেওয়ার কথা ভাবলে শুরুতেই জেনে নিতে হবে এখানকার কাজের ধরন সম্পর্কে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যাচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মপরিধি যাই হোক না কেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকে অনেকটা গোছানো এবং বেশ পরিকল্পিত। এখানে কর্মরতদের কাজের ধরন প্রায় একই রকম। তবে আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে, যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জনবল ও তাদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে যথাযথ তথ্য উপস্থাপন করা একজন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী হিসেবে আপনার কাজ। ফলে এ বিভাগে কর্মরতরা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী- সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি সম্মানের পাত্র হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগ, বদলি, পদোম্নতি, প্রশিক্ষণ এবং প্রতিষ্ঠানের উম্নয়ন, কার্যপরিধি নির্ধারণ থেকে শুরু করে কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা, যা তারা প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়ে থাকেন, যেমন- বার্ষিক ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসর ভাতা, বেতন, বোনাস প্রভৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে থাকেন এই বিভাগের কর্মকর্তারা। কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করা ও অনুপ্রেরণা তৈরিতে দক্ষ কর্মীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি যারা কর্মক্ষেত্রে অবহেলা করেন তাদের সঠিক পরামর্শ প্রদানও এ বিভাগের দায়িত্ব।

যোগ্যতা
এই পেশাকে যারা আপন করতে চান তারা গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেই এখানে আসতে পারেন। ব্যবসায় শিক্ষা ও এইচআরএম বিষয়ে ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা প্রাধান্য পেলেও অন্য বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের জন্যও এ পেশায় খোলা রয়েছে দ্বার। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি নেতৃত্ব গুণ, ধৈর্য, সদালাপ, সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা এবং দেশের শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় এখানে।
একজন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অফিসারের ভালো যোগাযোগ দক্ষতা এবং অন্যের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। কর্মজীবনে তাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত হতে হয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ও সেই অনুযায়ী মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে হয় এই বিভাগের কর্মীদের।

প্রস্তুতি
বাংলাদেশে বিভিম্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ কোর্সের মধ্যে এইচআরএম বিষয়টি পড়ানো হয়। এ ছাড়া বিভিম্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট [পিজিডিএইচআরএম] ডিগ্রি নেওয়া যায়। যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে নামতে পারেন, এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-
♦ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, সোবহানবাগ, মিরপুর, ঢাকা।

♦ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ফার্মগেট, ঢাকা।

♦ ইনস্টিটিউট অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট, ফার্মগেট, ঢাকা।

♦ বিয়াম ফাউন্ডেশন, নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানে ছয় থেকে নয় মাস প্রশিক্ষণ নিয়েও এ পেশার জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যায়। তবে প্রশিক্ষণ নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই গ্র্যাজুয়েশন সম্পম্ন হতে হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পেশায় আসার আগে যেসব প্রতিষ্ঠানে এই বিভাগ রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখা উচিত। সাধারণত দেশি ও বহুজাতিক বড় বড় কোম্পানিতে এ বিভাগের পরিপূর্ণ কার্যক্ষেত্র রয়েছে।
বিশেষ করে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, ব্যাংক, মিডিয়া হাউস, ওষুধ কোম্পানি, প্রকাশনা সংস্থা, এনজিও, টেলিকমিউনিকেশন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগটির সুবিস্তৃত কার্যক্ষেত্র। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত মানবসম্পদ উম্নয়ন নামে কোনো বিভাগ না থাকলেও বিভিম্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং, স্ট্যাটিসটিকস, প্ল্যানিং বিভাগগুলোতে মূলত এ বিভাগটির সংশ্নিষ্ট কাজগুলোই করা হচ্ছে। এই বিভাগগুলোর নীতিমালা তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; আর তা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

বেতনভাতা
প্রতিষ্ঠানভেদে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অফিসার হিসেবে শুরুতেই আপনার বেতন হতে পারে সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পাশাপাশি পাবেন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। পরবর্তী পদোন্নতি নির্ভর করবে আপনার কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর। একটু ভালো কাজ করতে পারলেই এক থেকে দুই বছরের মাথায় বেতন ৪০ থেকে ৫০ ছাড়িয়ে যাবে। আর বিভাগের প্রধানের বেতন হয়ে থাকে ৬০ থেকে এক লাখ টাকারও অধিক। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে তা লাখের অঙ্কও যে ছাড়িয়ে যায়, সে কথা তো বলাই বাহুল্য। তিন থেকে চার বছরের মাথায় কাজের মাধ্যমে চাইলে আপনিও এই বিভাগের প্রধান হতে পারেন।

মানসিক প্রস্তুতি

সারাবিশ্বে বেশ ঘটা করে মে দিবস পালন করা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বা কর্মীদের গত শতাব্দীর শুরুর দিকেও সম্পদ হিসেবে বিবেচনায় আনা হতো না। তারা শুধুই শ্রমিক বা কর্মী। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশ পালন করাই ছিল তাদের কাজ। কিন্তু আধুনিকতার হাওয়ায় আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে-বিদেশে বিস্তার লাভ করার পর উপলব্ধি করেছে, এই বিস্তৃতি ধরে রাখার কান্ডাণ্ডি হলো তাদের কর্মীরা। একটি প্রতিষ্ঠানের লোকবলই তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এ উপলব্ধি থেকেই মানবসম্পদ উম্নয়ন ধারণার প্রবর্তন। এই ধারণাটার সঙ্গে নিজেকে জড়াতে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেমে পড়ুন কাজে। হয়ে উঠুন সময়ের সুদক্ষ মানবসম্পন ব্যবস্থাপক।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment