প্রথমদের পরামর্শ

প্রথমদের পরামর্শ

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক, খ, গ ও ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় যাঁরা প্রথম হয়েছেন, সেই চারজন এক হয়েছিলেন সম্প্রতি। সঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় সরকার


তাঁরা চারজনই গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। ক ইউনিটে অনিক বিশ্বাস, খ ইউনিটে মো. অনিক ইসলাম, গ ইউনিটে ইমতিয়াজ চৌধুরী এবং ঘ ইউনিটে আবির হোসেন। চারজনকে নিয়ে আমরা আড্ডায় বসেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। এরই মধ্যে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সাত মাস পার করেছেন। টিএসসির চা, ক্যাম্পাসের সবুজের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। একেকজন একেক বিভাগের ছাত্র হলেও নিজেদের মধ্যে পরিচয় ছিল আগে থেকেই। তাই আড্ডা জমে উঠতে সময় লাগল না।

 

টেনেটুনে পাস, এইচএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস!

অনিক বিশ্বাস রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অথচ কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায় তিনি নাকি টেনেটুনে পাস করেছিলেন! কলেজ তাঁকে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে কি না, সেটা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল। অনিকের উদাহরণ টেনে আবির হোসেন বলেন, ‘এটা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখেছি। দেখা যায় কোনো একটা পর্যায়ে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে একটা খাদে পড়ে যাই। সেখান থেকে নিজেকে টেনে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। এই চ্যালেঞ্জ পার করতে পারলে যে আত্মবিশ্বাস যোগ হয়, সেটা অমূল্য।’

অনিক বিশ্বাস তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘নির্বাচনী পরীক্ষার পরই আসলে আমার জেদ চেপে গিয়েছিল। আবার অনেককে দেখেছি, এইচএসসির ফল খারাপ হওয়ার পরও ঠিকই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায়।’

 

সেরাদের পরামর্শ

অনিক, ইমতিয়াজ, আবিররা পরীক্ষা দিয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। আবার আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য গতবারের সেরারা কী পরামর্শ দেবেন? প্রশ্ন শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চার তরুণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। ঢাকার ধানমন্ডির তৌহিদ একাডেমির প্রাক্তন ছাত্র ইমতিয়াজ চৌধুরী হাসতে হাসতেই বলেন, ‘বড় বড় লাগছে! একসময় পত্রিকায় অন্যের পরামর্শ পড়তাম। আজ নিজেই পরামর্শ দিচ্ছি!’ এখন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থার এই ছাত্র গ ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের জন্য দুটি পরামর্শ দিলেন। ‘এই ইউনিটে আলাদা করে অবশ্যই ইংরেজিতে পাস করতে হয়। তাই অবশ্যই ইংরেজির ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভোকাবুলারি খুবই ভালো হতে হবে। হিসাববিজ্ঞানে নম্বর ওঠানো অপেক্ষাকৃত সহজ। বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে কাজে আসবে।’

একজন যখন বলতে শুরু করলেন, বাকিরা থেমে থাকবেন কেন? একে একে অন্যরাও পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। ক ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনিক বিশ্বাসের পরামর্শ, জীববিজ্ঞান ও গণিতে বেশি নজর দিতে হবে। গণিতের ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে অনুশীলন করতে হবে।

খ ও ঘ ইউনিটের প্রশ্নের ধরন অনেকটা একই। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে পরামর্শ দিলেন অর্থনীতি বিভাগের মো. অনিক ইসলাম। চায়ে চুমুক দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ জ্ঞানের কিছু বাছাই করা বিষয় না পড়ে সব বিষয়েই চোখ বোলানো উচিত। সাম্প্রতিক বিষয়ের জ্ঞানের জন্য পত্রিকা পড়তে হবে নিয়মিত।’ দুষ্টুমির ছলে অনিকের কথার সঙ্গে যোগ করলেন আইন বিভাগের আবির হোসেন, ‘বিনোদন পাতা ছেড়ে আন্তর্জাতিক পাতায় চোখ রাখতে হবে বেশি!’

অনেকে বলেন, দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা পড়ালেখা না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় টেকা কঠিন। সত্যিই কি তা-ই? গতবারের সেরারা কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ। ইমতিয়াজ বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো রুটিন তৈরি করে পড়িনি! আসলে কে কতক্ষণ পড়বে, সেটা সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করে। অন্য কারও করে দেওয়া রুটিন তেমন কাজে লাগার কথা নয়।’ আবির যোগ করলেন, ‘কেউ হয়তো কোনো দিন ৫ ঘণ্টা পড়ল, আরেক দিন ১০ ঘণ্টা পড়ল। যেভাবে সে সিলেবাসটা শেষ করতে পারবে, সেভাবেই পড়বে। বাঁধাধরা কোনো রুটিন নেই। এই পর্যায়ে এসে কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর নিজেরই বোঝা উচিত, আমার কোন বিষয়টি কতটুকু পড়তে হবে।’ মো. অনিক মনে করেন, শুধু বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে গেলে হবে না। কৌশলী হতে হবে।

 

আমি তো জিপিএ-৫ পাইনি!

এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীই আশানুরূপ ফল পাননি। জিপিএ-৫ না পেয়ে মন ভেঙে গেছে কারও কারও। তাঁদের জন্য এই চার তরুণের কী বলার আছে?

গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মো. অনিক ইসলাম খ ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি খোলাসা করলেন। তিনি বলেন, মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে প্রতিবছর যাঁরা জিপিএ-৫ পান, তাঁদের সংখ্যা গড়ে পাঁচ শর একটু বেশি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগে প্রায় আড়াই হাজার আসন আছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, জিপিএ-৫ না পেয়েও এই বিভাগে পড়ার সুযোগ হতেই পারে।

অন্যান্য ইউনিটে জিপিএ-৫ না পেলে সুযোগ পাওয়া যাবে না, তা নয়। নিজের বন্ধুর উদাহরণ টেনে ইমতিয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘আগেও শুনেছি। এখন তো ভর্তি হয়েও দেখছি। হ্যাঁ, জিপিএ-৫ পেলে তো অবশ্যই এগিয়ে থাকা যায়। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু আছে, যারা জিপিএ-৫ না পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। সঙ্গে আরও একটা বিষয় যোগ করলেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে ছোটবেলা থেকে ভালো রেজাল্ট করে। সবাই তাকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে চেনে। তাই বলে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গেলে চলবে না। আগে যা হয়েছে সব ভুলে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।’

 

ফেসবুক থাকুক পুরোপুরি বন্ধ

অনিক বিশ্বাস ভর্তি পরীক্ষার দুই মাস আগে ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রেখেছিলেন। তিনি মনে করেন, যারা সত্যিই মনেপ্রাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়, ভর্তি পরীক্ষার আগে কোনোভাবেই ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত নয়। তাঁর এই কথার সঙ্গে অন্য তিন তরুণও একমত। মো. অনিকের যুক্তি হলো, ‘ফেসবুকে এমন কিছু নেই, যা ভর্তি পরীক্ষায় আসবে। অনেকে সাজেশনের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে। এটা অহেতুক সময় অপচয়।’

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment